অর্থনৈতিক রিপোর্টার: দেশে বর্তমানে ৩৮টি সেবার বিপরীতে রিটার্ন জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। তবে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আরো ছয়টি সেবার ওপর রিটার্ন জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করতে যাচ্ছে সরকার। এতে মোট ৪৪টি সেবার বিপরীতে রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
নতুন যে ছয় ধরনের সেবায় রিটার্ন জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে–স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি ও কার্টিজ পেপারের ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসেবে নিবন্ধন, লাইসেন্স বা তালিকাভুক্তি করতে এবং বহাল রাখতে; ভূমি, ভবন এবং অ্যাপার্টমেন্ট লিজ রেজিস্ট্রেশনকালে; সকল পৌরসভায় ১০ লাখ টাকা মূল্যের জমি বিক্রয়, হস্তান্তর বা লিজ রেজিস্ট্রেশনকালে; ট্রাস্ট, ফান্ড, ফাউন্ডেশন, এনজিও, মাইক্রোক্রেডিট অর্গানাইজেশন, সোসাইটি এবং সমবায়ের ব্যাংক হিসাব খুলতে ও চালু রাখতে; কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক সিটি করপোরেশন এলাকায় বাড়ি ভাড়া বা লিজ গ্রহণকালে বাড়ির মালিকের এবং কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক পণ্য বা সেবা সরবরাহ গ্রহণকালে সরবরাহকারীর বা সেবা প্রদানকারীর ক্ষেত্রে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘রাজস্ব আদায়ের দিক দিয়ে বাংলাদেশে ভ্যাটের অবস্থান শীর্ষে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে আয়কর। অথচ উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে আয়কর খাতের অবস্থান থাকে সবার ওপরে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে চাপ রয়েছে। সুতরাং আয়কর খাতে রাজস্ব আদায় ক্রমান্বয়ে বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। তবে এমন কোনো পদক্ষেপ সরকার নেবে না, যাতে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ তৈরি হয়।’
মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় কর আহরণের ক্ষেত্রে তলানিতে থাকা দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। আইএমএফ তাই ঋণ দেওয়ার শর্ত হিসেবে কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর লক্ষ্য দিয়েছে। বর্তমানে দেশে কর-জিডিপির অনুপাত ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাটির শর্ত মোতাবেক ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে এনবিআরকে সে অনুপাত ৯ দশমিক ৫ শতাংশ করতে হবে। সরকার সে লক্ষ্যেই কাজ করছে। আয়কর থেকে আগামী তিন অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এরই মধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আরও কিছু সংস্কার ও পদক্ষেপের বিষয়েও আইএমএফকে জানিয়েছে এনবিআর। গত কয়েক বছর রাজস্ব আহরণে ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি রয়েছে। তাই আইএমএফের প্রোগ্রামের আওতায় বাড়তি রাজস্ব আহরণের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা এনবিআর কিছু সংস্কার পদক্ষেপ নিলেই পূরণ করা সম্ভব। আয়কর থেকে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে প্রাথমিক কাঠামো দাঁড় করানো হয়েছে বলেও আইএমএফকে জানিয়েছে এনবিআর। এর মধ্যে রয়েছে ই-পেমেন্ট, ই-রিটার্ন ফিলিং, ই-টিডিএস, ই-অফিস ম্যানেজমেন্ট ও ই-টিআইএন সিস্টেম।
রিটার্ন স্লিপ জমা দেয়ার ৩৮ সেবার মধ্যে রয়েছে– ৫ লাখ টাকার বেশি ব্যাংকঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে; কোম্পানি পরিচালক পদ পেতে; আমদানি-রপ্তানি সনদ নিতে; ব্যবসা শুরুর ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ ও নবায়নকালে; সমবায় সমিতির লাইসেন্স নিতে; বীমা কোম্পানির সার্ভেয়ার হিসেবে নিবন্ধন পেতে; ১০ লাখ টাকার বেশি মূল্যের জমি-ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রিকালে; ক্রেডিট কার্ড নিতে; পেশাজীবী সংগঠনের (চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, হিসাববিদ, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, ইঞ্জিনিয়ার, স্থপতি, সার্ভেয়ার) সদস্যপদ পেতে; কাজির সনদ গ্রহণ করতে; বাণিজ্য সংগঠনের সদস্যপদ পেতে; ড্রাগ লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র ও বিএসটিআইয়ের সনদ পেতে; বাণিজ্যিক ও শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাস সংযোগ অথবা সিটি করপোরেশন এলাকায় আবাসিক গ্যাস সংযোগ পেতে;
নৌযানের সার্ভে সনদ নিতে; ইটভাটা চালু করতে; বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে; কোম্পানির এজেন্সি বা ডিস্ট্রিবিউটরশিপ পেতে; আগ্নেয়াস্ত্র সনদ পেতে; আমদানির এলসি খুলতে; ৫ লাখ টাকার বেশি ডাকঘর সঞ্চয়পত্র ও ৫ লাখ টাকার বেশি অন্য সঞ্চয়পত্র কিনতে; ব্যাংক হিসাব খুলতে; উপজেলা, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে; যৌথ মালিকানাধীন ব্যবসায়িক অংশীদার হলে; বীমা কোম্পানির এজেন্সি সনদ নবায়ন করতে; মোটরসাইকেল ও সিএনজি অটো ছাড়া অন্য যানবাহনের মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়নকালে; বিদেশি অনুদান গ্রহণকারী এনজিও বা ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের সনদ নিতে; আমদানি-রপ্তানি পণ্যের বিল অব এন্ট্রি জমা দিতে; অভিজাত ক্লাবের সদস্যপদ পেতে; বাড়ির নকশা অনুমোদনে; সরকারি-বেসরকারি দরপত্র জমা দিতে; এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা গ্রহণকালে এবং ১৬ হাজার টাকার বেশি মূল বেতনভোগী সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন তোলার ক্ষেত্রে।