মুডি’স রেটিংয়ে ঋণমান কমল বাংলাদেশের

Print Friendly, PDF & Email

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ছয় মাস আগে শুরু করা পর্যালোচনার তথ্যের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং সংস্থা মুডি’স বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়ে দিয়েছে; আগের বিএ৩ থেকে কমিয়ে বি১ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৩০ মে) এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, বাংলাদেশের স্বল্পমেয়াদি ইস্যুয়ার রেটিংয়ের ক্ষেত্রে আগের মত ‘নট প্রাইম’ মান বজায় রয়েছে।

অপরদিকে বাংলাদেশের জন্য পূর্বাভাস স্থিতিশীল রেখেছে তারা বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স। রেটিং সংস্থাটির মূল্যায়ন অনুযায়ী, বৈদেশিক লেনদেন ও তারল্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উচ্চমাত্রার ঝুঁকি রয়েছে। এরসঙ্গে চলমান সংকটকালে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাও দেখা গেছে। যে কারণে সর্বভৌম ঋণমানের রেটিং কমিয়ে বি১ করা হয়েছে।

এর আগে গত ১২ ডিসেম্বর দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের ঋণমান পর্যালোচনার সিদ্ধান্তের পর সাতটি বেসরকারি ব্যাংকের দীর্ঘ মেয়াদী ঋণমান বা রেটিং পুনর্মূল্যায়ণ করার ঘোষণা দিয়েছিল আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থা মুডি’স ইনভেস্টর সার্ভিস।

ওই সময় বলা হয়েছিল, দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের সর্বভৌম রেটিং ‘বিএ৩’ থেকে পুনর্মূল্যায়ন করতে এসব ব্যাংকের রেটিং পুনর্মূল্যায়ন করা হচ্ছে। রয়টার্স লিখেছে, মঙ্গলবারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চলমান সংকটের মধ্যে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও ডলারের চাহিদা-যোগানের ফারাক রয়েই গেছে এবং বিদেশি মুদ্রার মজুত কমে যাওয়ার বিষয়টি দেশের বৈদেশিক লেনেদেন চাপে থাকার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এতে করে আমদানি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং জ্বালানি সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

এদিকে ডলার সংকটের সময় আমদানি কমাতে সরকার কড়াকড়ির যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিল সেগুলোর পাশাপাশি নেওয়া আরও কিছু অপ্রচলিত বিধিবিধান এখনও পুরোপুরি তুলে নেয়নি। মুডি’স বলছে, আগের মতোই একাধিক বিনিময় হার এবং বেধে দেওয়া সুদের হারের সীমা বহাল থাকায় তা সাধারণ কার্যক্রমকে বিঘ্নিত করছে।

বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থাটি বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার অনুযায়ী যে অনুপাতে রাজস্ব আহরণ হওয়ার কথা ছিল সেটির চেয়ে অনেক কম রাজস্ব পাচ্ছে। এতে বিভিন্ন নীতি পদক্ষেপ নিতে সরকারের হাতে বিকল্প থাকছে না। এতে টাকার মান কমে যাওয়া এবং স্বল্পমেয়াদী অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদসহ অর্থ পরিশোধে সরকারকে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হচ্ছে, যা ঋণ গ্রহণের সক্ষমতাকে দুর্বল করার আভাস দিচ্ছে।

এমন প্রেক্ষাপটে মুডি’স মনে করছে, বিদেশি অর্থায়ন বৈদেশিক লেনদেন এবং আর্থিক সূচকগুলোর চাপ কমিয়ে আনতে ভূমিকা রাখবে। আর বিদেশি মুদ্রার মজুত কোভিড মহামারীর আগের চেয়ে কমই থাকবে। এছাড়া বেশি মাত্রায় নেওয়া ঋণ আর্থিক সক্ষমতাকে দুর্বল করবে।

এর কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি বলছে, আর্থিক খাতের যেসব সংস্কার কর্মসূচি নেয়া হয়েছে সেগুলো শেষ হতে অনেক সময় লেগে যাবে। একই সঙ্গে মুডি’স বাংলাদেশের স্থানীয় ও বিদেশি মুদ্রার সিলিং কমিয়ে বিএ২ ও বি১ এ নামিয়েছে, যা আগে ছিল যথাক্রমে বিএ১ ও বিএ৩।

মুডি’স এর মূল্যায়নে বাংলাদেশের বহি:বাণিজ্যের অবস্থান মহামারীকালের আগের চেয়ে দুর্বল থাকবে। তবে বিদেশি ঋণ ও অর্থায়ন বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমা ঠেকাবে এবং ২০২৪ সালের জুনের দিকে গিয়ে স্থিতিশীল হবে। অপরদিকে রিজার্ভের পরিমাণ মহামারীকালের আগের অবস্থান যেতে আরও দুই থেকে তিন বছর লাগবে বলে মনে করছে সংস্থাটি।