মংডু দিয়ে বাংলাদেশে খাদ্যপণ্য রপ্তানি নিষিদ্ধ করল মিয়ানমার

Print Friendly, PDF & Email

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সম্প্রতি মিয়ানমারের দুটি বড় ব্যাংকের সম্পদ জব্দ করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংক। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ব্যাংক দুটি হচ্ছে- মিয়ানমা ফরেন ট্রেড ব্যাংক ও মিয়ানমা ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সংক্রান্ত এক নির্দেশেনার পর মিয়ানমারের ওই দুই ব্যাংকের হিসাবগুলো স্থগিত করার এই পদক্ষেপ নেয় সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

এর ঘটনার পর নতুন পদক্ষেপ নিয়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু হয়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য রপ্তানি নিষিদ্ধ করল দেশটির জান্তা সরকার। শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ‘মিয়ানমার নাউ’।

এতে বলা হয়, রাখাইন রাজ্যের মংডু হয়ে বাংলাদেশে খাদ্যপণ্য রপ্তানি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর আদেশ দেয় জান্তা সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আদেশে বলা হয়েছে, চাল, মটরশুটি, চিনাবাদাম এবং পিঁয়াজসহ বিধিনিষেধ আরোপিত পণ্যগুলো কেবলমাত্র রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিট্যুয়ের বাণিজ্যিক অঞ্চলের মাধ্যমে পাঠাতে হবে।

এই আদেশটি ৪ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে বলেও সেসময় জানানো হয়। মিয়ানমার জান্তার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য বিভাগের মহাপরিচালক মিন্ট থুরা বলেছেন, ‘সোনালী ব্যাংক যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে তার ফলে পণ্য পাচার হতে পারে। তাই চোরাচালান ঠেকাতে সিট্যুয়ের মাধ্যমে রপ্তানি করতে হবে।’

মিয়ানমার নাউ বলছে, সম্পদ জব্দ করার সময় জান্তা-নিয়ন্ত্রিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান মিয়ানমা ফরেন ট্রেড ব্যাংক (এমএফটিবি) এবং মিয়ানমার ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (এমআইসিবি) একত্রে বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংকে ১০০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থ ছিল।

মিয়ানমারের এই দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানই চলতি বছরের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়। পরে ওই দুই প্রতিষ্ঠানের অর্থ আটকে দেয় সোনালী ব্যাংক। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মিয়ানমারের পূর্ববর্তী সামরিক স্বৈরশাসনের অধীনে এমআইসিবি এবং সোনালী ব্যাংক প্রথম ১৯৯৫ সালে এই ধরনের লেনদেনের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। আর তার ফলে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বেশ উদ্দীপিত হয়।

রাখাইন রাজ্যের চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি টিন অং ওও বলেছেন, এই ধরনের বিধিনিষেধ রাজ্যের অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলবে না, কারণ সিট্যুয়ের মাধ্যমে এখনও পণ্য রপ্তানি করার সুযোগ রয়েছে।

টিন অং ওও-এর মতে, ডলারের রিজার্ভ কমে যাওয়া ঠেকাতে বাংলাদেশ সরকার চলতি বছরের শুরুর দিকে মিয়ানমার থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় সীমিত করেছিল। যার ফলে সেসময় বাণিজ্য হ্রাস পায়। তবে তিনি বলেন, ‘আর্থিক লেনদেনে অব্যাহত বিধিনিষেধ সত্ত্বেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাণিজ্য বেশ বেড়েছে।’

গত এপ্রিল মাসে ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ উৎসবের কথা উল্লেখ করে টিন বলেন, ‘থিংয়ানের আগে বাণিজ্য কার্যত শূন্যে নেমে গিয়েছিল। সেখান থেকে ব্যবসা ধীরে ধীরে আগের চেহারায় ফিরছে। যদিও এটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেনি। বিধিনিষেধ আরোপ সত্ত্বেও আপাতত রপ্তানি অব্যাহত রয়েছে।’

মিয়ানমার নাউ বলছে, সোনালী ব্যাংকে থাকা মিয়ানমারের ব্যাংকের সম্পদ জব্দ করার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্তের কথা শুনে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর থান থান সোয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। গত ১৯ আগস্ট রাজধানী নেপিদোতে এক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘এই ঘটনায় তিনি চুপ থাকবেন না এবং বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের মুখোমুখি হবেন।’ সূত্র: মিয়ানমার নাউ