নিউজ ডেস্ক : এরকম কিছু যে ঘটতে পারে, সেই শঙ্কাতেই ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘতম যুদ্ধের ইতি টানার সিদ্ধান্ত বাইডেন কেন নিয়েছিলেন, তা তিনি বারংবার বলে এসেছেন। তার বিশ্বাস, আফগানিস্তানের ওই লড়াই এখন আর যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের পক্ষে নয়। আর এমন একটি যুদ্ধের জন্য সামরিক বাহিনীর আর একজন সদস্যকেও তিনি হারাতে চান না।
কিন্তু বৃহস্পতিবার বিদেশি সেনা আর বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার তোড়জোড়ের মধ্যেই কাবুল বিমানবন্দর এলকায় বোমা হামলা হয়। তাতে ১৩ মার্কিন সেনাসহ নিহত হয় অন্তত ৯০ জন, যাদের বেশিরভাগই সাধারণ আফগান।
গত দেড় বছরের মধ্যে আফগানিস্তানে এটাই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের সেনা নিহতের প্রথম ঘটনা এবং ২০১১ সালের পর সেদেশের সামরিক বাহিনীর জন্য সবচেয়ে বেশি সেনা হতাহতের ঘটনা।
ওই হামলার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউজের ইস্ট রুমে এসে নিজের প্রতিক্রিয়া জানান প্রেসিডেন্ট বাইডেন। কাবুল বিমানবন্দরে এই বোমা হামলায় জড়িত সন্ত্রাসীদের ‘খুঁজে বের করে’ শাস্তি দেওয়ার অঙ্গীকার করেন তিনি।
সেইসঙ্গে জানিয়ে দেন, আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও তাদের মিত্রদের বের করে নেওয়ার শঙ্কাযুক্ত, বিপদজনক কার্যক্রম আরও কয়েকদিন চলবে।
বাইডেন বলেন, “যারা এই হামলা করেছে, এবং যারা আমেরিকার ক্ষতি করতে চায়, জেনে রেখো: আমরা ক্ষমা করব না।”
তার এই বক্তব্যের সঙ্গে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের বক্তব্যের মিল পাওয়া যায়।
বুশও বলেছিলেন, “আমরা ভুলে যাবো না। আমরা তোমাদের খুঁজে বের করব, এর জন্য তোমাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।”
এক দশকের মধ্যে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীর ওপর সবচেয়ে মারাত্মক আত্মঘাতী বোমা হামলার খবরটি পেন্টাগন নিশ্চিত করার কয়েক ঘণ্টা পরই এ বক্তব্য দেন বাইডেন।
নিজের ‘মর্মপীড়ার’ কথা প্রকাশ করে তিনি বলেন, একটি ‘কঠিন দিন’ তাকে পর করতে হচ্ছে। তিনি তার কমান্ডারদের নির্দেশ দিয়েছেন আইএস-খোরাসান নির্মূলে নজর দেওয়ার জন্য। আফগানিস্তানে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) ওই সহযোগী গ্রুপই এ হামলার চালিয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা। আইএসও ইতোমধ্যে হামলার দায় স্বীকার করেছে।
বাইডেন বলেন, “আমাদের সময়েই আমরা নির্ভুলভাবে এর জবাব দেব- কোথায় সেটা হবে, সেটা আমরাই বেছে নেব, কখন হবে, আমরাই সেটা ঠিক করব।”
নিহত সেনাদের ‘আত্মদানকে’ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন বাইডেন। বোমা হামলায় নিহতদের ১৩ জন মেরিন সেনা এবং আহত ১৮ জন যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীর সদস্য।
আফগানিস্তানে যে সেনারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালনের প্রতিশ্রুতি দেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। বলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ‘যা কিছু ঘটেছে’ তার সবয় দায়দায়িত্ব তার ওপরেই বর্তায়। তবে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের কারণেই কাবুল বিমানবন্দরে এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, অথবা সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণহানি হয়েছে- এমন ধারণা তিনি আবারও প্রত্যাখ্যান করেছেন।
জো বাইডেন বলেন, “আমার একটাই বিকল্প পথ খোলা ছিল: আরও হাজার হাজার সেনা আফগানিস্তানে পাঠানো। আমি কখনোই ওই দৃষ্টিভঙ্গিটা মেনে নিতে পারিনি যে আফগানিস্তানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের, মার্কিনিদের জীবন উৎসর্গ করতে হবে।”
বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৪ অগাস্ট থেকে এ পর্যন্ত এক লাখের বেশি লোকজনকে আফগানিস্তান থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছেন তারা। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বীকার করা হয়েছে যে সেখানে আরও আমেরিকান এবং আফগান মিত্র রয়ে গেছেন, যারা সেদেশ ছাড়তে চান।
বৃহস্পতিবার বাইডেন বলেন, তিনি এখনও সেনা প্রত্যাহার এবং আফগানিস্তান থেকে মার্কিন নাগরিক ও মিত্রদের সরিয়ে নেওয়ার সময়সীমা ৩১ আগস্টেই বহাল রাখতে চান।
তিনি জানান, তার শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা তাকে জানিয়েছেন, যে চলমান হুমকির মধ্যেই প্রত্যাহার প্রক্রিয়া চালিয়ে নেওয়ার রসদ তাদের আছে, একইসঙ্গে বিমানবন্দর রক্ষার ব্যবস্থাও তারা রেখেছেন, যদিও আসন্ন দিনগুলোতে আরও হামলার আশঙ্কা করছেন তারা।
বাইডেন বলেন, প্রত্যাহার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া বাকি বিশ্বের কাছে এটাই প্রমাণ করবে যে, “আমেরিকা যা বলে তার মূল্য আছে।”
তিনি জানান, আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পরেও যুক্তরাষ্ট্র সেখানে থাকা মার্কিন নাগরিক ও অন্যদের দেশ ছাড়ার জন্য সহায়তা অব্যাহত রাখবে। এই কাজে তালেবানকেও সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হবে।
বাইডেন বলেন, এখন পর্যন্ত তালেবান যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য পশ্চিমা দেশগুলোকে সহযোগিতা করার মনোভাব নিয়েই আছে বলে তার মনে হচ্ছে।
“কেন তারা আমাদের সহযোগিতা করবে তার অনেক কারণ আছে, শুধু আমাদেরকে নয়, বরং অন্যদেরকেও। কেন করবে? যেহেতু আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী লোকজনকে আফগানিস্তান থেকে বের হতে দেওয়াটা তাদের পক্ষেই যায়।”
আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে অটল থাকার কথা জানিয়ে গত সপ্তাহে জো বাইডেন বলেছিলেন, “আমাদের বাহিনীর ওপর কোনো ধরনের আক্রমণ করা হলে তার দ্রুত ও সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।”
বৃহস্পতিবার এটা স্পষ্ট করা হয়নি যে বোমা হামলার জবাবে যুক্তরাষ্ট্র কোনো ধরনের সামরিক পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে কিনা। তবে সামরিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি কাবুল বিমানবন্দরে দায়িত্ব পালনরত সেনাদের পাল্টা হামলা করার সক্ষমতাও রয়েছে।