স্টাফ রিপোর্টার: আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করেছে। এজন্য দেশের জনগণ যতবারই ভোট দেয়ার সুযোগ পেয়েছে, ততবারই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার (৭ জুন) ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) আওয়ামী লীগ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। দেশে গণতন্ত্র বারবার হরণ করতে বিএনপি কাজ করেছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও পরে তার উত্তরসূরি খালেদা জিয়ার সমালোচনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’বিএনপি সব সময়ই অগণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করেছে।’ ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আয়োজন নিয়ে খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ’১৫ ফেব্রুয়ারি যে নির্বাচন করেছে, সেখানে দুই-তিন পার্সেন্ট ভোটও পড়ে নাই। কিন্তু ঘোষণা দিল ব্যাপক ভোট নিয়ে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী।’
বাংলাদেশের জনগণ এখন ভোটের বিষয়ে সচেতন জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘দেশের মানুষ এখন ভোটের বিষয়ে সচেতন। সেই সচেতনতা আওয়ামী লীগ তৈরি করেছে। বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার কেউ যদি কেড়ে নেয়, মানুষ তাদের ছেড়ে দেয় না। এই খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোট চুরি করেছিল বলেই দেশের মানুষ ফুঁসে উঠেছিল। এরপরই ৩০ মার্চ বাধ্য হয়েছিল পদত্যাগ করতে।
’ভোট ডাকাতি যারা করেছিল, এখন তাদের মুখে যখন ভোটের কথা শুনি আর গণতন্ত্রের কথা শুনি, মিলিটারি ডিকটেটরের পকেট থেকে বের হওয়া রাজনৈতিক দলের কাছে গণতন্ত্রের কথা শুনতে হয়।’
তিনি বলেন, ’২০০১ সালের যে নির্বাচন সেখানেও ব্যাপক কারচুপি করে আওয়ামী লীগকে হারানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে সব সময় জয়ী হয়েছে, জনগণ ভোট দিতে পারলে আওয়ামী লীগ কোনো দিন পরাজিত হয় নাই। আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে, ততবার জনগণের ভোটেই এসেছে, তার বাইরে কখনও ক্ষমতা দখল করে নাই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে তারা বলে ভোটারবিহীন। কে ভোটারবিহীন? ভোটারবিহীন তো ছিল খালেদা জিয়া, ভোটারবিহীন তো ছিল জিয়াউর রহমান। ভোটারবিহীন ছিল এরশাদ। এটা তারা ভুলে গেছে। তারা তো ভোটারবিহীন হিসেবেই ক্ষমতা দখল করেছে। আর খালেদা জিয়াকে এজন্য উপযুক্ত জবাব দিয়ে দিয়েছেন এ দেশের জনগণ।’
যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, ‘আজকে বিদ্যুৎ, আমি মাত্র ১৫০০ মেগাওয়াট পেয়েছিলাম ১৯৯৬ সালে, ৪ হাজার ৩০০ বাড়িয়েছিলাম। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে (২০০১) সেটা কমিয়ে ৩ হাজারে নামিয়ে এনেছিল, আমরা এরপর সেটা ২৫ হাজার পর্যন্ত করতে পেরেছি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেব, সেই বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম হয়েছি।’
তিনি করোনাভাইরাসকে দেশের অগ্রগতিতে বাধা হিসেবে উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনটা বছর চলাচল একেবারে বন্ধ, অর্থনীতি স্থবির, উন্নত দেশগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি পরিচালন ব্যয় পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। আর এরপর আসলো রাশিয়া-উইক্রেন যুদ্ধ। স্যাংশন অ্যান্টি স্যাংশন, প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়ে গেল।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি জিনিসের দাম এমন বেড়ে গেছে, সেটা কেনা, আনা, সেটা পরিবহন করা; আবার এই জাহাজে আসলো কেন, সেটা আসতে দেবে না, ভিড়তে দেবে না; ওই জাহাজে আসলো কেন সেটা ভিড়তে দেবে না। খালি দেশের ওপর স্যাংশন না, জাহাজের ওপরও স্যাংশন দিয়ে বসে আছে আমেরিকা। যার ফলে প্রত্যেকটা দেশে আজ মুদ্রাস্ফীতি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা জানেন যে ইউরোপ, আমেরিকা, লন্ডন সব জায়গায় বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যাবে না। শীতের সময় হিটার ব্যবহার করতে পারে না। একটা ঘরে সমস্ত পরিবারকে থাকতে হয়।
‘পানি ব্যবহার করা সীমিত করে দিয়েছে। আমাদের তো এখনও গাড়ি ধোয়, বাগানে পানি দেয়, যথেচ্ছাচার ব্যবহার করে। কিন্তু সেখানে করতে পারবে না।’ সরকারপ্রধান বলেন, ‘বাজারে গেলে তিনটার বেশি টম্যাটো কিনতে পারবে না। ৬টার বেশি ডিম কিনতে পারবে না, এক লিটারের বেশি তেল কিনতে পারবে না। সেই অবস্থা বিরাজমান সারা বিশ্বব্যাপী। তারপরও আমরা আমাদের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে পেরেছি।’