ওয়েবের নতুন ছবিতে মহাজাগতিক মাকড়সা!

Print Friendly, PDF & Email

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : এবার এক ‘মহাজাগতিক টারানটুলা’র ছবি পাঠিয়েছে নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। তবে, এ ‘মহাজাগতিক টারানটুলা’ আক্ষরিক অর্থে কোনো দানবীয় মাকড়সা নয়; বরং উত্তপ্ত কিন্তু বয়সে তরুণ কিছু নক্ষত্রের ঝাঁক।

‘টারানটুলা নেবুলা’ আদতে গ্যাস আর ধুলোর মেঘ। আনুষ্ঠানিকভাবে এর নাম ‘৩০ ডোরাডাস (30 Doradus)’। কিন্তু স্পেস টেলিস্কোপ থেকে তোলা ছবিতে ধুলা আর গ্যাসের মেঘগুলো মাকড়সার পায়ের মতো লম্বা আর পেচানো মনে হওয়ায় এর নাম দাঁড়িয়েছে ‘টারানটুলা নেবুলা’ বা মাকড়সা নীহারিকা!

জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (জেডব্লিউএসটি) মহাবিশ্ব দেখে ইনফ্রারেড আলোতে; টারানটুলা নেবুলার ছবিকে সেই ইনফ্রারেড সক্ষমতার সেরা উদাহরণ বলে আখ্যা দিয়েছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট সিনেট।

নাসা বলছে, “ওয়েবের হাই-রেজুলিউশন ইনফ্রারেড যন্ত্রাংশগুলো এক সঙ্গে কাজ করে নক্ষত্র, নেবুলার গঠন কাঠামো ও উপাদান নিয়ে এমন খুঁটিনাটি উদঘাটন করেছে যা আগে সম্ভব হয়নি।”

পৃথিবী থেকে এক লাখ ৬১ হাজার আলোকবর্ষ দূরের এক ছায়াপথে অবস্থান টারানটুলা নেবুলার। পুরো ছায়াপথ জুড়েই এখনও ছোট-বড় নক্ষত্র জন্ম নিচ্ছে।

সিনেট জানিয়েছে, নেবুলায় একটি বাবলের ভেতরে কী হচ্ছে দেখার চেষ্টা করেছিল ওয়েবের ‘নিয়ার-ইনফ্রারেড স্পেকট্রোগ্রাফ (এনআইআরস্পেক)’। সেখানেই গ্যাসের মেঘে আবৃত বয়সে তরুণ এক নক্ষত্রের খোঁজ পেয়েছে ওয়েব টেলিস্কোপ।

নাসার ভাষ্যে ওয়েবের চোখে গ্যাসের মেঘের ভেতরে ‘গর্ত খুঁড়ে নিজের ঘর’ বানানোর চেষ্টা করছে ‘মহাজাগতিক টারানটুলা’। ছবির কেন্দ্রে নজরে আসছে নীল রঙের অনেকগুলো নক্ষত্র।

ওই নক্ষত্রগুলোর একটিকে আলাদা করে গুরুত্ব দিয়েছে ওয়েবের নিয়ার-ইনফ্রারেড স্পেকটোগ্রাফ। গবেষকরা প্রথমে নক্ষত্রটিকে আরও বুড়ো ভেবেছিলেন বলে জানিয়েছে সিনেট।

তবে এনআইআরস্পেকের ছবি বিশ্লেষণ করে নাসা জানিয়েছে, কেবল জীবন শুরু হয়েছে নক্ষত্রটির, এখনও একে ঘিরে আছে ধুলোর মেঘ।

ওয়েবের ‘মিড-ইনফ্রারেড ইন্সট্রুমেন্ট (এমআইআরআই)’ ইনফ্রারেডের আরও দীর্ঘ তরঙ্গে দেখে। ফলে এমআইআরআই থেকে কার্যত একটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণের ছবি পেয়েছে নাসা। এমআইআরআই ছবিতে টারানটুলা নেবুলার কেন্দ্রে থাকা নক্ষত্রপুঞ্জের দিকে জুম করেছে ওয়েব টেলিস্কোপ।

এতে ছবিতে “উত্তপ্ত নক্ষত্রগুলো ঘোলাটে হয়ে আসে, শীতল গ্যাস আর ধুলা জ্বলজ্বল করতে থাকে” বলে জানিয়েছে নাসা।

সিনেট জানিয়েছে, ওয়েব টেলিস্কোপের টারানটুলা নেবুলা পর্যবেক্ষণ নিয়ে উচ্ছসিত মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। মহাবিশ্বের শুরুর দিককার ছায়পথ পর্যবেক্ষণ করে ওয়েব যে তথ্য-উপাত্ত দিয়েছে তার সঙ্গে নেবুলার ভেতরের পর্যবেক্ষণের তুলনায় আগ্রহী তারা।

মহাজগতের সৃষ্টি রহস্যের সমাধানের আশা দেখাচ্ছে নাসা, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইএসএ) আর ‘কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি (সিএসএ)’ যৌথ উদ্যোগে নির্মিত জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। এ বছরের শুরুর দিকে চালু হওয়ার পর থেকেই মহাকাশ থেকে একের পর এক চোখ ধাঁধানো ছবি তুলে পাঠাচ্ছে এই ‘মহাকাশের চোখ’।