বাংলাদেশের বন্ধু সাংবাদিক জোসেফ গ্যালোওয়ের চিরবিদায়

Print Friendly, PDF & Email

নিউজ ডেস্ক : একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মমতার সাক্ষী সাংবাদিক, লেখক; বাংলাদেশের বন্ধু জোসেফ গ্যালোওয়ে আর নেই।
গত ১৮ আগস্ট নর্থ ক্যারোলিনার কনকর্ড সিটির একটি হাসপাতালে মারা গেছেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।

জোসেফ গ্যালোওয়ের মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন শহীদ সন্তান এবং প্রবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ।

স্ত্রী, দুই ছেলে এবং এক মেয়ে রেখে গেছেন গ্যালোওয়ে।

এক বিবৃতিতে ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছেন, বাংলাদেশ তার এক বিশ্বস্ত বন্ধুকে হারাল।

একাত্তরে পাকিস্তানী বাহিনী বাংলাদেশে যেভাবে মানুষ হত্যা করেছে, ‘গণহত্যা’ হিসেবে তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়েও কাজ করেছেন গ্যালোওয়ে।

তার ভাষ্য অনুযায়ী, একাত্তরে দুই বার তাকে ঢাকায় যেতে হয়েছে। প্রথমবার জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত এবং পরবর্তীতে ডিসেম্বরে বিজয় অর্জন পর্যন্ত ঢাকায় ছিল তার অবস্থান।

২০১৬ সালের ২ অক্টোবর নর্থ ক্যরোলিনায় প্রবাসীর এক আয়োজনে তিনি একাত্তরের স্মৃতিচারণ করে বলেছিলেন, “পঁচিশে মার্চ রাত থেকে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নৃশংসতা চালানোর পর পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী দেখানোর চেষ্টা করে যে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। এজন্য ওরা কয়েকজন বিদেশি সাংবাদিক নিয়ে এক সফরের ব্যবস্থা করে।”

ওই সফরে থাকা গ্যালোওয়ে বলছিলেন, “তারা সাংবাদিকদের ছোট একটি বিমানে দূর থেকে পূর্ব পাকিস্তানের কিছু এলাকা দেখায়, বলে সর্বত্র স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। কিন্তু আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হয়নি। এজন্য আমি পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের আড়ালে চলে যাই, আশ্রয় নিই ঢাকার মার্কিন কনস্যুলেটে।”

ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন কনসাল জেনারেল আর্চার ব্লাড পাকিস্তানিদের নির্বিচার গণহত্যার ঘটনায় তার কাছে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন জানিয়ে গ্যালোওয়ে বলেন, “মুক্তিকামী বাঙালির প্রতি সংবেদনশীল এই কূটনীতিক নিজের জীবন ও চাকরির ঝুঁকি নিয়ে কনস্যুলেট ভবনের একটি কক্ষ আমাকে ব্যবহারের অনুমতি দেন।”

এরপর যুদ্ধের খবর সংগ্রহ করে পাঠানোর কাজ শুরু করেন এক সময়ে ইউনাইটেড প্রেস ইন্টারন্যাশনালের (ইউপিআই) রিপোর্টার গ্যালোওয়ে।

কোনো সময় লুকিয়ে ঢাকাসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে, কখনও কনস্যুলেটের কর্মচারীদের কাছ থেকে থেকে গণহত্যা, ধ্বংস, দুর্ভোগের তথ্য জেনে তা পাঠাতে থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিকগুলোয়।

এরপর ফিরে আসেন যুক্তরাষ্ট্রে। কয়েকমাস পর বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ যখন চূড়ান্ত পর্বে, সেই ডিসেম্বরে ফের ফেরেন ঢাকায়। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর আত্মসমর্পণের বিভিন্ন পর্যায়ের সাক্ষী মার্কিন এই সাংবাদিক।

শেষ সময়ে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালকে রেডক্রসের আওতায় নেওয়ায় সাংবাদিক গ্যালোওয়ে তার পরিচালনার দায়িত্ব নেন। সেখানে সামরিক বাহিনীর শেষ সাংবাদিক সম্মেলনে জেনারেল নিয়াজিকে তার সামরিক ব্যাজ ও অস্ত্র বাইরে রেখে ঢুকতে বাধ্য করেন। এ সময় ক্ষুব্ধ নিয়াজি তাকে গুলি করার হুমকিও দিয়েছিলেন বলে জানান গ্যালোওয়ে।

১৬ ডিসেম্বর বাঙালির অবিস্মরণীয় বিজয়ের পর রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী হত্যার স্থান পরিদর্শন করেন এবং এই নৃশংসতার সমালোচনা করে লেখেন এই সাংবাদিক।

ভিয়েতনাম যুদ্ধের ওপর তার লেখা একটি বইয়ের গল্পে হলিউডে চলচ্চিত্রও হয়েছে। দীর্ঘ সময় তিনি ইউনাইটেড প্রেস ইন্টারন্যাশনালের ব্যুরো চিফ হিসেবে। ১৯৯১ সালে পারস্য উপসাগরীয় যুদ্ধের সময়েও রণাঙ্গণে ছিলেন গ্যালোওয়ে।

তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সভাপতি রাশেদ আহমেদ এবং সেক্রেটারি রেজাউল বারি, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি ড. খন্দকার মনসুর, সেক্রেটারি আব্দুল কাদের মিয়া এবং কমিউনিকেশন্স ডিরেক্টর লাবলু আনসার।