চোখ ধাঁধানো রাতে গোল হলো সাত, ইন্তেরের ধাক্কায় বার্সা কুপোকাত

Print Friendly, PDF & Email

স্পোর্টস ডেস্ক : সান সিরোতে যারা ম্যাচটি সরাসরি দেখেছেন তারা নিশ্চিত বলে দিতে পারেন, এমন ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলের ম্যাচ এর আগে দেখেনি চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল। শুরুর হাসি ইন্তের মিলানের, মাঝপথে ঘুরে দাঁড়িয়ে বার্সেলোনার জয়ের সুবাস- যা নাটকীয়ভাবে শেষ মুহূর্তে কেড়ে নিয়ে শেষ হাসি ইন্তের মিলানের নিজেদের করে নেওয়া। ক্ষণিকের জন্য সবই যেন নাটকের স্ক্রিপ্ট মনে হচ্ছিল, তবে বাস্তবে এমনটিই হয়েছে।

শুরুতে ২ গোলে পিছিয়ে পড়ে, দ্বিতীয়ার্ধে দুই গোল পরিশোধ করে ম্যাচের শেষ দিকে আরেকটি গোল করে জয়ের স্বপ্ন দেখছিল বার্সেলোনা। কিন্তু সান সিরোতে যোগ করা সময়ে গোল করে ম্যাচ ৩-৩ ব্যবধানে ড্র করে নতুন নাটকীয়তা তৈরি করে ইন্তের মিলান। শুধু তা-ই নয়, ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে গিয়ে গোল করে উল্টো ৪-৩ গোলের জয় ছিনিয়ে নেয় ইতালিয়ান দলটি।

প্রথম লেগে ৩-৩ গোলে ড্রয়ের পর কাল দ্বিতীয় লেগও হলো আরও রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা ছড়ানো। দুই লেগ মিলিয়ে ৭-৬ গোলের এই জয়ে দুই বছর পর আবার চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে ইন্তের মিলান। একটা রেকর্ডও দেখেছে দুই দলের এই লড়াই। চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে দুই লেগ মিলিয়ে এর আগে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ডটা ছিল লিভারপুল (৭)- রোমার (৬)। বার্সা-ইন্তেরও ছুঁয়েছে ২০১৭-১৮ মৌসুমে লিভারপুল-রোমার ১৩ গোলের সেই রেকর্ড।

সান সিরোতে ম্যাচের শুরুতেই ২১তম মিনিটে লাউতারো মার্তিনেসের গোলে পিছিয়ে পড়ে বার্সেলোনা। ঘরের মাঠে লিড নিয়ে ম্যাচের প্রথমার্ধে ফের এগিয়ে যায় ইন্তের মিলান। এবার অবশ্য বার্সেলোনা নিজেরাই স্বাগতিকদের এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। ম্যাচের ৪২তম মিনিটে পাও কুবার্সি লাউতারোকে ট্যাকেল করে ইন্তের মিলানকে পেনাল্টি উপহার দেন। সুযোগ পেয়ে হাত ছাড়া করেনি ইন্তের। পেনাল্টি থেকে হাকান কালহানোগলুর গোলে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ইন্তের মিলান। তবে ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে যে চরম নাটকীয়তা অপেক্ষা করছিল তা কে জানত!

ম্যাচের ৫৪তম মিনিটে জেরার্ড মার্টিনের ক্রস থেকে বার্সেলোনার হয়ে প্রথম গোলটি করেন এরিক গার্সিয়া। ব্যবধান কমিয়েই ক্ষান্ত হয়নি স্প্যানিশ ক্লাবটি। পাঁচ মিনিট বাদে ফের সেই জেরার্ড মার্টিনের অ্যাসিস্ট, এবার দুর্দান্ত এক হেডারে বার্সেলোনাকে সমতায় ফেরান দানি অলমো।

পিছিয়ে পড়েও ২-২ গোলে ম্যাচে সমতা ফেরানো বার্সেলোনা ৭০ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত। তবে লামিন ইয়ামালের দুর্দান্ত শট ঠেকিয়ে দেয় ইন্তেরের ডিফেন্স। বেশিক্ষণ আর অপেক্ষা করতে হয়নি সফরকারীদের। ম্যাচের ৮৭তম মিনিটে রাফিনিয়ার গোলে ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা।

২-০ গোলে পিছিয়ে থাকা দল ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে যখন জয়ের স্বপ্ন দেখছিল, ঠিক তখনই যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে দেনজেল দুম্ফ্রিসের ক্রস থেকে গোল করে ডুবতে থাকা ইন্তেরকে সমতায় ফেরান ফ্রান্সেসকো আচেরবি। নিশ্চিত হেরে যাওয়া ম্যাচে প্রাণ ফিরিয়ে আগ্রাসী উদযাপন করে হলুদ কার্ডও দেখেন আচের্বি। ৩-৩ গোলে নির্ধারিত সময়ে ড্র থাকা ম্যাচ দুই লেগ মিলিয়ে ৬-৬ গোলে সমতা থাকায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে গড়ায়।

অতিরিক্ত সময়ের ৯৯তম মিনিটে মেহদি তারেমির অ্যাসিস্টে ইন্তের মিলানকে এগিয়ে নেন দাভিদে ফ্রাত্তেসি। ১১৪তম মিনিটে বার্সেলোনাকে প্রায় ম্যাচে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ইয়ামাল। কিন্তু ডান দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে তার জোরাল শট ইন্তের গোলকিপার সমারের হাত ছুঁয়ে বাইরে দিয়ে চলে যায়। ১১৬তম মিনিটে ফের স্প্যানিশ এই ফরোয়ার্ডের আরেকটি শট ঠেকান সুইস গোলরক্ষক।

নিশ্চিত হলো, বার্সার ট্রেবলের স্বপ্ন আর পূরণ হচ্ছে না। সিমোনে ইনজাগি দায়িত্ব নেওয়ার পর চার বছরে দুবার ফাইনালে ওঠা ইন্তের মিলানের চতুর্থ চ্যাম্পিয়নস লিগের স্বপ্ন বেঁচে থাকল।