আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গরম আরো বাড়বে এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা নতুন রেকর্ড ছোঁবে। আসন্ন এল নিনোকে ঘিরে এমন আশঙ্কাই করছে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডাব্লিউএমও)। জাতিসংঘের এই সংস্থা বুধবার (৩ মে) তাপমাত্রা বৃদ্ধির আশঙ্কার কথা জানায়।
ডাব্লিউএমওর হিসাব অনুসারে, আগামী জুলাইয়ের শেষ নাগাদ এল নিনো সৃষ্টি হবে, এমন সম্ভাবনা ৬০ শতাংশ এবং আগামী সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ ওই আবহাওয়াচক্র সৃষ্টির সম্ভাবনা ৮০ শতাংশ। এল নিনোর প্রভাবে কী ঘটে, তা এক বাক্যে তুলে ধরতে গিয়ে ডাব্লিউএমওর আঞ্চলিক আবহাওয়া পূর্বাভাস বিভাগের প্রধান উইলফ্রান মুফুমা ওকিয়া গতকাল জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘এতে বিশ্বব্যাপী আবহাওয়া ও জলবায়ুর ধরনে পরিবর্তন আসবে।’
আমাদের বাসগ্রহের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার একটি অংশ এল নিনো। সাধারণত প্রতি দুই থেকে সাত বছর পর পর দেখা দেয় এল নিনো এবং এটির স্থায়িত্ব ৯ থেকে ১২ মাস। পর পর দুটি এল নিনোর প্রভাব কখনো একই রকম হয় না। এল নিনোর প্রভাব কেমন হবে তা আংশিকভাবে নির্ভর করে এর আগমনকাল অর্থাৎ বছরের কোন সময় এটির আগমন ঘটছে, তার ওপর।
এল নিনোর প্রভাবে সাধারণত বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বাড়ে, পৃথিবীর কোনো কোনো অংশে খরা দেখা দেয়, আবার অন্যান্য অংশে ভারি বৃষ্টিপাত ঘটে। এল নিনোর ঠিক উল্টোটা হলো লা নিনা, যেটার প্রভাবে বাড়তে পারে শীত। সর্বশেষ এল নিনো সৃষ্টি হয়েছিল ২০১৮-১৯ সালে। আবহাওয়াবিদদের মতে, সেবারের এল নিনো ছিল সবচেয়ে দুর্বল। এর আগেরবার ২০১৪ ও ২০১৬ সালের মাঝামাঝি যে এল নিনোটি সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাকে বিবেচনা করা হয় সবচেয়ে শক্তিশালী হিসেবে।
ডাব্লিউএমওর তথ্য মতে, ২০১৬ সাল ছিল আগের বছরগুলোর তুলনায় সবচেয়ে উষ্ণ বছর। সেবার সবচেয়ে শক্তিশালী এল নিনোর প্রভাব তো ছিলই, সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল মানবসৃষ্ট কারণে নির্গত গ্রিনহাউসজনিত বাড়তি তাপমাত্রা। জাতিসংঘ আরো জানায়, গত আট বছরে রেকর্ড তাপমাত্রা দেখেছে বিশ্ববাসী। এর মধ্যে প্রায় চার বছরজুড়ে লা নিনার শীতলীকরণ প্রভাব সত্ত্বেও ওই তাপমাত্রায় ভুগতে হয়েছে মানুষকে।
ডাব্লিউএমও প্রধান পেত্তেরি তালাস বলেন, ‘বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির পথে অস্থায়ী বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল লা নিনো। এবার বিশ্বের উচিত এল নিনোর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া।’ কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আসন্ন এল নিনোর প্রভাবে বৈশ্বিক তাপমাত্রা আগের তুলনায় আরো বাড়বে এবং সেই তাপমাত্রা নতুন রেকর্ড গড়বে। যেহেতু এল নিনো সৃষ্টির এক বছরের মাথায় এর প্রভাব দৃশ্যমান হয়, সেই হিসাবে ২০২৪ সালে পৃথিবীবাসী ওই রেকর্ড তাপমাত্রায় ভুগতে চলেছে।
ডাব্লিউএমওর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ওকিয়া বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি সামনের দুই বছর বৈশ্বিক তাপমাত্রা মারাত্মক বাড়বে।’ সংস্থার প্রধান তালাস অবশ্য কিছু ইতিবাচক প্রভাবের সম্ভাবনার কথাও বলেন। ধারণা করা হচ্ছে, এবারের এল নিনোয় হর্ন অব আফ্রিকা খরা থেকে বেঁচে যাবে, হয়তো রেহাই পাবে লা নিনো সংশ্লিষ্ট কিছু প্রভাব থেকেও। সূত্র : এএফপি