নিউজ ডেস্ক : আয়নায় নিজের চেহারা দেখে হয়তো বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মুক্তিযুদ্ধে আমার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
মুক্তিযুদ্ধে তার (মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী) ভূমিকার বিষয়ে মির্জা ফখরুলকে নিজ দলের সহকর্মীদের কাছ থেকে জেনে নেওয়ারও অনুরোধ জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মো. শাহজাহান কবিরের (বীরপ্রতীক) লেখা ‘অপারেশন জ্যাকপট’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
বিএনপির কাছে জিয়ার লাশের ছবি দেখাতে কিংবা চন্দ্রিমায় জিয়ার লাশ দাফনের প্রমাণে ডিএনএ পরীক্ষার দাবি জানিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী। চন্দ্রিমায় জিয়ার লাশ দাফন করা হয়নি বলেও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন তিনি। এর জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বুধবার বলেন, উনি (মোজাম্মেল) নিজে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন কি-না সেটা আগে প্রমাণ করুক।
ফখরুলের এমন মন্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী বলেন, ‘সব কথার তো জবাব দেওয়ার দরকার হয় না। মির্জা ফখরুল ইসলামের দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান আমার অধীনে যুদ্ধ করেছেন। ওনাকে আমি জিজ্ঞেস করার জন্য বলব। এছাড়া গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি হাসান উদ্দিন সরকার, ওনাদের কাছে জিজ্ঞেস করলে আমি খুশি হবো।’
তিনি বলেন, অনেকে বলে ওনার (মির্জা ফখরুল) পিতা কী করেছেন। আমি ব্যক্তিগত বিষয়ে যেতে চাই না। কী করেছেন, সেটা দেশের মানুষকে জিজ্ঞেস করুন। উনি (মির্জা ফখরুল) যে চীনাপন্থী রাজনীতি করেছেন, যারা বলেছিল- আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ হচ্ছে দুই কুকুরের কামড়া-কামড়ি। উনি সেই দলের সদস্য ছিলেন। যদিও ওনার ভূমিকা কী ছিল আমার ব্যক্তিগতভাবে জানা নেই। ওনারটা উনি যদি পরিষ্কার করেন। আয়নার সামনে দাঁড়ালে নিজের চেহারাটা ভেসে ওঠে। উনি বোধহয় ওনার চেহারাটা দেখে আমার কাছে জানতে চেয়েছেন, আমার ভূমিকা কী? যাক উনি জেনে নিতে পারেন সহকর্মীদের কাছ থেকে।
মোজাম্মেল হক বলেন, জিয়াউর রহমানকে যেদিন হত্যা করা হয়, তিনি যেভাবেই হোক রাষ্ট্রপতি তো ছিলেন। একজন রাষ্ট্রপতির সবকিছু ধারণ করা হয়। জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাই। কেউ কাউকে বেআইনিভাবে হত্যা করবে এটা সমর্থন যোগ্য নয়।
‘আমি বলেছি, তার লাশ তারা ফেলে রাখেনি, হত্যাকারীরা সেই লাশ গুম করেছিল, সেই লাশ পায়নি। বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, সেই লাশ পাওয়া গেছে, তো ছবি দেখান। রাষ্ট্রপতি ছিল, যদু-মধু-রাম-শ্যাম তো ছিল না। তার তো ডেডবডির একটা ছবি থাকবে।’
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী বলেন, বিএনপির মহাসচিব বলেছেন- তার পোস্টমর্টেম হয়েছে। পোস্টমর্টেম হলে কোন হাসপাতালে হয়েছে। কে করেছে…তিনি ডা. তোফায়েল সাহেবের নাম বলেছেন। কোন হাসপাতালে হয়েছে…হাসপাতালে যদি নিয়ে গিয়ে থাকতে পারে তবে ছবি তোলা সম্ভব। পোস্টমর্টেমের একটা ফরম্যাট আছে, সেই ফরম্যাটে আছে কি-না সেটা দেখান, প্রকাশ করেন। একটা সাদা প্যাডে একজন লিখে দিলো, পোস্টমর্টেম আমি করেছি, ২২টি বুলেট পেল, কোনো ছবি নেই। তাকে গোসল করিয়েছে, কাফন পরিয়েছে কিন্তু কোনো ছবি নেই।
‘মির্জা ফখরুল বলেন, কফিনের ওপর কাচ দিয়ে ঢাকা ছিল। উনি কাচের মধ্য দিয়ে স্বচক্ষে লাশ দেখেছেন। চোখ দিয়ে দেখলেন, ছবি তুলতে পারলেন না। ছবি তোলার লোক আছে তো। তা না হলে ডিএনএ টেস্ট করুন।’
মন্ত্রী বলেন, ব্যক্তি জিয়ার সঙ্গে আমাদের বিরোধ নয়। আমরা বলছি ইতিহাসের মিথ্যাচার নয়। জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে, যে কোনোখানেই কবর দেওয়া হোক, মানুষ সম্মান জানাতে চায়, সে সম্মান জানাতে পারবে। কিন্তু তার লাশ যদি না থাকে সেটাকে যদি কবর বানিয়ে সম্মান দেখানো হয়, এটা হলো ইতিহাসের বিকৃতি। আমরা ইতিহাসের বিকৃতি বন্ধ করতে বলছি।
জিয়াকে হত্যার পর অল্প কিছু সময় চট্টগ্রাম হত্যাকারীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে বিএনপি সরকারই প্রতিষ্ঠিত ছিল। তাই ছবি তোলার সুযোগ ছিল।
তিনি বলেন, বাঙালি জাতি ১৯৭০ সালে ম্যান্ডেট দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে নেতা বানিয়েছে। কোথাকার কোন জিয়া, যার নাম জীবনে কেউ শোনেনি, সে একটা ঘোষণা (স্বাধীনতার ঘোষণা) পাঠ করেছে। তাও তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে, এর আগে আরও দুজন পাঠ করেছেন। তাকে মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বানিয়ে বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করেছে। ইতিহাস বিকৃতি তারা করেছে। এটা তাদের ধারাবাহিকতা।
সংসদ ভবন থেকে জিয়ার কবরসহ অন্যান্য কবর ও স্থাপনা সরিয়ে দেওয়ার জন্য আপনারা অনুরোধ জানিয়েছেন, সেটার অগ্রগতি কত দূর- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, সেটা মাননীয় স্পিকার বলবেন। অগ্রগতি আমার জানা নেই।