আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ক্ষমতার দ্বন্দ্বে গত ১৫ এপ্রিল থেকে সুদানে সশস্ত্র সংঘাত চলছে। সেনাবাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনীর মধ্যে এ সংঘাতে দেশটিতে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সুদানে বসবাসরত বিভিন্ন দেশের মানুষ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় দিন পার করছে। এর মধ্যেই সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নিতে কাজ করছে। বিশেষ তথ্য হলো, শুধু নিজেদেরই নয়, অন্যান্য দেশের নাগরিকদেরও তারা উদ্ধার করছে।
গত ২৩ এপ্রিল বাংলাদেশিসহ ৯১ জনকে উদ্ধারের কথা জানিয়েছিল সৌদি আরব। শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) টুইটারে বাংলাদেশসহ ১০টি দেশের নাগরিকদের উদ্ধার করেছে বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। উদ্ধারের পর তাদের সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও একই টুইট পোস্টে জানানো হয়।
সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের টুইটার বিবৃতিতে বলেছে, রাজতন্ত্রের নেতৃবৃন্দের নির্দেশে চলমান উদ্ধার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে শুক্রবার সুদান প্রজাতন্ত্র থেকে উদ্ধারকৃতরা জেদ্দায় এসে পৌঁছেছেন। তাদের মধ্যে যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা, নাইজার, বাংলাদেশ, লিবিয়া, কানাডা এবং গিনির ৫২ জন নাগরিক রয়েছেন। তাদের আল জুবাইল জাহাজে করে নিয়ে আসা হয়েছে। এখন উদ্ধারকৃতদের নিজ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত সৌদি আরব সুদান থেকে ২ হাজার ৭৯৬ জনকে উদ্ধার করেছে। এরমধ্যে সৌদির নাগরিক রয়েছেন ১১৯ জন। আর বাকি ২ হাজার ৬৭৭ জন ৭৮টি ভিন্ন দেশের নাগরিক। এদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সৌদি আরব যে বাংলাদেশিদের উদ্ধার করেছে, তাদের আগামী ২ মে খার্তুম থেকে নিয়ে আসা হবে। সৌদি আরব হয়েই তারা নিজ দেশে ফিরবেন।
এ ছাড়া সুদান থেকে ফেরার জন্য প্রায় ৭০০ জন বাংলাদেশি নাগরিক নিবন্ধন করেছেন। তাদের ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করছে সরকার। এ লক্ষ্যে সৌদি আরবের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। সৌদি আরবও এ বিষয়ে সহায়তা দিতে প্রস্তুত।
জানা গেছে, পোর্ট সুদান থেকে জাহাজে করে সৌদি আরবে বাংলাদেশিদের আনা হবে। সৌদি থেকে নিয়মিত বা বিশেষ ফ্লাইটে বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের।
গত ১৫ এপ্রিল সুদানের সেনাবাহিনী ও প্যারামিলিটারি র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের (আরএসএফ) মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। দুই বাহিনীর লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত দেশটিতে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৫০০ জন। এছাড়া আহত হয়েছেন ৪ হাজারেরও বেশি মানুষ। সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে বর্তমানে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতির কথা বলা হলেও দুই বাহিনী একে-অপরের ওপর হামলা চালিয়েছে।
সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে খার্তুমের বাংলাদেশ দূতাবাস আক্রান্ত হয়। একইসঙ্গে সেখানকার বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের বাসায়ও গুলির ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ জাজিরা প্রদেশের মাদানি শহরে অবস্থান করছেন। সেখান থেকেই তিনি নিজ দেশের নাগরিকদের সরিয়ে নিতে কাজ করছেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সুদানের সংঘাতময় পরিস্থিতিতে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি হামলা ও লুটপাটের শিকার হয়েছেন। অনেকেই অর্থকড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন।