চার দিনের লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

Print Friendly, PDF & Email

স্টাফ রিপোর্টার : চার দিনব্যাপী লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আজ বুধবার থেকে এ কর্মসূচি শুরু হবে। এর মধ্যে রয়েছে- সরকার পতনের একদফা দাবিতে যুগপৎ ধারায় শুক্রবার ঢাকাসহ সব মহানগরে গণমিছিল এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা ও মুক্তির দাবিতে শনিবার ঢাকাসহ দেশের সব জেলা ও মহানগরে পদযাত্রা।

গত সোমবার রাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এসব কর্মসূচি চূড়ান্ত হয়। স্থায়ী কমিটির বৈঠকের এ সিদ্ধান্ত মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়া আগামী ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, স্থায়ী কমিটির সভায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এ জন্য তার রোগ মুক্তির জন্য আজ বুধবার রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের মহানগর, জেলা ও উপজেলাপর্যায়ে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবিতে সারাদেশে লিফলেট বিতরণ করা হবে। শুক্রবার রাজধানী ঢাকায় বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা পৃথক দুটি গণমিছিল করবে। এ ছাড়া ১৯ আগস্ট শনিবার ঢাকাসহ দেশের সব মহানগর ও জেলাপর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হবে। সভায় অবৈধ লুটেরা, ফ্যাসিবাদী সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে শুক্রবার ঢাকা মহানগরসহ সব মহানগরে গণমিছিল কর্মসূচিটি যুগপৎ আন্দোলনের ধারায় পালিত হবে।

ঢাকায় গণমিছিল ও পদযাত্রা : শুক্রবার ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি গণমিছিল শুরু করবে বেলা ৩টায় গুলশান-২ থেকে। গুলশান-১, তিতুমীর কলেজ হয়ে মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে শেষ হবে। একই সময়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি রাজধানীর দয়াগঞ্জ থেকে গণমিছিল শুরু করবে। গণমিছিল সায়েদাবাদ ব্রিজ, ধলপুর কমিউনিটি সেন্টার,

গোলাপবাগ, কমলাপুর, বৌদ্ধমন্দির হয়ে খিলগাঁও, শাজাহানপুর, ফকিরাপুল হয়ে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হবে। শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে ঢাকায় পদযাত্রা শুরু হবে।

স্থায়ী কমিটির সভায় পুলিশি নির্যাতনের ফলে অসুস্থ অবস্থায় কারাগারে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক ইদ্রিস মোল্লার মৃত্যুতে গভীর নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। এ বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্ত করতে সিনিয়র আইনজীবী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরীর নেতৃত্বে দলের মানবাধিকার সম্পাদক আসাদুজ্জামান ও আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আগামী সাত দিনের মধ্যে এ কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দিতে বলা হয়েছে।

সাঈদীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ : জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের, যাদের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি হয়েছে এবং কারাবন্দি অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে, তখন বিএনপিকে শোক প্রকাশ করতে দেখা যায়নি। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদ- পাওয়া জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে শোক এবং তার জানাজায় অংশগ্রহণ করে বিএনপি।

শোকবার্তায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কারাবন্দি অবস্থায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে গভীর শোকাহত। এ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামি প-িত বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন ইসলামের আলোকিত পথে। ক্ষমতাসীন শক্তি তাকে কোনোভাবেই প্রভাবিত করতে পারেনি। তিনি তার নিজস্ব মতাদর্শে ছিলেন অবিচল। মির্জা ফখরুল বলেন, ধর্মপ্রাণ মানুষের প্রতি সহমর্মী মানুষটি জনসাধারণের মধ্যে বিশুদ্ধ ইসলামি জ্ঞানের চর্চা ও প্রচারে নিজেকে নিবেদিত রেখেছিলেন। জাতীয় সংসদেও তিনি ছিলেন ধৈর্যশীল ও তেজস্বী বক্তা। মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘গুরুতর অসুস্থ মরহুম দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী গত ১৩ বছর বন্দি অবস্থায় থাকলেও তাকে কোনো সুচিকিৎসা দেওয়া হয়নি। তার মৃত্যু স্বৈরশাসনের এক নির্দয় নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’

স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার রাতে স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা চলাকালে খবর আসে রাত ৮টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যু হয়েছে। এ বিষয়টি দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য তুললে-তা নিয়ে আলোচনা শেষে সাঈদীর মৃত্যুতে শোক এবং তার জানাজায় অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সভা। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মধ্যরাতেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পৃথক শোকবার্তা দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষর করে গণমাধ্যমে পাঠায়।