স্টাফ রিপোর্টার : বাক স্বাধীনতা বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা সাইবার নিরাপত্তা আইনের উদ্দেশ্য নয় বলে দাবি করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বরং সাইবার অপরাধ দমনই এই আইনের উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে আইনটির সমালোচনা করে বলা ‘নতুন বোতলে পুরনো মদ’ উক্তি প্রত্যাখ্যান করেন আইনমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) রাজধানীর আইসিটি টাওয়ারে সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
এ সময় আনিসুল হক বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ আমরা ভোগ করলেও কিছু সীমাবদ্ধতা দেখা দেয়। সেটা হচ্ছে ডিজিটাল মাধ্যমকে ব্যবহার করে অপরাধ করা অথবা পুরনো অপরাধ ডিজিটাল মাধ্যমে করা। এজন্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয় কিন্তু এই আইনের অপব্যবহার হতে দেখি যা আমি অকপটে স্বীকার করি। এমন প্রেক্ষাপটে এই আইন সংশোধনে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করি।
কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, আইনটি ব্যাপক হারে পরিবর্তন করা প্রয়োজন। তার প্রেক্ষিতে সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়ে কাজ শুরু হয় এবং গত ৭ আগস্ট সেটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পায়। এই আইনের উদ্দেশ্য সাইবার অপরাধকে দমন করা; বাক স্বাধীনতা বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা নয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেরও এমন উদ্দেশ্য ছিল না। এই আইনের মাধ্যমে সাইবার অপরাধ কমে আসবে এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো অপব্যবহার কমে আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, আইনটি বাতিল করা হয়নি বরং পরিবর্তন করা হয়েছে। ডিজিটাল এর বদলে সাইবার শব্দ রাখা হয়েছে আইনটির ব্যাপ্তি বোঝানোর জন্য। বিশ্বে সাইবার অপরাধের ধরনেরও পরিবর্তন হয়েছে। সেজন্যই সাইবার নিরাপত্তা নামে আইনটি করেছি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশকিছু ধারায় সাজার পরিমাণ বেশি ছিল যা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কিছু ধারার অপরাধ জামিন অযোগ্য ছিল। এসব বিষয়ে পরিবর্তন করে সাজার বিধান কমানো হয়েছে। ২৯ ধারায় জেল ও অর্থদণ্ড ছিল কিন্তু এখন শুধু অর্থদণ্ড রাখা হয়েছে।
আইনের সমালোচকদের উদ্দেশে আনিসুল হক আরো বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পাশে রেখে এটা দেখলে অবশ্যই আইনটি পরিবর্তন করা হয়েছে। অনেকে না জেনেই বলছেন, নতুন বোতলে পুরনো মদ। যারা এটা করছেন তারা সমালোচনার জন্যই সমালোচনা করছেন, না জেনে করছেন।’
খসড়াকৃত সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৪২ ধারা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘৪২ ধারায় পুলিশ কর্মকর্তাকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সেটা জরুরি প্রয়োজনে অপরাধ দমন বা অপরাধ হলে প্রমাণ সংরক্ষণের জন্য। এখানেও যদি কোন অপব্যবহার হয় তাহলে সেই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।’
কিছু ধারায় অপরাধের সাজা কমানোর ফলে সাইবার অপরাধীরা উৎসাহিত হবেন কি না এবং এথিক্যাল হ্যাকিংকে এই আইনে সমর্থনের সুযোগ আছে কি না; এমন প্রশ্নের জবাবে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘একই আশঙ্কা আমাদের মধ্যেও আছে। তবে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সচেতনতা দরকার হবে। শুধু আইন করে অপরাধ দমন যায় না, পারিপার্শ্বিক বিষয়ও কাজ করে। এথিক্যাল হ্যাকারস ফোরাম গঠনের উদ্যোগ নিচ্ছি, বৈধভাবে সিস্টেমের দুর্বলতা বোঝার জন্য। এথিক্যাল হ্যাকারের ম্যান্ডেট ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সিকে দেবো। আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা রিপোর্টের প্রেক্ষিতে ডিএসএ এথিক্যাল হ্যাকারদের অনুমতি দেবে। আর যারা এটা করবেন তারা নির্দিষ্ট সংস্থার অধীনেই করবেন। ফলে ৩৩ ধারায় তাদের সাজা হওয়ার সুযোগ নেই।’
সংবাদ সম্মেলনে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক জানান, ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ এর খসড়া ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। আগামী দুই সপ্তাহ এই খসড়ার বিষয়ে মতামত গ্রহণ করা হবে। আইসিটি বিভাগের পলিসি শাখায় এই মতামত দেওয়া যাবে। মতামতের প্রেক্ষিতে সংশোধনের প্রয়োজন হলে সংশোধন করে চূড়ান্ত যাচাই বাছাই শেষে আবারও মন্ত্রী পরিষদ বিভাগে উত্থাপন করা হবে। আর সেখান থেকে অনুমোদন পেলে সংসদে উত্থাপন করা হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আইসিটি বিভাগ এবং আইন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।