- যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর মৃত্যু
স্টাফ রিপোর্টার : যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসককে হুমকিদাতা তাফসিরুল ইসলাম একজন শিবিরকর্মী বলে জানিয়েছে র্যাব। এ বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ঝিনাইদহের মহেশপুরে একটি কলেজে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে পড়ালেখা করছেন তাফসিরুল।
“সে স্কুল জীবন থেকেই বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের একজন সক্রিয় সদস্য। ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির দ্বারিয়াপুর, মহেশপুর’ এবং ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির দ্বারিয়াপুর, মহেশপুর’ নামে দুটি ফেইসবুক গ্রুপের অ্যাডমিন সে।”
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাঈদী কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে হৃদরোগ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক চৌধুরী মেশকাত আহমেদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪ অগাস্ট রাতে সাঈদীর মৃত্যু হয়।
তার চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলে ছিলেন হৃদরোগ বিভাগের অধ্যাপক এস এম মোস্তফা জামান। প্রাণনাশের হুমকি পাওয়ার অভিযোগ জানিয়ে মঙ্গলবার রাতে ধানমণ্ডি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তিনি।
সেখানে তিনি বলেন, ‘কতিপয় ব্যক্তি’ সামাজিক মাধ্যম এবং ইউটিউবে বিভিন্ন আইডি থেকে তার বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচার’ করছে। মেসেঞ্জারে বিভিন্ন গ্রুপে এবং ফেইসবুকে তার ব্যক্তিগত আইডিতে ‘ভয়-ভীতি’ দেখাচ্ছে এবং ‘প্রাণনাশের হুমকি’ দিচ্ছে। তাতে তিনি ‘ভীত, শঙ্কিত’।
ফেসবুক ও ইউটিউব ব্যবহারকারীদের কয়েকটি লিংক জিডিতে উল্লেখ করে এই চিকিৎসক বলেন, “তারা এবং তাদের অনুসারী ব্যক্তিরা যে কোনো সময় আমার এবং আমার পরিবারের সদস্যদের খুন, জখমসহ বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে।”
এ বিষয়ে তদন্তে নেমে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-২ ও ৬ এর একটি যৌথ দল বুধবার রাতে ঝিনাইদহের মহেশপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৩ বছর বয়সী তাফসিরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে।
বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) সকালে কারওয়ানবাজার র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, তাফসিরুল আইটিতে দক্ষ। অনলাইনে ইমেইল মার্কেটিং এর কাজ করে মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় করেন। পাশাপাশি ফেইসবুকে শিবিরের সাংগঠনিক প্রচার চালান।
তাফসিরুলের বাবা রফিকুল ইসলাম রফিও জামায়াতের একজন সক্রিয় কর্মী। ২০১৩-১৪ সালে মহেশপুরে নাশকতার একাধিক মামলায় তার নাম আসে, সে সময় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারেও গিয়েছিলেন তিনি।
র্যাবের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তাফসিরুল চিকিৎসক মোস্তাফা জামানের মোবাইল নম্বর খুঁজে বের করে হোয়াটসঅ্যাপে এবং ফেসবুক মেসেঞ্জারে প্রাণনাশের হুমকি দেন। জামায়াত নেতা সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ‘দলীয় ও রাজনৈতিক মতাদর্শ, ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও আক্রোশ থেকে’ তিনি এ কাজ করেন।
মঈন বলেন, তাফসিরুল হুমকির বার্তা পাঠানোর পর হোয়াটসঅ্যাপ থেকে সেটা মুছে ফেললেও তার মোবাইলে ওই মেসেজের ‘স্ক্রিনশট’ পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, “সাঈদী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসারত থাকা অবস্থায় বিশেষজ্ঞ টিম আন্তর্জাতিক প্র্যাকটিস অনুসরণ করে অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে চিকিৎসা সেবা দেয়। জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পরিবারও তার চিকিৎসার ব্যাপারে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
“কিন্তু সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিসহ চিকিৎসক সমাজকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে।”
এ ধরনের কর্মকাণ্ড যারাই করবে, তাদের খুঁজে বের করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেন র্যাব মুখপাত্র মঈন। ডা. এস এম মোস্তফা জামানকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় এ নিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হল। ওই ঘটনায় এর আগে ঢাকার উত্তরা থেকে হাফিজা মাহবুবা বৃষ্টি নামে ৩২ বছর বয়সী এক নারীকে আটক করে সিটিটিসি।