ডায়াবেটিস রোগীর কাঁধব্যথার চিকিৎসা

Print Friendly, PDF & Email

লাইফস্টাইল ডেস্ক : ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বয়স্ক রোগীরা নানা ধরনের ব্যথায় ভুগে থাকেন। তবে সবচেয়ে বেশি রোগী ভুগে থাকেন কাঁধের ব্যথায়। এ ব্যথা হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে অ্যাডহেসিভ ক্যাপসুলাইটিস, যা পরবর্তী সময় কাঁধের জয়েন্ট শক্ত করে ফেলে আর এ কারণে রোগী ধীরে ধীরে হাত ওপরে তুলতে অক্ষম হয়ে পড়ে। পিঠের দিকে নিতে পারে না, জামা-কাপড় পরতে পারে না, এমনকি মাথা আঁচড়াতেও সক্ষম হয় না। মেডিক্যালের পরিভাষায় এ রোগের নাম ফ্রোজেন সোল্ডার বা কাঁধের ব্যথা।

রোগের কারণ: এটি অনেকগুলো কারণে হতে পারে। যেমন- হাত দিয়ে ভারী কিছু তুলতে গিয়ে একটু ব্যথা পেয়েছেন কিন্তু তখন ততটা গুরুত্ব দেননি। পরবর্তীকালে অর্থাৎ বয়স বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিচ্ছে কাঁধের চরম ব্যথা এবং পাশাপাশি কাঁধের মুভমেন্ট কমে যাচ্ছে।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, রোগীর সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস বা ঘাড়ের ক্ষয় রোগ আছে, আর ফলে ঘাড় থেকে হাতে ব্যথা চলে আসে এবং এ ব্যথার কারণে রোগী হাতের নড়াচড়া কমিয়ে দেয় এবং ক্রমে জয়েন্টটি শক্ত হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ভ্রমণের সময় বাসে কিংবা গাড়িতে যাত্রাকালীন এক বড় ধরনের ব্রেক করা হলে যাত্রী তার ব্যক্তিগত সাপোর্টের জন্য হাত দিয়ে শক্ত করে গাড়ির হাতল ধরে থাকে এবং ব্যথা পায়, যা পরবর্তী সময় কাঁধব্যথার কারণ হয়ে থাকে।

এ ছাড়াও বয়স চল্লিশের বেশি হয়ে গেলে যেমন আমাদের ডিজেনারেটিভ প্রবলেম শুরু হয়, তেমনি জয়েন্টের অভ্যন্তরীণ সাইনোভিয়াল ফুইড কমে যেতে থাকে। তার ফলে কাঁধে ব্যথা হতে পারে।

রোগ নির্ণয়: এ ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে রোগীর ইতিহাস জানা খুবই জরুরি। পাশাপাশি আক্রান্ত কাঁধের এক্স-রে করা প্রয়োজন পড়ে।

করণীয়: এ রোগটি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে বেশি হয়ে থাকে। তাই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ব্যথানাশক ওষুধ, যথাসম্ভব পরিহার করা উচিত। তবে মাংসপেশি রিলাক্স করার জন্য মাসল রিলাক্সেন জাতীয় ওষুধের প্রয়োজন পড়ে। পাশাপাশি রোগীর সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন সঠিক ও সময় উপযোগী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা। এ রোগটি সঠিকভাবে চিকিৎসা না হলে রোগীর কাঁধের মাংসপেশি ক্রমে শুকিয়ে যায়, দুর্বল হয়ে যায় এবং কিছু মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায়। ফলে এমন সময় রোগী হাত তুলতেই পারে না। এমতাবস্থায় রোগী ও রোগীর পরিবারের লোকজন খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়েন।

এ রোগের চিকিৎসায় কিছু ইলেকট্রো থেরাপিউটিক এজেন্ট, যেমন- আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, মাইক্রোওয়েভ ডায়াথেরাপি ও ম্যানুয়াল থেরাপির মধ্যে স্লোল্ডার মোবিলাইজেশন এক্সারসাইজ ও ম্যানুপুলেশন থেরাপি খুবই উপকারী। পাশাপাশি রোগীকে কিছু এক্সারসাইজ করতে হয়। যেমন- পেন্ডুুলাম এক্সারসাইজ; ওয়াল কাম্বিং এক্সারসাইজ ও স্লোডার রোটেশন এক্সারসাইজ ইত্যাদি।

লেখক: ডা. এম ইয়াছিন আলী, চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল