বিশ্বের প্রথম কাঠের তৈরি স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠাল জাপান

Print Friendly, PDF & Email

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : প্রথমবারের মতো মহাকাশে পাঠানো হয়েছে কাঠের প্যানেলওয়ালা স্যাটেলাইট। ভবিষ্যতে চাঁদ ও মঙ্গলের মতো গ্রহ অনুসন্ধানের জন্য ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব উপাদান হিসাবে কাঠের কার্যকারিতা পরীক্ষার অংশ হিসেবে এই স্যাটেলাইট পাঠানোর কথা প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।

জাপানের গবেষকদের তৈরি এই ক্ষুদ্র স্যাটেলাইটটির ওজন কেবল ৯০০ গ্রাম। মার্কিন গবেষণা সংস্থা নাসা’র কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে ইলন মাস্কের স্পেসএক্স রকেটে করে স্যাটেলাইটিকে পাঠানো হয়েছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন বা আইএসএস-এ। এরপর এটিকে ছেড়ে দেওয়া হবে পৃথিবীর উচ্চ কক্ষপথে।

ল্যাটিন ভাষায় কাঠের নামের সঙ্গে মিলিয়ে গবেষকরা স্যাটেলাইটির নাম দিয়েছেন ‘লিগনোস্যাট’। স্যাটেলাইটটির এসব প্যানেল তৈরি হয়েছে ‘ম্যাগনোলিয়া’ গাছ থেকে, যেটিকে স্ক্রু বা আঠা ছাড়াই প্রচলিত কৌশলে জুড়ে দেওয়া যায়।

এর মাধ্যমে ‘কিয়োতো ইউনিভার্সিটি’র গবেষকরা আশা করছেন, মহাকাশ গবেষণায় প্রচলিত ধাতুগুলোর বদলে ভবিষ্যতে এ ধরনের কাঠের ব্যবহার সম্ভব।

“পৃথিবীর তুলনায় মহাকাশে কাঠ বেশি টেকসই। মহাকাশে পানি বা অক্সিজেন না থাকায় কাঠ সেখানে সহজে পচে বা জ্বলে যাবে না,” বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন ‘কিয়োতো ইউনিভার্সিটি’র বন বিজ্ঞানের অধ্যাপক কোজি মুরাতা।

“১৯০০ সালের শুরুর দিকে বিভিন্ন অ্যারোপ্লেন তৈরি হতো কাঠ দিয়ে। তাই কাঠের স্যাটেলাইটও তৈরি করা সম্ভব।”

গবেষকরা বলছেন, পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদ বা মঙ্গল গ্রহে কখনও যদি গাছ লাগানো সম্ভব হয় তবে ভবিষ্যতে মহাকাশে বসতি নির্মাণের জন্যও করা যেতে পারে কাঠের ব্যবহার।

লিগনোস্যাটের সঙ্গে প্রচলিত অ্যালুমিনিয়াম কাঠামো ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক উপাদান যোগ করেছেন গবেষকরা। ছয় মাস ধরে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করার সময় এসব কাঠের প্যানেল মহাকাশের চরম পরিবেশে কীভাবে সাড়া দেয় তা পরীক্ষার জন্য বোর্ডে সেন্সরও জুড়ে দিয়েছেন তারা।

যুক্তরাজ্যের ‘ওপেন ইউনিভার্সিটি’র মহাকাশ গবেষক ড. সিমিওন বারবার বলেছেন, “আমাদের একটি বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে যে, এটি পুরোপুরি কাঠের তৈরি স্যাটেলাইট নয়। তবে এ ধারণাটির পেছনে মূল ভিত্তিটি কাঠ, যা সত্যিই রোমাঞ্চকর।”

“টেকসই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কাঠ এমন এক উপাদান, যা বারবার জন্মাতে পারে ও পরিবেশবান্ধব।” তবে মহাকাশযানে কাঠের ব্যবহার এবারই প্রথম নয় বলেও উল্লেখ করেন বারবার।

“এর আগে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুনরায় প্রবেশের ক্ষেত্রে মহাকাশযানকে টিকিয়ে রাখার জন্য এটিতে কাঠ ও কর্ক ব্যবহার করেছি আমরা। চন্দ্র অভিযানে রোভারটিকে ভূপৃষ্ঠে নামানোর সময় আঁকড়ে ধরার জন্যও কর্ক ব্যবহার করেছে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও রাশিয়া।”

“মহাকাশে কাঠ ব্যবহারে কোনও ভুল নেই। এখানে সঠিক কাজের জন্য সঠিক উপাদানই ব্যবহার করা হচ্ছে।”

‘কিয়োতো ইউনিভার্সিটি’র গবেষকরা আশা করছেন, মহাকাশযান তৈরিতে কাঠ ব্যবহারের বিষয়টি ধাতব উপাদান ব্যবহারের চেয়ে পরিবেশবান্ধব হতে পারে। কারণ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কাঠ পুড়ে ছাই হয়ে যায়।