লাইফস্টাইল ডেস্ক : অস্বাস্থ্যকর এবং বিশৃঙ্ক্ষল জীবনযাপনের কারণে আমাদের লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আমরা বেশিরভাগই খাবারের কোনো নির্দিষ্ট সময় কিংবা রুটিন মেনে চলি না, শরীরচর্চার প্রসঙ্গ এলে নানা অজুহাতে এড়িয়ে যাই। ফলস্বরূপ লিভারে চর্বি জমতে থাকে। এই অতিরিক্ত চর্বি জমা হওয়াকে ফ্যাটি লিভার বলা হয়।
ফ্যাটি লিভার দুই ধরনের হয়। অ্যালকোহলযুক্ত ফ্যাটি লিভার, অন্যটি অ্যালকোহলমুক্ত ফ্যাটি লিভার। প্রচুর অ্যালকোহল পান করলে লিভারে চর্বি জমা হতে পারে। এটি হলো অ্যালকোহলযুক্ত ফ্যাটি লিভারের কারণ। অ্যালকোহলমুক্ত ফ্যাটি লিভার অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, স্থূলতা বা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের কারণে হয়। স্ট্রেস এখানে আরেকটি কারণ যা লিভারে চর্বি জমা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনার মাধ্যমে ফ্যাটি লিভার রোধ করা সম্ভব। ভারতীয় পুষ্টিবিদ খুশবু জৈন তিব্রেওয়ালা সম্প্রতি ‘দ্য ফ্যাটি লিভার গাইড’ প্রকাশ করেছেন। এতে আছে লিভার ভালো রাখার জন্য সমস্ত তথ্য, যা ফ্যাটি লিভারকে প্রতিহত করতে সাহায্য করতে পারে। সেখান থেকে জেনে নিন ফ্যাটি লিভার থেকে বাঁচতে কোন খাবারগুলো খাবেন-
দুপুর ও রাতের খাবারে ৫০% শাক-সবজি থাকা উচিত
সকাল ও দুপুরের খাবারে ৫০% শাক-সবজি রাখার কথা বলছেন এই পুষ্টিবিদ। এতে থাকতে পারে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি। সালাদ, তরকারি, ভাজা, স্যুপ, চাটনি, ল্যাকটো-ফার্মেন্টেড সবজি, ডাল এবং রুটিতে এসব শাক-সবজি রাখতে পারেন।
প্রতিদিন কিছু ফার্মেন্টেড ফুড
ফার্মেন্টেড ফুড বা গাঁজানো খাবার হজমের জন্য সহায়ক। এটি শরীরের পুষ্টি শোষণ করার ক্ষমতাও উন্নত করে। এ ধরনের খাবার অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। বার বার খাবারের ইচ্ছা কমিয়ে দেয়। তাই প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় এ ধরনের একটি খাবার রাখুন।
হালকা গরম পানি ও লেবুর রস দিয়ে দিন শুরু করুন
লেবুতে এমন অ্যাসিড রয়েছে যা পাকস্থলীতে হজমের তরল নিঃসরণকে উদ্দীপিত করে। লেবুতে ফ্ল্যাভোনয়েড রয়েছে যা অক্সিডেটিভ ক্ষতি কমায়। এদিকে হালকা গরম পানি পান করলে তা খাবার দ্রুত ভাঙতে সাহায্য করে। এছাড়াও হালকা গরম পানি কোষ্ঠকাঠিন্য এবং টক্সিন দূর করতে সহায়তা করে।
বেশি ফাইবার খান
ফাইবার বেশি খেলে তা অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটা উন্নত করে যা লিভারের ক্ষতি এবং প্রদাহ কমায়। এ জাতীয় খাবার নিয়মিত খাওয়ার ফলে লিভারের অতিরিক্ত চর্বি দ্রুত কমে আসে। তাই প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় অবশ্যই ফাইবারযুক্ত খাবার রাখবেন।
বেকড খাবার বাদ দিন
বেকড খাবার যেমন ব্রেড, বিস্কুট, কেক ইত্যাদি প্রতিদিনের খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। এ ধরনের খাবার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রার বৃদ্ধি ঘটায়, যার ফলে লিভারে চর্বি জমা হয়।
কাঁচা রসুন খান
রসুনে অ্যালিসিন নামক একটি যৌগ থাকে যা লিভারের প্রদাহ কমায়। প্রতিদিন প্রায় ১-৩ গ্রাম কাঁচা রসুন খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে ফ্যাটি লিভার থেকে রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি আরও অনেক উপকার পাবেন।
ক্রুসিফেরাস সবজি খান
ফুলকপি, ব্রকলি, বাঁধাকপি, ব্রাসেল স্প্রাউট, বোকচয়, কলার্ড গ্রিনস, চাইনিজ বাঁধাকপির মতো ক্রুসিফেরাস সবজি রাখতে পারেন প্রতিদিনের খাবারে। এ ধরনের খাবারে সালফার যৌগ থাকে যা লিভারে ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এগুলিতে ‘ইন্ডোল’ নামক একটি যৌগ রয়েছে যা লিভারে প্রদাহ কমাতে পরিচিত।
২-৩ লিটার পানি পান করুন
পর্যাপ্ত পানি পান করার অভ্যাস টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। এটি হজম প্রক্রিয়া সহজ করে। সেইসঙ্গে লিভার ও কিডনির উপর থেকে বোঝা কমায়। আপনার যদি শুধু পানি খেতে ভালো না লাগে তবে এর পাশাপাশি কিছু তরলজাতীয় স্বাস্থ্যকর পানীয়ও যোগ করতে পারেন। যেমন বিভিন্ন ফলের রস, ডাবের পানি, ভেষজ চা ইত্যাদি।
ধনিয়া পাতার ব্যবহার বাড়ান
ধনিয়া পাতা হজমের রস নিঃসরণকে উদ্দীপিত করে এবং টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে। ধনিয়া দীর্ঘকাল ধরে লিভারের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
বেশি করে মটরশুঁটি, সবুজ শাক, ফল এবং বাদাম খান
এ ধরনের খাবার ফাইবার সমৃদ্ধ। সেইসঙ্গে এতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ এবং ভিটামিন যা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তাই প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় এ ধরনের খাবার যোগ করুন। এতে ফ্যাটি লিভার থেকে রক্ষা পাওয়া সহজ হবে।