শহীদজায়া পান্না কায়সারের প্রতি সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা

Print Friendly, PDF & Email

স্টাফ রিপোর্টার : লেখক, শিশু সংগঠক, শহীদজায়া পান্না কায়সারের মৃত্যুতে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পান্না কায়সারের মরদেহে সর্বস্তরের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রোববার (৬ আগস্ট) বেলা ১১টায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হয়। এ সময় সর্বস্তরের মানুষ তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

সেখানে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষের ঢল নামে। শ্রদ্ধা নিবেদন করে পান্না কায়সারের প্রতি স্মৃতিচারণ করেন তারা। শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।

মরদেহ শহীদ মিনারে আনা হলে সেখানে প্রথমে শ্রদ্ধা জানায় তার তৈরি শিশু-কিশোর সংগঠন ‘খেলাঘর’। কেন্দ্রীয় খেলাঘরের পক্ষে স্যালুট জানিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর মরদেহে খেলাঘরের পতাকা দিয়ে আবৃত করা হয়। এরপর খেলাঘরের বিভিন্ন শাখা শ্রদ্ধা নিবেদন করে। পরে একে একে গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতি, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক কমিটি, ধানসিঁড়ি কমিউনিকেশন, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, ঢাকা থিয়েটার, সম্প্রীতি বাংলাদেশ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সংস্কৃতি মঞ্চ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), রবীন্দ্র সংগীত সম্মেলন পরিষদ, বাংলাদেশ গণ আজাদী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ, ছায়ানট, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ শিশু অ্যাকাডেমি, প্রজন্ম একাত্তরসহ আরও অসংখ্য সংগঠন ও ব্যক্তিরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

শ্রদ্ধা জানিয়ে বিভিন্ন মহলের গুণিজনরা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য এবং দেশকে অসাম্প্রদায়িক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তিনি আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন। তার স্বপ্নের সেই দেশ গড়ে তোলার জন্য আমরা, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কাজ করে যাবে। এ ক্ষেত্রে পান্না কায়সার আমাদের প্রেরণার বাতিঘর হয়ে বেঁচে থাকবেন।

শ্রদ্ধা নিবেদন করে আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল বলেন, ‘তিনি সাংস্কৃতিক অঙ্গনের এক পুরোধা ব্যক্তিত্ব। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার, অসাম্প্রদায়িক চেতনার জন্য তিনি কাজ করে গেছেন। আমরা চাই, তার আশার সেই বাংলাদেশ, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ নির্মাণ করতে কাজ করেছেন। তার চলে যাওয়া আমাদের দেশের জন্য, রাজনীতির জন্য, শুদ্ধ সংস্কৃতির জন্য একটি বড় অপূর্ণতা দিয়ে যাবে।’

শিক্ষাবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘তার আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তার মতো একজন অমায়িক ও আদর্শবান মানুষ আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। তিনি আমাদের দেশ, দেশের মানুষকে গড়তে সবসময় কাজ করেছেন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘তিনি সবার ভালোবাসা লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন ব্যক্তিগত মূল্যবোধ ও গুণাবলির কারণে। স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তিকে আইনের আওতায় এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর ক্ষেত্রে পটভূমি তৈরিতে পান্না কায়সার মূখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ তিনি করেছেন। সেটি হলো, নতুন প্রজন্ম যাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অনুপ্রাণিত হয় এবং মুক্তিযুদ্ধের মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ যাতে নতুন প্রজন্মের মাঝে সঞ্চারিত হয় সেজন্য তিনি খেলাঘর প্রতিষ্ঠানটি আমৃত্যু পরিচালনা করেছেন। খেলাঘরের মাধ্যমে সারা দেশের শিশুদের সম্পৃক্ত করে তাদের মানবিক গুণাবলিতে সমৃদ্ধ করে, নৈতিক গুণাবলিতে উন্নত চরিত্রের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করেছেন তিনি।’

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘১৯৭২ সালে আমরা প্রথম যখন রাজাকারদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন করেছি সেই আন্দোলনে তিনি সামনের সারিতে ছিলেন। তিনি সারা জীবন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দেশ তৈরিতে কাজ করে গেছেন। আজ খেলাঘরের বন্ধুদের বলবো, তোমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দেশ গড়ার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হবে।’

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ গড়ে তোলা আমাদের একটি বড় দায়িত্ব। পান্না কায়সার সেই দায়িত্ব সারা জীবন সুন্দরভাবে পালন করে গেছেন।’

চলচ্চিত্র অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একজন জীবন্ত ইতিহাস তিনি। বাংলাদেশকে বুকে ধারণ করে তিনি আজীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশের জন্য, স্বাধীনতার জন্য তার ত্যাগ বিশাল। এই ত্যাগ আমরা আজীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবো। তার জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে তিনি বাংলাদেশকে ধারণ করে গেছেন। একজন মা চলে যাওয়ায় আমাদের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে একটি বড় শূন্যতা তৈরি হয়েছে। তার আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি, তিনি চিরকাল আমাদের হৃদয়ে থাকবেন।’