স্টাফ রিপোর্টার : নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত দুটি ট্রাস্ট ‘প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট’ এবং ‘ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্ট’-এ তার নিজের দেওয়া দানের টাকার উপর কর সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে ইউনূস সেন্টার। শুক্রবার (৯ জুন) ইউনূস সেন্টার থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ড. ইউনূসের কর বিষয়ে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল ও পত্রিকায় আলোচনা হচ্ছে যা অনভিপ্রেত এবং প্রকৃত তথ্যভিত্তিক নয়।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রফেসর ইউনূসের যে টাকা নিয়ে পত্রপত্রিকা টেলিভিশনে আলাপ চলছে তার পুরোটাই প্রফেসর ইউনূসের অর্জিত টাকা। তার উপার্জনের সূত্র প্রধানত তার বক্তৃতার উপর প্রাপ্ত ফি, বই বিক্রি লব্ধ টাকা এবং পুরস্কারের টাকা। এর প্রায় পুরো টাকাটাই বিদেশে অর্জিত। এই টাকা বৈধভাবে ব্যাংকিং চ্যানেলে আনীত। কর বিভাগ তা অবহিত আছে। কারণ সব টাকার হিসাব তার আয়কর রিটার্নে উল্লেখ থাকে। বিবৃতিতে বলা হয়, তিনি ( ইউনূস) ভাবছিলেন এত টাকা দিয়ে তিনি কী করবেন?
তিনি জীবনে কোনও সম্পদের মালিক হতে চাননি। তিনি মালিকানামুক্ত থাকতে চান। কোথাও তার মালিকানায় কোনও সম্পদ নেই (বাড়ি, গাড়ি, জমি, শেয়ার ইত্যাদি)। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন তার উপার্জনের টাকা দিয়ে তিনি দু’টি ট্রাস্ট গঠন করবেন। তিনি তাই করলেন।
একটি ট্রাস্ট করলেন প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট এবং অল্প কিছু টাকা দিয়ে (মোট টাকার ৬%) উত্তরসূরিদের কল্যাণের জন্য করলেন ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্ট। ফ্যামিলি ট্রাস্টের মূল দলিলে এই রূপ বিধান রেখে দিলেন যে তার পরবর্তী এক প্রজন্ম পরে এই ট্রাস্টের অবশিষ্ট টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মূল ট্রাস্টে ফিরে যাবে। বিবৃতিতে বলা হয়, ড. ইউনূস এটা করলেন যাতে তার বর্তমানে এবং অবর্তমানে টাকাটা ট্রাস্টিদের তত্ত্বাবধানে নিরাপদে থাকে এবং তারা ট্রাস্ট দুটির লক্ষ্য বাস্তবায়নে তৎপর থাকে।
এখানে দানকর দেবার প্রশ্ন এলো কেন?
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইউনূস তার নিজের টাকা নিজের কাছে রেখে দিলে তাকে কম ট্যাক্স দিতে হতো। কারণ ব্যক্তিগত করের হার প্রাতিষ্ঠানিক করের হারের চেয়ে কম। দানকরের প্রসঙ্গটি তুললেন তার আইনজীবী । আইনপরামর্শক বললেন, ট্রাস্ট গঠনের কারণে তাকে দানকর দিতে হবে না। কারণ বড় ট্রাস্টটি জনকল্যাণের জন্য প্রতিষ্ঠিত। ফ্যামিলি ট্রাস্টের ব্যাপারে তিনি পরামর্শ দিলেন যে এরকম ক্ষেত্রে (অর্থাৎ প্রফেসর ইউনূসের অবর্তমানে তার সম্পদের কী হবে সে চিন্তায় যদি তিনি কোনও ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন তবে সেক্ষেত্রে) তাকে কোনও কর দিতে হবে না। কারণ এটা হবে তার অর্জিত টাকার একটি সুব্যবস্থা করে যাওয়া। তার পরামর্শের ভিত্তিতে টাকা স্থানান্তর করার সময় প্রফেসর ইউনূস কোনও কর দেননি। কিন্তু তিনি আয়কর রিটার্ন দাখিল করার পর কর বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানালেন যে, এক্ষেত্রে তাকে কর দিতে হবে। রিটার্নের যেখানে তিনি দানের তথ্যটি উল্লেখ করেছিলেন সংশ্লিষ্ট কর কর্মকর্তা তার উপর দানকর ধার্য করে দিলেন। তিনি টাকার অংকটা রিটার্নস-এ উল্লেখ করায় কর কর্মকর্তা তা দেখে কর আরোপ করেছেন।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আইন পরামর্শকের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রফেসর ইউনূস এ ব্যাপারে আদালতের সিদ্ধান্ত চাইলেন। আদালত কর দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে। এই হলো মোট ঘটনা। বিবৃতিতে দাবি করা হয়, এখানে তার কর ফাঁকি দেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। কর দিতে হবে কিনা এব্যাপারে তার পক্ষ থেকেই আদালতের সিদ্ধান্ত জানতে চাওয়া হয়েছিল। আদালতে সরকার যায়নি, প্রফেসর ইউনূস গিয়েছেন। কর বিভাগ কোনও পর্যায়ে বলেনি যে প্রফেসর ইউনূস কর ফাঁকি দিয়েছেন। এখানে কর ফাঁকি দেওয়ার কোনও প্রশ্ন উঠেনি। প্রশ্ন ছিল আইনের প্রয়োগযোগ্যতা নিয়ে। এখন প্রফেসর ইউনূস বিবেচনা করবেন তিনি কর পরিশোধ করবেন নাকি উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত চাইবেন। করের আইন যদি এক্ষেত্রে প্রয়োগযোগ্য না-হয় প্রফেসর ইউনূস তাহলে সে-টাকাটা জনহিতকর কাজে ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন। এই হলো কর নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার পেছনে তার উদ্দেশ্য, ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হবার জন্য নয়।
প্রশ্ন তোলা হয়েছে যে প্রফেসর ইউনূস ট্রাস্টের বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশ ভ্রমণে ব্যয় করেন। বিষয়টি মোটেই সত্য নয়। তার বিদেশ ভ্রমণের সকল ব্যয় আমন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বহন করে। শুধু তাই নয় প্রতি ভ্রমণে একজন অতিরিক্ত ব্যক্তিকে সফরসঙ্গী হিসেবে সঙ্গে নিয়ে যাবার ব্যয় আমন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বহন করে। প্রফেসর ইউনূসের বিদেশ ভ্রমণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনও ব্যয় তার কোনও ট্রাস্টকে বা তাকে বহন করতে হয় না। কখনও কখনও তাকে নিয়ে যাবার জন্য প্রাইভেট বিমান পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে টাকা খরচের চিন্তা তাকে কখনও করতে হয় না।