স্টাফ রিপোর্টার : শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক মানুষ গঠনে এবং পরীক্ষা ভীতি দূর করতে নতুন কারিকুলাম প্রণয়ন করা হয়েছে। পরীক্ষা ভীতির বদলে নতুন চিন্তার প্রসার ঘটাতে এই কার্যক্রম করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ মে) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইউজিসির সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, ‘চলমান মেগা প্রকল্প শেষ হলে শিক্ষায় আগামী দিনের মেগা প্রকল্প হবে। শিক্ষাখাতে মোট বাজেটের ৬ ভাগ দেয়ার তাগিদ রয়েছে।’
ডা. দীপু মনি বলেন, ‘শিক্ষায় যদি কারিকুলাম ঠিক না থাকে, তাহলে শুধু বাজেট বৃদ্ধি করে লাভ হয় না। শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া আগের থেকে অনেক স্বচ্ছ এবং পাঠদান আগের থেকে দক্ষ করা হচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে আমাদের দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করার জন্য কারিকুলাম তৈরি করতে হবে।’
ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি। ইউজিসি’র সাবেক চেয়ারম্যান ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী অনুষ্ঠানে সম্মাননীয় অতিথি ছিলেন। অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম-এর উপাচার্য ড. অনুপম সেন আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে উদ্ভাবন ও গবেষণা কার্যক্রম উৎসাহিত করতে গবেষণাখাতে বাজেট বরাদ্দ দিগুণ করা হয়েছে। শিক্ষাখাতের সার্বিক বাজেটও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি শিক্ষার বাজেট বৃদ্ধির চেয়ে বরাদ্দকৃত অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করাও জরুরি বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন। ভবিষ্যতে শিক্ষার উন্নয়নে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হবে বলে তিনি বক্তব্যে উল্লেখ করেন।’
উচ্চশিক্ষার মানোন্ননে তিনি সক্ষমতার অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি না করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আহবান জানান। তিনি বিশ্বায়ন ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিজ্ঞান, তথ্য ও প্রযুক্তিভিত্তিক উচ্চশিক্ষা বিস্তারের ওপর জোর দেন। অন্যথায়, দ্রুত পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক শ্রমবাজারের উপযোগী মানবসম্পদ গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। তিনি পরিবর্তনের সাথে সমন্বয় করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পুরোনো কোর্স কারিকুলাম বদলে আউটকাম বেইজড এডুকেশন ক্যারিকুলাম অনুসরণের আহবান জানান।
শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী তার বক্তব্যে ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়নের সময় অবকাঠামোগত উন্নয়নের সাথে সাথে একাডেমিক লক্ষ্য সুস্পস্ট করার আহবান জানান। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে তিনি ইউজিসিকে আহবান জানান। এ ছাড়াও, তিনি ইউজিসিকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী গ্র্যাজুয়েট ও কোর্স অনুমোদনের পরামর্শ দেন।
ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৪৪ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে, যা পৃথিবীর অনেক দেশের মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। এ বিশাল সংখ্যক কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে আধুনিক শ্রমবাজার উপযোগী দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে তিনি জানান। দেশে বর্তমানে পাবলিক ও প্রাইভেট ব্যবস্থাপনায় ১৬৮টি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে। এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৪৪ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক বিষয়ে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুশাসন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কমিশনের মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ইউজিসি সদস্য ও সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক প্রফেসর ড. মো. আবু তাহের। ইউজিসি’র বর্তমান ও সাবেক সদস্য, পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি’র বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী অনুষ্ঠানে অংশ নেন।