বাজেটে চলমান সংকট নিরসনের রূপরেখা নেই: ফখরুল

Print Friendly, PDF & Email

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারের মন্ত্রী বলেছে যে, চমৎকার বাজেট হয়েছে। অথচ আজকে নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া বলছে যে, সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি নেই। নিত্যপণ্যের দামের যে ঊর্ধ্বগতি, চলমান যে সংকট সেখান থেকে বেরিয়ে আসার কোনো রূপরেখা বাজেটে নেই। টাকা কোত্থেকে আসবে? কীভাবে আসবে সেটাও বলা নেই। এটাই হলো এই সরকারের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।

শুক্রবার (২ জুন) বিকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪২তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি)।

ফখরুল বলেন, ‘যারা ভিক্ষুক তাদেরকেও নাকি দুই হাজার টাকা করে আয়কর দিতে হবে। এভাবে মানুষকে নিঃস্ব করে দিয়ে ক্ষমতাসীনরা মেগা প্রজেক্টের মাধ্যমে নিজেদের উন্নয়ন করবে। আজকে চাল-ডাল-তেল-লবণ ও পিয়াজের দাম এমনভাবে বেড়েছে যে কঠিন অবস্থা। গরিব মানুষ বলছে সামনে কোরবানি, আমারও তো সাধ হয় যে, গরুর গোশত রান্না করব। কিন্তু আদা কিনবে কোত্থেকে? সুতরাং এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটাতে হবে। সেজন্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া দেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। সরকারকে বলব- অনেক হয়েছে আপনারা সরে যান। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। না হলে দেশের মানুষ জানে কীভাবে বিদায় করতে হয়।’

জিয়াউর রহমান প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘৪ বছরে তিনি দেশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিলেন। তিনি জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। আজকে আমি স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সবাইকে শ্রদ্ধা জানাতে চাই। কাউকে খাটো করতে চাই না। কিন্তু আজকে যেই ব্যক্তির স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হলো সেই ব্যক্তিকে খলনায়ক বানানোর চেষ্টা করা হয়। এজন্য খুবই কষ্ট লাগে। যতকিছুই করুক কিছুই আসে যায় না। জিয়াউর রহমানকে জনগণের হৃদয় থেকে মুছে দেয়া যাবে না।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘শহীদ জিয়ার যে সম্মোহনী শক্তি ছিল তা নতুন প্রজন্মের অনেকেই জানে না। তিনি ছিলেন ক্ষণজন্মা ও বিপ্লবী। তিনি সমাজকে বদলে দিতে চেয়েছিলেন। বেঁচে থাকলে অনেক আগেই বাংলাদেশকে উঁচু স্থানে নিয়ে যেতেন। যেমনটি সাবেক মার্কিন কূটনীতিক উইলিয়াম বি মাইলাম বলেছেন, ‘জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালে মারা না গিয়ে যদি ১৯৭৫ সালে মারা যেতেন তাহলে বাংলাদেশের ভাগ্যে কী ঘটতো আমি জানি না।’ এটা লাইবেরিয়ার মতো একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতো।’

মির্জা ফখরুল বলেন, জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে দেশের ক্রান্তিকাল তথা ঘোর সংকটে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি সিপাহীদেরকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। তিনি স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশকে নতুনভাবে বিনির্মাণ করতে হবে। তিনি মুক্তবাজার অর্থনীতির বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। সেজন্যই তিনি গ্রামেগঞ্জে, নদীতে-খালে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রত্যেক জেলায় জেলায় ঘুরেছেন। তিনি সংশ্লিষ্ট এলাকার সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নিতেন। এই হলেন জিয়াউর রহমান। গোটা বিশ্ব তাকে এমাজিং লিডার হিসেবে পরিচিতি দিয়েছিল। জিয়াউর রহমান সম্পর্কে অল্পসময়ে বলে শেষ করা যাবে না। আজকে যেই জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে তৈরি করেছিলেন। সেই জিয়াউর রহমানের নাম দেশের মানুষের মনে-মগজে গাঁথা থাকবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ক্ষমতাসীনরা সবসময় বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে ও বিপক্ষে কাজ করেছে। আজকে জিয়াউর রহমানের সেই ঘোষণার মতো বিদ্রোহ ঘোষণা করে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। দেশের কিছুই অবশিষ্ট নেই। সবকিছুই তারা ধ্বংস করেছে। গণতান্ত্রিক ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। সেজন্য আমাদেরকে লড়াই-সংগ্রাম করতে হচ্ছে। আগামীতেও লড়াই হবে। পেশাজীবীসহ সবাইকে আমি যার যার অবস্থান থেকে সোচ্চার হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাবো। দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে হলে এর বিকল্প নেই।

বিএসপিপি’র আহ্বায়ক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব কাদের গণি চৌধুরীর পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সিরাজউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ড. তাজমেরি এসএ ইসলাম, অধ্যাপক ডা. আব্দুল কুদ্দুস, ডা. একেএম আজিজুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি অধ্যাপক ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, আইনের অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন খান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ডা. রফিকুল ইসলাম, ঢাবি সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান, কৃষিবিদ গোলাম হাফিজ কেনেডি, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামসুল আলম সেলিম, অধ্যাপক ড. নূরুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম প্রমুখ।