স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশিদের ওপর মার্কিন ভিসানীতি প্রয়োগে ভয় পাওয়ার কিছু নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাইরের দেশ থেকে বাংলাদেশের নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হলে বাংলাদেশের জনগণও তাদের নিষেধাজ্ঞা দেবে।
শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যারা স্যাংশনের (নিষেধাজ্ঞা) কথা বলছে যে, নির্বাচন বানচাল করলে তারা সেটাকে স্যাংশন দেবে। আমারও কথা হলো এই বানচাল করার চেষ্টা যেন দেশের বাইরে থেকেও না হয়। দেশের বাইরে থেকেও যদি বানচালের চেষ্টা হয় তাহলে বাংলাদেশের মানুষও স্যাংশন দিয়ে দেবে। সেটাও মাথায় রাখতে হবে। আমেরিকাও দেখতে থাকুক। কাজেই বাইরে থেকেও যেন নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা না করা হয়। কারণ ‘আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো’ এই স্লোগানটি আমারই দেয়া।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি কিন্তু কারো শক্তিতে বিশ্বাস করে ক্ষমতায় আসিনি। আমি ক্ষমতায় এসেছি জনগণের শক্তিতে। জনগণের ভোটে। আমি কাজ করছি জনগণের কল্যাণে। এখানেই আমাদের স্বার্থকতা। কাজেই কে স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দিলো, আর কে স্যাংশন দিল না, আর তাছাড়া স্যাংশন দিলেও কি আছে ? আমার ছেলে তো এখানেই (যুক্তরাষ্ট্রে) আছে। এখানেই লেখাপড়া, এখানে ব্যাবসা বাণিজ্য করেছে। এখানে বিয়েও করেছে, সন্তানরাও আছে। বাড়িঘর সবই আছে। যদি বাতিল করে তো করবে। তাতে কিছু এসে যায় না। বাংলাদেশ তো আমাদের আছেই। এতে ভয় পাওয়ানোর বা ঘাবড়ানোর কিছু নাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা (যুক্তরাষ্ট্র) এটা বলছে, তাদের নির্বাচন নিয়েও কিন্তু প্রশ্ন আছে। এখনো তাদের সেই নির্বাচনই কিন্তু কেউ মেনে নেয়নি। এরা তাদের বিরোধীপক্ষের সঙ্গে কি আচরণ করছে? আমরা তো দেখতে পাচ্ছি, এরা নিজেদের বিরোধীপক্ষের সঙ্গে কি করছে ? আমরা কি সেই পর্যন্ত কিছু করেছি? করিনি। আমরা তো আমাদের বিরোধীপক্ষের সঙ্গে সেটা করিনি।
তিনি বলেন, যে খালেদা জিয়া আমাকে বারবার হত্যার চেষ্টা করেছে। আমাকে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছে। এমনকি গ্রেনেড হামলার পরে একটা আলোচনা করতে দেয়নি। একটা নিন্দা প্রস্তাবও আসতে দেয়নি। খুনিদের রাতারাতি দেশ থেকে পার করে দিয়েছিল। তারপরও সেই খালেদা জিয়া কিন্তু দুর্নীতির কারণে সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়া সত্বেও সরকার প্রধানের নির্বাহী ক্ষমতাবলে আমি সাজা স্থগিত করে তাকে বাড়িতে থাকতে দিচ্ছি। নিজের মতো চিকিৎসা করাতে পারছে। অথচ, ১৯৮১ সালে আমি যখন বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলাম, তখন খালেদার স্বামী জিয়াউর রহমান কিন্তু আমাকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে ঢুকতেও দেয়নি। তারপরে ৭৫ এর হত্যাকাণ্ড, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ বহু পরিস্থিতি মোকাবেলা করেই আমি এখানে এসেছি। কাজেই জনগণ যদি ভোট দেয় তাহলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে।
সংবাদ সম্মেলনে দুর্নীতি প্রতিরোধ প্রসঙ্গ এলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৪ সালের আগে বা পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে কিভাবে দুর্নীতি হয়েছে? সেটা কেন সবাই ভূলে যায়। এখন তো সেইভাবে কোনো দূর্নীতি হচ্ছে না। আর যার বিরুদ্ধেই দূর্নীতির প্রমাণ আসছে তাকে আগেই সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তাছাড়া যদি সেরকম দুর্নীতিই হয়, তাহলে দেশ এতো উন্নত হচ্ছে কিভাবে, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে কিভাবে?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ২০২১ সালে আমরা উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পাই। এটাকে আমরা বাস্তবায়ন করবো ২০২৬ সালে। এখানে কোনো ম্যাজিক বলতে কিছু নেই। সুষ্ঠু পরিকল্পনা, আন্তরিকতা, কর্মনিষ্ঠা, জনগণের প্রতি ভালো, দায়িত্ববোধ এবং দেশপ্রেম হচ্ছে একমাত্র শক্তি। আমি মনে করি সেই শক্তি দিয়েই আমরা এটা করতে পেরেছি।