যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপি ও গণসংহতির ঐকমত্য

Print Friendly, PDF & Email

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ কয়েকটি দাবিতে বিএনপির সঙ্গে জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বাধীন গণসংহতি আন্দোলনের ঐকমত্য হয়েছে। পাশাপাশি এসব দাবি আদায়ে যুগপৎ কর্মসূচির লক্ষ্যেও একমত পোষণ করেছেন উভয় দলের নেতারা।

মঙ্গলবার (৩১ মে) দুপুরে রাজধানীর হাতিরপুলে গণসংহতি আন্দোলনের সঙ্গে বৈঠক শেষে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের সামনে বিএনপির পক্ষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি এসব বিষয় তুলে ধরেন। এর আগে, এদিন সোয়া ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত উভয় দলের প্রতিনিধিরা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার গণসংহতি আন্দোলনের সঙ্গে আলোচনা করে বিএনপি। এতে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুও অংশগ্রহণ করেন।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বৈঠকটি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বিএনপির প্রতিনিধি দল ১২টা ১০ মিনিটে পৌঁছান গণসংহতি কার্যালয় ভবনের সামনে। এরপর দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা স্বাগত জানিয়ে কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। সেখানে জোনায়েদ সাকি বিএনপি নেতাদের সৌজন্য কুশল বিনিময় শেষে বৈঠক কক্ষে নিয়ে যান।

আলোচনা শেষে জোনায়েদ সাকি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে যে কর্তৃত্ববাদী শাসন চলছে, যেভাবে এই শাসন জনগণের জীবনে নাভিশ্বাস তুলেছে, জনগণকে বিভক্ত করছে, পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থাকে বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে, তাতে আমরা উভয় দল গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করি। এই বাস্তবতা সম্পর্কে পর্যবেক্ষণে আমরা অনেক মিল খুঁজে পেয়েছি।’

আমরা মনে করি, এই বাস্তবতার বদল হওয়া দরকার, উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘একমাত্র গণতন্ত্রের গতিমুখে ফিরেই এই বিপদ থেকে উদ্ধার হতে পারি।’ ‘ফলে, আন্দোলন ছাড়া এই অবস্থা বদলোনোর কোনও পথ নেই’, বলে মন্তব্য করেন সাকি। বর্তমান সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচন সম্ভব নয়, বলে জানান তিনি।

‘২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী সংলাপ করেও ৩০ ডিসেম্বরের আগের রাতে ভোট ডাকাতি করা হয়েছে, এ কারণে দেশের মানুষ এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে বিশ্বাস করে না’ উল্লেখ করে গণসংহতির প্রধান নেতা বলেন, ‘বর্তমান সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগসহ এই সংসদ ভেঙে দিতে হবে। নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বড় ঐক্যমত তৈরি হয়েছে।’

জোনায়েদ সাকি জানান, বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বেশ কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে। তিনি জানান, সাংবিধানিক ক্ষমতা কাঠামোর বদল দরকার। সংবিধান সংস্কার, নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করতে হবে। উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে সুস্পষ্ট নিয়ম প্রণয়ন করতে হবে। ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য, ডিজিটাল আইন বাতিলসহ নানা বিষয়ে প্রস্তাব তুলে ধরেছে গণসংহতি আন্দোলন। সাকি জানান, এই সরকারের পদত্যাগের পর বাংলাদেশ কীভাবে চলবে, তা নিয়ে সর্বোপরি আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘গণসংহতি আন্দোলন স্পষ্ট করে বলতে চায়— বর্তমান সরকারের পতনের জন্য আন্দোলন দরকার। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে যদি জাতীয় রূপরেখা আসে, তাহলে মানুষ নতুন করে আন্দোলিত হবে। বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে পারবো। প্রাথমিকভাবে ঐকমত্য হয়েছি যুগপৎ ধারায় আন্দোলন যার যার অবস্থান থেকে পরিচালনা করতে হবে।’

জোনায়েদ সাকির বক্তব্যের জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকে বিএনপির প্রতিনিধি দল গণসংহতি আন্দোলনের সঙ্গে আলোচনা করতে এসেছিলাম। আশার কথা যে, আমরা অনেকগুলো বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি। ফ্যাসিবাদী সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে আমরা একমত হয়েছি। আমরা একমত হয়েছি, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বাতিল করতে হবে, নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করে তাদের অধীনে নির্বাচন কমিশন গঠন করে সংসদ নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের কোনও মতভেদ নেই, শব্দের ক্ষেত্রে পরিবর্তন থাকতে পারে।’

জোনায়েদ সাকির ভাষ্যে উত্থাপিত ‘সরকারের পদত্যাগের পর বাংলাদেশ কীভাবে চলবে’ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘কতগুলো মৌলিক বিষয়ে তিনি (জোনায়েদ সাকি) বলেছেন এই দেশের রাজনীতিতে আসা প্রয়োজন। সত্যিকার অর্থেই গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে সংবিধানের পরিবর্তন এবং কতগুলো মৌলিক বিষয়ের পরিবর্তন জরুরি। সেটা আলোচনার ভিত্তিতে আমরা একমতে এসে পৌঁছাতে পারবো বলে বিশ্বাস করি।’

ফখরুল বলেন, ‘আমরা আশাবাদী, আলোচনা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। এটি অব্যাহত থাকবে। আলোচনার যে প্রক্রিয়া শুরু করেছি, অতিদ্রুতই আমরা একটা যৌক্তিক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারবো।’

বিএনপির মহাসচিব জানান, আলোচনায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দিদের মুক্তির প্রধান দাবিটি নিয়ে উভয়পক্ষের ঐকমত্য হয়েছে।

‘যুগপৎ আন্দোলনের ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি’, বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।

বিএনপির সঙ্গে মতবিনিময়ে গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আলোকচিত্রী তাসলিমা আখতার, হাসান মারুফ রুমি, সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য জুলকারনাইন, বাচ্চু ভুঁইয়া, জুলহাসনাঈন বাবু, দীপক রায়, কেন্দ্রীয় সদস্য মিজানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

এরআগে, গত ২৪ মে মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য, ২৭ মে জোটের শরিক লেবার পার্টির সঙ্গে আলোচনা করেছেন বিএনপির নেতারা।

আগামী ১ জুন বুধবার বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে বিএনপির আলোচনার কথা রয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, বুধবার দুপুর ১২টায় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সেগুনবাগিচা অফিসে যাবেন বিএনপির প্রতিনিধি দল।