করোনাকালে মারাত্মক ক্ষতির শিকার হয়েছে শিক্ষাব্যবস্থা

Print Friendly, PDF & Email

স্টাফ রিপোর্টার : করোনাকালীন সময়ে বন্ধের কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব শ্রেণির সব বিষয়ে শিক্ষার্থীদের শিখন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সবচেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (১৬ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘লার্নিং লস’ নিয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সার্বিক সহযোগিতায় এই গবেষণা কাজ সম্পন্ন করা হয়। গবেষণা কাজে ১৮ হাজার ৮৩৮ জন প্রাথমিক শিক্ষার্থীর ওপর অভীক্ষা পরিচালিত হয়।

গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গবেষণা প্রতিবেদনের ওপর মতামত দেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক করারের উপদেষ্টা ও গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অ্যাম্বাসেডর চার্লিস হোয়াইটলি, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোলেমান খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহমদ, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়ত।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবং বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (প্রাথমিক) ড. এ কে এম রেজাউল হাসান।

শিক্ষার্থীদের শিখনক্ষতি পরিমাপ করার জন্য ২০২২ সালের লার্নিং লস স্টাডি-২০২২ এবং কারিকুলাম ইফেক্টিভনেস স্টাডি-২০২২ গবেষণা দুটির তথ্যের আলোকে শিক্ষার্থীর শিখন পারদর্শিতার তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

শ্রেণি ও বিষয়ভিত্তিক শিখন ক্ষতি

করোনাকালীন বিদ্যালয় বন্ধের কারণে সব শ্রেণি ও বিষয়ে শিক্ষার্থীদের শিখন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সামগ্রিকভাবে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ পরিমাণে ক্ষতি হয়েছে এবং দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে কম।

বিষয়ভিত্তিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, তুলনামূলক বেশি শিখনক্ষতি ঘটেছে পঞ্চম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ে শিখন ঘাটতি ১৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ। তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় ১৫ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং পঞ্চম শ্রেণির ইংরেজিতে ১২ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

অন্যদিকে সর্বনিম্ন শিখনক্ষতি দেখা গেছে, দ্বিতীয় শ্রেণির গণিতে শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং তৃতীয় শ্রেণির গণিতে শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ। দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ইংরেজিতে, তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ে এবং চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বাংলা বিষয়ে তুলনামূলকভাবে কম শিখনক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ব্যতিক্রমীভাবে বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ে বেশি ভালো করেছে।

এছাড়া, সব বিষয় ও শ্রেণির শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বরের মধ্যে একটি অসমতা দেখা গেছে বিশেষ করে তৃতীয় ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর মধ্যে।

সুপারিশ

লার্নিং লস স্টাডি-২০২২ অনুযায়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিখনক্ষতি এবং শিখনঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে যা অনতিবিলম্বে দূর করা আবশ্যক। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে প্রাথমিক স্তরের করোনাকালীন শিক্ষার্থীর শিখনক্ষতি ও শিখনঘাটতি দূরীকরণের জন্য নিচের পদক্ষেপ গ্রহণ করার সুপারিশ করা করা হয়।

১. একটি চাহিদাভিত্তিক ও বাস্তবায়নযোগ্য ‘প্রতিকারমূলক শিখন প্যাকেজ’ তৈরি ও বাস্তবায়ন। এ সংক্রান্ত পরিকল্পনা তৈরি এবং তা বাস্তবায়ন কর্মকাণ্ডে অগ্রাধিকার দিতে হবে বাংলা, গণিত ও ইংরেজি বিষয়ের আবশ্যকীয় শিখন যোগ্যতা। এক্ষেত্রে ২০২০ এবং ২০২১ সালে যেসব শিক্ষার্থী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল তাদের পুরো প্রাথমিক শিক্ষা জীবনকে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

২. এই প্রতিকারমূলক শিখন প্যাকেজ বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষকদের নতুন শিখন-শেখানো পদ্ধতি ও কৌশলের ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান আবশ্যক। এজন্য একটি শিক্ষক প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল তৈরি করে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করতে হবে।

৩. করোনাকালীন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যেই ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছে। তাদের শিখনক্ষতি ও শিখনঘাটতির বিষয়টি বিবেচনা করে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্যও এরূপ একটি গবেষণা পরিচালনা এবং তথ্যভিত্তিক প্রতিকারমূলক শিখন কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে।

৪. শিখন পুনরুদ্ধার কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরও ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের শিখনঘাটতি চিহ্নিতকরণে বিদ্যালয়ভিত্তিক চলমান মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে চিহ্নিত শিখনঘাটতি পূরণে প্রস্তুতকৃত প্রতিকারমূলক শিখন প্যাকেজ বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।