ইউরোপার ৭ম শিরোপা জিতল সেভিয়া

Print Friendly, PDF & Email

স্পোর্টস ডেস্ক : এই না হলে ফাইনাল! নির্ধারিত ৯০ মিনিটের পর অতিরিক্ত সময়ের উত্তেজনাপূর্ণ লড়াইয়েও করা যায়নি শ্রেষ্ঠত্বের মীমাংসা, ম্যাচ সমতায় থাকে ১-১ গোলে। শেষ পর্যন্ত সেভিয়া ও এএস রোমার ইউরোপা লিগের ফাইনালের ভাগ্য নির্ধারণ করতে হলো টাইব্রেকারে। পেনাল্টি শুট আউটের সেই লড়াইয়েও অন্তহীন নাটক। প্রথমে গিয়ানলুকা মানচিনির পেনাল্টি ঠেকান কাতার বিশ্বকাপে মরক্কোর সেমিফাইনাল খেলার অন্যতম নায়ক গোলরক্ষক ইয়াসিন বুনু।

এরপর পোস্টে মেরে রোমাকে আরও পিছিয়ে দেন রজার আইবানেজ। পরে সেভিয়াকে শিরোপা জেতানোর সুযোগ আসে আর্জেন্টাইন তারকা গনসালো মনতিয়েলের। বিশ্বকাপে তাঁর পেনাল্টিই আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ নিশ্চিত করেছিল। কিন্তু আজ রাতে হয়ে গেল আরেক নাটক। পেনাল্টি শটটি পোস্টে মারেন মনতিয়েল। কিন্তু রোমা গোলরক্ষক আগে থেকে সরে যাওয়ায় ফের সুযোগ পান মনতিয়েল। এবার আর ভুল হয়নি। দারুণভাবে বল জালে জড়িয়ে ৪-১ গোলে সেভিয়ার শিরোপা নিশ্চিত করেন এই ডিফেন্ডার। এটি ইউরোপায় সেভিয়ার রেকর্ড ৭ম শিরোপা। এ নিয়ে সাতবার ফাইনাল খেলে প্রতিবারই জিতল তারা।

এর আগে গত বছরই উয়েফা কনফারেনস লিগের শিরোপা জিতে রোমার ১৪ বছরের শিরোপা খরা দূর করেন মরিনিও। উন্নতির ধারা অব্যাহত রেখে এবার ইউরোপা লিগের শিরোপা জেতার সুযোগ এসেছিল মরিনিওর সামনে। সে সঙ্গে এ জয়ে ইউরোপে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের পতাকাও সমুন্নত রখতে পারতেন ‘দ্য স্পেশাল ওয়ান’ খ্যাত এই কোচ। কিন্তু নিজের ৬ষ্ঠ ইউরোপিয়ান শিরোপাটি জিততে পারেননি এই পর্তুগিজ কোচ। সেভিয়ার কাছে শেষ পর্যন্ত হারতে হলো তাঁকে।

শিরোপা লড়াইয়ে মরিনিওর রোমার শুরুটা ছিল দারুণ। সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগের রক্ষণাত্মক খোলস থেকে বেরিয়ে আসে রোমা। ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকেই সেভিয়াকে চাপে রাখার চেষ্টা করে তারা। তবে শুধু আক্রমণ করতে গিয়ে নিজেদের উজাড় করে দেয়নি রোমের ক্লাবটি। রক্ষণকে যতটা সম্ভব সমুন্নত রেখেই আক্রমণ যাওয়ার চেষ্টা করছিল তারা। সেভিয়া যখন থিতু হতে সংগ্রাম করছিল, ততক্ষণে একাধিকবার গোলের লক্ষ্যে তাদের রক্ষণে হামলা চালায় রোমা। ১১ মিনিটে দারুণ এক গোল করে রোমাকে এগিয়ে দিতে পারতেন লিওনার্দো স্পিনাৎসোলা। কিন্তু ডি-বক্সের ভেতর আনমার্ক এই ইতালিয়ান ডিফেন্ডারের শট ঠেকিয়ে দেন সেভিয়া গোলরক্ষক।

গোল না পেলেও সেভিয়াকে বেশ চাপে রাখে রোমা। নিজেদের রক্ষণকে দৃঢ় রেখেই মূলত প্রতি-আক্রমণে জোর দিচ্ছিল তারা। রোমার জমাট রক্ষণ ও নিজেদের এলোমেলো ফুটবলের কারণে সেভিয়া তেমন কোনো সুযোগই তৈরি করতে পারছিল না। ম্যাচের প্রথম আধাঘণ্টায় সেভিয়া গোল দূরে থাক, গোলের জন্য কোনো শটই নিতে পারেনি।

৩২ মিনিটে নিজেদের প্রাপ্য গোলটা পেয়েই যায় রোমা। গোটা পুসকাস এরিনাকে জাগিয়ে তোলেন পাওলো দিবালা। গিয়ানলুকা মানচিনির দারুণ এক পাস থেকে বল পেয়ে লেগে থাকা ডিফেন্ডারের ফাঁদ এড়িয়ে ডি-বক্সের ভেতর থেকে অসাধারণ ফিনিশিংয়ে লক্ষ্যভেদ করেন দিবালা। এই গোলের সঙ্গে পুরো গ্যালারি যেন উল্লাসে ফেটে পড়ে। রোমা সমর্থকদের উৎসবের ধোঁয়ার রেশ মাঠেও দেখা যায়। গোল খেয়ে জেগে উঠার চেষ্টা করে সেভিয়া। এ সময় ম্যাচে উত্তেজনাও তৈরি হয়।

গোলের পর খেলা অনেকটা উন্মুক্ত হয়ে যায়। সেভিয়াও চেষ্টা করে সমতা ফেরানোর। ৪৩ মিনিটে কাছাকাছি গিয়ে গোল পায়নি সেভিয়া। ৪৪ মিনিটে দারুণ নৈপুণ্যে বল নিয়ে সেভিয়া রক্ষণে ঢুকে পড়েন দিবালা। এরপর কাটব্যাক করে বল বাড়ান পেলিগ্রিনির কাছে। কিন্তু সুবিধাজনক জায়গায় থেকেও গোল করতে পারেননি এই ইতালিয়ান তারকা। বিরতির আগে গোলের সুবর্ণ সুযোগ এসেছিল ইভান রাকিতিচের সামনে। যোগ করা সময়ে ডি-বক্সের বাইরে বল পেয়ে শট নেন রাকিতিচ। কিন্তু তাঁর শট ফিরে আসে পোস্টে প্রতিহত হয়ে। অল্পের জন্য সমতা ফেরাতে না পেরে হতাশা নিয়ে বিরতিতে যায় সেভিয়া। আর রোমা শিবিরে ছিল এগিয়ে থাকার আনন্দ।

বিরতির পর গোলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে সেভিয়া। চেষ্টা অবশ্য রোমাও কম করেনি। কিন্তু পিছিয়ে থাকা সেভিয়ার সঙ্গে বেশ সংগ্রাম করতে হচ্ছিল তাদের। এর মাঝে সেভিয়া দুই একবার কাছাকাছি গিয়েও গোলের দেখা পায়নি। তবে সেভিয়াকে শেষ পর্যন্ত গোল বঞ্চিত রাখা যায়নি। রোমা ডিফেন্সের ওপর ক্রমাগত চাপ তৈরি করে ঠিকই গোল করেছে তারা। জেসুস নাভাসের ক্রসে বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের জালেই বল জড়ান মানচিনি।

ম্যাচে সমতা ফেরার পর দুই দলই টেষ্টা করে এগিয়ে যাওয়ার। ৬২ মিনিটে রোমার আক্রমণ যেভাবে সেভিয়া গোলরক্ষক ঠেকিয়ে দিয়েছেন সেটি আশ্চর্যজনকই বটে। তবে ৭৬ মিনিটে রোমা ডি-বক্সের ভেতর সেভিয়ার এক খেলোয়াড় ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টি পায় সেভিয়া। পরে অবশ্য ভিএআরের সাহায্য নেওয়ার পর বদলে যায় সিদ্ধান্ত। এই যাত্রায় বেঁচে যায় রোমা। এরপর অবশ্য পেনাল্টির আবেদন করেছিল রোমাও। কিন্তু পেনাল্টি পায়নি তারাও। শেষ দিকে অবশ্য দুই দলই গোলের জন্য মরিয়া চেষ্টা করে। কিন্তু কেউ আর গোল পায়নি। ম্যাচ চলে যায় অতরিক্তি করা সময়ে।

অতিরিক্ত সময়েও দুই দল মরিয়া হয়ে গোলের চেষ্টা করেছে। কিন্তু কেউ কারও রক্ষণবাধা পেরোতে না পারায় শেষ পর্যন্ত লড়াই যায় টাইব্রেকারে। যেখানে বাজিমাত করে সেভিয়া। রোমাকে কাঁদিয়ে তারা জিতে নেয় শিরোপা।