স্টাফ রিপোর্টার : নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে ভূমি অফিসের সহকারী সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তের জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটিকে দুই মাস সময় বেঁধে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (১৩ জুন) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনোজ কুমার ভৌমিক। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।
শুনানিকালে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস আদালতকে বলেন, ‘হাইকোর্টের নির্দেশে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। উচ্চ পর্যায়ের কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন। আরও আনুষঙ্গিক কাজ রয়েছে। তদন্ত শেষ করতে দুই মাস সময় প্রয়োজন।’
তখন রিটকারী আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক বলেন, ‘তারা আদালতের আদেশের এক মাস দুই দিন পর কমিটি গঠন করেছে। এখানে অনেক সময় ব্যয় হয়েছে। দুই মাস সময় দেওয়া ঠিক হবে না।’
এ পর্যায়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, ‘আমরা দুই মাস সময় দিচ্ছি। দুই মাস কিন্তু দুই মাসই। এ সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে। এটা স্পর্শকাতর ঘটনা। বারবার সময় দেওয়া হবে না।’
এরপর আদালত তদন্ত শেষ করতে দুই মাস সময় মঞ্জুর করেন।
এর আগে র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়ের করেন আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক। জনস্বার্থে দায়ের করা রিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, র্যাবের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।
জানা গেছে, সুলতানা জেসমিন নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন। র্যাবের দাবি, প্রতারণার অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ১৯ মার্চ তাকে আটক করা হয়। আটকের পর অসুস্থ হয়ে তিনি মারা যান।
নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, হেফাজতে নির্যাতনের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখনও কোনও মামলা দায়ের করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে বেশকিছু গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে গত ২৭ মার্চ তা আদালতের নজরে আনা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় জনস্বার্থে রিট দায়ের করা হয় হাইকোর্টে।
ওই রিটের শুনানি নিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় র্যাবের গ্রেফতারের এখতিয়ার আছে কিনা তা জানতে চান আদালত। একইসঙ্গে র্যাবের হাতে আটকের পর থেকে সুলতানা জেসমিনকে সম্মানজনক জায়গায় (থানা অথবা কার্যালয়ে) নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল কিনা এবং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ে র্যাবের আচরণ আইনানুগ হয়েছে কিনা, তাও জানতে চান আদালত।
পাশাপাশি চূড়ান্ত ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর কারণ কী আসে সেসব তথ্যও আদালতকে জানাতে বলা হয়। ৫ এপ্রিলের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে এসব বিষয়ের তথ্য এবং এ সংক্রান্ত আইন, নথি ও সুলতানা জেসমিনের ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন আদালত।
ওই নারীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানি নিয়ে গত ২৮ মার্চ বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ উপরোক্ত আদেশ দেন।
একইদিন নওগাঁ জেনারেল হাসপাতাল থেকে সুলতানা জেসমিনের সুরতহাল প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। সেখানে উল্লেখ করা হয়, সুলতানা জেসমিন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন। মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। তাকে নির্যাতন করা হয়নি।
পরে আরেক আদেশে গত ৫ এপ্রিল তার মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ওই ঘটনায় জড়িত র্যাব সদস্যদের দায়িত্ব থেকে আপাতত সরিয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। জেলা জজ পদ মর্যাদার একজন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা এবং চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে রাখতে বলা হয় কমিটিতে। তদন্ত সম্পন্ন করে কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়।
তদন্তকালীন সময়ে সুলতানা জেসমিনকে গ্রেফতারের সঙ্গে র্যাবের যেসব সদস্য জড়িত ছিলেন তাদের দায়িত্ব পালন থেকে সরিয়ে রাখতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এছাড়া মামলা ছাড়াই তাকে তুলে নেওয়া ও গ্রেফতার কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। হাইকোর্টের আদেশে পরে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।