শিক্ষা বোর্ডের সনদ জালিয়াতি চক্রের সাতজন রিমান্ডে

Print Friendly, PDF & Email

নিউজ ডেস্ক : ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে তথ্য পরিবর্তনের মাধ্যমে জাল সনদ তৈরির অভিযোগে গ্রেফতার সাতজনের একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ডে যাওয়া আসামিরা হলেন- নূর রিমতি, মো. জামাল হোসেন, এ. কে. এম মোস্তফা কামাল, মো. মারুফ, ফারুক আহম্মেদ স্বপন, মাহবুব আলম ও মো. আবেদ আলী।

শনিবার (২৮ আগস্ট) তাদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর ধানমন্ডি থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের সাতদিন করে রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসীম তাদের একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর, রমনা ও চকবাজার এলাকা হতে তাদের গ্রেফতার করে গোয়েন্দা ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম। এসময় তাদের কাছ থেকে অ্যাডমিট কার্ড, লেখা সনদ, অ্যাকাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট, রেজাল্ট শিট, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা লেখা খাকি রঙয়ের মাঝারি সাইজের আটটি খাম উদ্ধার করা হয়।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ভিকটিম নূর তাবাসসুম সুলতানা ২০১৯ সালে ধানমন্ডি কামরুননেছা গভ. গার্লস হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে শিক্ষা বোর্ডে দেয়া মোবাইল নম্বরে গত ২১ আগস্ট একটি ক্ষুদে বার্তা আসে। ওই বার্তায় তার রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর ঠিক থাকলেও শিক্ষার্থীর নাম ও পিতা-মাতার নামসহ জন্ম তারিখ পরিবর্তিত দেখতে পান। তখন তারা স্কুল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে যোগাযোগ করে পরিবর্তনের বিষয়ে সত্যতা পান। এ ঘটনায় ধানমন্ডি মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করা হয়। এ মামলার তদন্ত শুরু করে ডিবি।

আরও জানা যায়, আসামি নূর রিমতি ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় রাজধানীর সিটি মডেল কলেজ হতে অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হয়। কিন্তু তার ইতালি যাওয়ার জন্য এসএসসি পাশের সার্টিফিকেট প্রয়োজন পড়ে। জাল সনদ তৈরির জন্য তিনি তার মামা আসামি মো. জামাল হোসেনের মাধ্যমে এ. কে. এম মোস্তফা কামালের সঙ্গে সাড়ে তিন লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হন।

চুক্তি অনুযায়ী মোস্তফা কামাল শিক্ষা বোর্ডের দালাল চক্র আসামি মো. মারুফ, মাহবুব আলম, ফারুক আহম্মেদ স্বপন, মো. আবেদ আলীদের সঙ্গে সমন্বয় করে নূর তাবাসসুমের সার্টিফিকেট সংক্রান্ত জেএসসি ও এসএসসি পাসের সকল তথ্য সংগ্রহ করেন। এরপর তারা প্রথমে শিক্ষার্থীর নাম, পিতার নাম, মাতার নাম সংশোধনের জন্য শিক্ষা বোর্ডের নির্ধারিত ফরমেটে আবেদন করেন। শিক্ষা বোর্ডের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টাকার বিনিময়ে শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটের রেজাল্ট আর্কাইভে নির্ধারিত ফরমেটে সংরক্ষিত কৃতকার্য প্রকৃত শিক্ষার্থী নূর তাবাসসুমের তথ্য পরিবর্তন করে অকৃতকার্য শিক্ষার্থী নুর রিমতির তথ্যগুলো আপলোডের মাধ্যমে জাল সনদ তৈরি করে। পরে জন্ম তারিখও পরিবর্তন করে নেয়।

এমনকি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটগুলোতে পরিবর্তিত শিক্ষার্থীর সংযোজিত তথ্যসমূহ প্রদর্শন করে। প্রতারকচক্র ঢাকা শিক্ষা বোর্ডসহ অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডের বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, জন্ম তারিখসহ অন্যান্য তথ্য পরিবর্তন করে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের তথ্য সংযোজন করে জাল সনদ তৈরির মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়।