পদদলনে নিহতদের প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা

Print Friendly, PDF & Email

নিউজ ডেস্ক : চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানির মেজবানে পদদলনে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা করে অর্থ সহায়তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রবিবার চট্টগ্রাম নগরীর চশমা হিলে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় গিয়ে তিনি শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান এবং এ অর্থ সহায়তা করেন।

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার বিকেলে সদ্য প্রয়াত চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ্ব  এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাস ভবনে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাত করে বলেছেন, তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, গোটা দেশ একজন ত্যাগী নেতাকে হারিয়েছে। জীবদ্দশায় মহিউদ্দিন চৌধুরী দলের  জন্য, চট্টগ্রামের জন্য যে ভূমিকা রেখে গেছেন সে আদর্শ ধরে রাখার জন্য পরিবারের সদস্যদের  প্রতি আহবান জানান।

মহিউদ্দিন চৌধুরীর ষোলশহর চশমাহিলের বাস ভবনে প্রবেশের পর ড্রয়িং রুমে টাঙানো ছবিগুলো একেক করে প্রত্যক্ষ করেন। যেখানে রয়েছে মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ছবি, তাঁর (প্রধানমন্ত্রী) ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডের বেশকিছু ছবি। এসব ছবি দেখার পর প্রধানমন্ত্রী কিছুটা আবেগাপ্লুত হন। এরপর তিনি সরাসরি মহিউদ্দিনের বেড রুমে প্রবেশ করেন। সেখানে আগে থেকেই প্রধানমন্ত্রীর বসার জন্য ব্যবস্থা করা হয়। বেড রুমে মহিউদ্দিন পরিবারের  সদস্য ছাড়াও ছিলেন পূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সাবেক মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ এমপি, ফজলে করিম চৌধুরী এমপি, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম।

বেড রুমে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মহিউদ্দিন পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। পাশে বসেন মহিউদ্দিনের স্ত্রী চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বেগম হাসিনা মহিউদ্দিন, জ্যেষ্ঠপুত্র কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কনিষ্ঠপুত্র বোরহানুল হাসান সালেহীন, তিনকন্যা, জামাতা ও তিন নাতি নাতনী।

ঘরোয়া পরিবেশের এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী প্রায় ৪০ মিনিট সময় কাটান। বেগম হাসিনা মহিউদ্দিন তার পুত্রকন্যাদের প্রধানমন্ত্রীর তুলে দেয়ার কথা জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জন্মাইলে মরিতে হইবে, আমাদেরকেও একে একে চলে যেতে হবে। কিন্তু আমাকে ছেড়ে একে একে সকলে চলে যাচ্ছেন। এটা আমার জন্য বেদনার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বাবা মাসহ অন্যান্য সদস্যদের হত্যা করার পর আমরা দুবোন বিদেশে ছিলাম। আমাদের হাতে ছিল সামান্য পরিমাণ ডলার। আমরা দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে আমরা আজকের অবস্থানে আসতে বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্থানীয় ও জাতীয় রাজনীতিতে অবদান রাখার কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন, তিনি আজীবন মানুষের সঙ্গে ছিলেন। তৃণমূল থেকে তিনি উঠে আসেন এবং তৃণমূলের সঙ্গে থেকে জীবনের শেষ মুহূর্তটি সম্পন্ন করেছেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী কিছুটা অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। তিনি মহিউদ্দিনের পুত্র কন্যাদের উদ্দেশ করে বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একজন ত্যাগী নেতাকে হারিয়েছে। দলের জন্য, দেশের জন্য ও চট্টগ্রামের জন্য তিনি অনন্য সাধারণ ভূমিকা রেখে গেছেন। তার আদর্শ ও ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে পরিবারের সদস্যদের এগিয়ে যাওয়ার আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী।

এর আগে বেলা তিনটার পর প্রধানমন্ত্রী মহিউদ্দিনের বাস ভবনে পৌছালে গেটে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান বেগম হাসিনা মহিউদ্দিন ও পুত্র ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী। মহিউদ্দিনের বাস ভবনে প্রধানমন্ত্রীর যাওয়াকে কেন্দ্র করে শনিবার বিকেল থেকেই ষোলশহর এলাকা, মেয়রগলি ও চশমা হিলকে কেন্দ্র করে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

এদিকে, মহিউদ্দি চৌধুরীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাত ও কথাবার্তা বলার পর প্রধানমন্ত্রী বাস ভবন প্রাঙ্গণে পদপিস্ট হয়ে নিহত ১০ পরিবারের সদস্যদের নগদ ৫ লাখ টাকা হারে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। উল্লেখ্য, মহিউদ্দিনের মৃত্যুর পর তার মেজবানের অনুষ্ঠানে নগরীর রীমা কনভেনশন সেন্টারে প্রচ- ভীড়ে পদপিস্ট হয়ে ১০ জন প্রাণ হারান। এরা সকলেই সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের সদস্য। ওই কনভেনশন সেন্টারে শুধুমাত্র সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য মেজবাণীর আয়োজন করা হয়েছিল গত ১৮ ডিসেম্বর। প্রধানমন্ত্রী নিহত পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের ইচ্ছা ব্যক্ত করলে তাদেরকে মহিউদ্দিনের বাস ভবন প্রাঙ্গণে নিয়ে আসা হয়। প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি পরিবারের হাতে সাহায্যের নগদ টাকা হস্তান্তর করেন। পাশাপাশি প্রশাসনকে নিহত ১০ পরিবারের সকলের বায়োডাটা তাঁর কাছে প্রেরণের নির্দেশনা প্রদান করেন।

Be the first to comment on "পদদলনে নিহতদের প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা"

Leave a comment

Your email address will not be published.




three × 3 =