ঈদের ছুটিতে নেতা–কর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

Print Friendly, PDF & Email

স্টাফ রিপোর্টার : সম্প্রতি বিভিন্ন মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, কেউ যাতে নাশকতা করতে না পারে, এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। যারা নাশকতা করবে, তাদের সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। বুধবার (১৯ এপ্রিল) ধানমন্ডিতে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলীয় নেতাদের সঙ্গে ভিডিও কলে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এমন নির্দেশনা দেন।

বুধবার সকালে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে যৌথ সভা করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এতে সভাপতিত্ব করেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বৈঠক শেষে তিনি দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেন। পরে দলীয় সভাপতি উপস্থিত নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিডিও কলে মতবিনিময় করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপকে ভিডিও কল দিলে সাত থেকে আট মিনিট নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বিভিন্ন নির্দেশনা দেন।

এ সময় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সোবহান, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য মারুফা আক্তার পপি, সাহাবুদ্দিন ফরাজি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়জ উদ্দিনসহ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান গণমাধ্যমকে জানান, ঈদের ছুটিতে জনসংযোগের পাশাপাশি সরকারি প্রকল্পের উপকারভোগীদের খোঁজখবর নিতে নেতা-কর্মীদের ভিডিও কলে নির্দেশনা প্রদান করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে থাকা একাধিক নেতা জানান, কথা বলার সময় দলীয় সভাপতি মূলত পাঁচ–ছয়টা নির্দেশনা দিয়েছেন। অনাবাদি জমি ফাঁকা রাখা যাবে না। যার জমি আছে তাকে উৎপাদন বাড়াতে বলেছেন।

গ্রামে গিয়ে সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে যেতে বলেছেন। বিশেষ করে সরকারের উন্নয়নের চিত্র মানুষের কাছে তুলে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে বিএনপির আমলের অপশাসন দুর্নীতি চিত্র এবং পার্থক্য মানুষের সামনে তুলে ধরার কথা বলেন।

দলীয় সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এলাকায় কোনো দলাদলি করা যাবে না। মনোনয়ন দেব আমি। যারা মনোনয়ন পেতে আগ্রহী, সবাই এলাকায় একসঙ্গে কাজ করবে। কোনো ধরনের দ্বন্দ্বে লিপ্ত হওয়া যাবে না।

কৃষকদের ধান কাটার সহযোগিতা করার পাশাপাশি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বলেন শেখ হাসিনা। আশ্রয়ণ প্রকল্পের বিষয়ে তিনি বলেন, যার যার এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্প আছে সেখানে গিয়ে মানুষের খোঁজখবর নিতে হবে। তিনি বলেন, আমি একটা লোককেও ঘরহীন, ভূমিহীন রাখব না। যদি কোনো এলাকায় কোনো ভূমিহীন থাকে খোঁজ নেবে, তাদের ঘর দেওয়া হবে।

ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফসহ ছাত্রলীগেরও বেশ কিছু নেতা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তাঁদের পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিষয়ে জানতে চান দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। তখন তাঁরা জানান পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রস্তুত করা হয়েছে। দলীয় প্রধানকে একটু দেখাতে চান। ঈদের পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।

বাড়ি যাওয়ার সময় সতর্কভাবে চলাফেরা করা জন্য ছাত্রলীগ নেতাদের নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। তিনি তাঁদের বাইক চলানোর সময়ও যাতে সবাই সতর্ক থাকেন, সেই কথা মনে করিয়ে দেন।

উপস্থিত সূত্র জানায়, ছাত্রলীগের নেতাদের সাদাসিধে জীবনযাপনের পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মানুষের সঙ্গে মিশে থাকতে হবে, তাদের কথা চিন্তা করতে হবে।

ফরমায়েশি গণতন্ত্র মেনে নেওয়া হবে না

এর আগে যৌথ সভার শুরুতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সংবিধানের বাইরে কারও দেওয়া ফরমায়েশি গণতন্ত্র মেনে নেওয়া হবে না। সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের গণতন্ত্র চলবে।

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, বিদেশি যত শক্তির কাছেই বিএনপি ধরনা দিক না কেন, কোনো ফরমায়েশি গণতন্ত্র মেনে নেওয়া হবে না। তিনি বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গনে স্বাভাবিক পরিস্থিতিকে অস্বাভাবিক পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে অশুভ শক্তির অশুভ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। বিএনপির নেতৃত্ব যে অশুভ শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, তা মোকাবিলায় মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

বিএনপির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের, অগ্নিসন্ত্রাসের কালো ছায়া যেন নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট না করতে পারে, সে জন্য সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে।

যৌথ সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, কাজী জাফর উল্লাহ, ফারুক খান, শাজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দীন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সিমিন হোসেন রিমি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম প্রমুখ।