মাথায় চোট পেয়ে ক্রিকেটকে বিদায় বললেন অস্ট্রেলিয়ান তারকা

Print Friendly, PDF & Email

স্পোর্টস ডেস্ক: বারবার মাথায় চোট, যা ক্রিকেটে পরিচিত ‘কনকাশন’ নামে। সেই চোটের কারণে শেষ পর্যন্ত ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিতে বাধ্য হলেন অস্ট্রেলিয়ান তারকা উইল পুকোভস্কি।

মাত্র ২৭ বছর বয়সে অবসরের ঘোষণা দিতে গিয়ে পুকোভস্কি জানান, এটি ভয়ানক হতাশার, যা মানিয়ে নেওয়া কঠিন। পুকোভস্কি ২০২১ সালে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট খেলেছিলেন। এটিই তার সংক্ষিপ্ত ক্যারিয়ারের প্রথম ও শেষ টেস্ট।

অল্প বয়স থেকেই ভিক্টোরিয়ার হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দাপট দেখানোয় অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলের ভবিষ্যতের ভরসা হিসেবে দেখা হচ্ছিল পুকোভস্কিকে। তবে সেই সম্ভাবনা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হলো।

কিন্তু একের পর এক মাথায় আঘাত শেষ করে দিয়েছে পুকোভস্কির ক্যারিয়ার। ২০২৪ সালের মার্চে শেষবার ক্রিকেট খেলেছিলেন তিনি। শেফিল্ড শিল্ডের হয়ে খেলতে নেমে তাসমানিয়ার পেসার রিলে মেরেডিথের এক বাউন্সারে মাথায় মারাত্মক চোট পান। পরে কনকাশন বদলি হয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন।

খেলোয়াড়ী জীবনে ১৫ বারেরও বেশি মাথায় চোট পাওয়া পুকোভস্কির ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে গঠন করা হয় স্বতন্ত্র মেডিকেল প্যানেল। তারা অবসরের পরামর্শ দিলেও সিদ্ধান্তে নিতে কিছুটা সময় নেন পুকোভস্কি। এর মধ্যে চুক্তি, বীমা এবং সম্ভাব্য আর্থিক ক্ষতির বিষয় আলোচনারও একটি ব্যাপার ছিল।

মেলবোর্নের ‘সেন’ রেডিওতে এসে পুকোভস্কি বলেন, ‘ভালো পরিস্থিতিতে এসে কথা বললে ভালো লাগত। কিন্তু আমি আর ক্রিকেট খেলবো না। এই বছরটা খুব কঠিন কেটেছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, আমি আর কোনো পর্যায়ে ক্রিকেট খেলবো না।’

২০২৩-২৪ মৌসুমে নিজেকে ফিরে পাচ্ছিলেন বলেই এই সিদ্ধান্তটি নিতে আরও কষ্ট হচ্ছিল পুকোভস্কির। নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচের আগের ম্যাচে করেছিলেন সেঞ্চুরি।

পুকোভস্কি বলেন, ‘সিডনিতে সেই সেঞ্চুরির পর আমার মনে হচ্ছিল, সব কিছু আবার ঠিকঠাক হচ্ছে। মাঠে ভালো খেলতে, মাঠের বাইরেও অনেক কিছু ঠিক করার জন্য প্রচুর পরিশ্রম করেছি।’

জাতীয় দলের হয়ে খেলা নিয়ে পুকোভস্কি বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলা ছিল আমার স্বপ্ন। সেটা ২০২১ সালে পূরণ হয়েছিল। কিন্তু সেখানেই থেমে যেতে চাইনি। আমি ১০০টা টেস্ট খেলতে চেয়েছিলাম। দুর্ভাগ্যবশত একটিতেই শেষ হয়ে গেল।’

সর্বশেষ কনকাশনের পর অবস্থা এতটাই খারাপ হয় যে নিজের বাড়িতেও স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছিলেন না পুকোভস্কি। বলেন, ‘শেষ কনকাশনের পর কয়েক মাস কিছুই করতে পারিনি। হেঁটে বেড়ানোও কঠিন ছিল। আমার প্রেমিকা বিরক্ত হয়ে যেতেন। কারণ আমি ঘরের কাজে সাহায্য করতাম না। অনেক ঘুমিয়ে থাকতাম।’

‘সেই থেকে বছরটা খুব কঠিন গেছে। বেশিরভাগ উপসর্গ থেকেই গেছে। প্রথম কয়েক মাস ছিল বিভীষিকাময়, তারপরও কিছু উপসর্গ থেকে যায়।’

তিনি আরও জানান, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা থাকায় তার মস্তিষ্কের আঘাত এবং লক্ষণগুলোকে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা কঠিন।

পুকোভস্কি বলেন, ‘মাত্র ২৭ বছর বয়সে আমি এমন এক সমস্যায় পড়েছি, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানও পুরোপুরি বুঝতে পারে না। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে উপসর্গ নিয়ে বেঁচে থাকা এবং এর আগে বহু বছর ধরে সমস্যার মুখোমুখি হওয়া—এই অবস্থায় আবার পেশাদার খেলায় ফেরা অসম্ভব।’

পুকোভস্কি জানান, অবসর মানেই সমস্যার শেষ নয়, কারণ এখনো নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক উপসর্গ নিয়ে লড়ছেন। বলেন, ‘এটা খুব জটিল। মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা এক দিক, কিন্তু শারীরিক দিকেও ক্লান্তি, মাথাব্যথা, মোশন সিকনেস—এইসব সমস্যার সঙ্গে বাঁচতে হচ্ছে। বাম পাশে কিছু ঘটলে আমি অসুস্থ বোধ করি, মাথা ঘোরে।’

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী, এমন প্রশ্নে পুকোভস্কি জানান, ক্রিকেট থেকে একেবারে দূরে সরে যাচ্ছেন না তিনি। ২০২৫-২৬ মৌসুমে ভিক্টোরিয়া প্রিমিয়ার ক্লাব মেলবোর্নের হেড কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেবেন। এছাড়া তিনি কিছু টিভি ধারাভাষ্যও দিয়েছেন অতীতে এবং ভবিষ্যতে সেদিকে ফিরতেও পারেন।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৪৫.১৯ গড়ে ২৩৫০ রান করেছেন পুকোভস্কি। ৭টি সেঞ্চুরি লেখা আছে তার নামের পাশে। এর মধ্যে ৩টি ছিল ডাবল সেঞ্চুরি।

একমাত্র টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে হাফসেঞ্চুরি করা এই প্রতিভাবান ব্যাটার দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিদায় নিলেন অনেক আগেই। তার গল্প, লড়াই এবং সাহস অনেকদিন মনে রাখবে ক্রিকেটবিশ্ব।