সেই আজম খানের জামিন স্থগিত

Print Friendly, PDF & Email

নিউজ ডেস্ক : চাকরির নামে দেশের হাজারেরও বেশি তরুণী-কিশোরীকে দুবাইয়ে পাচার করে তাদের অনৈতিক কাজে জড়াতে বাধ্য করার অভিযোগে গ্রেফতার আন্তর্জাতিক নারী পাচার চক্রের হোতা আজম খানকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ।

রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের ভার্চ্যুয়াল চেম্বার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এ আদেশ দেন।

আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।

গত ১৯ জুলাই তাকে জামিন দিয়েছিলো হাইকোর্ট। পরে এ জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।

আজম খানকে সহযোগীসহ গ্রেফতারের পর গত বছরের ১২ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম প্রধান ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, দুবাইতে মানবপাচার চক্রের গডফাদার আজমের বিলাসবহুল হোটেলের সন্ধান পেয়েছি। তিনি ফরচুন পার্ল হোটেল অ্যান্ড ড্যান্স ক্লাব, হোটেল রয়েল ফরচুন, হোটেল ফরচুন গ্রান্ড ও হোটেল সিটি টাওয়ারের অন্যতম মালিক। এরমধ্যে তিনটি ফোর স্টার, একটি থ্রি স্টার মানের। তিনি বাংলাদেশে অর্ধশত দালালের মাধ্যমে কিশোরী অথবা ২০-২২ বছরের মেয়েদের উচ্চ বেতনে কাজ দেওয়ার কথা বলে প্রলুব্ধ করতেন।

‘দালালরা মেয়েদের প্রলুব্ধ করে নির্ধারিত দু’টি বিদেশি এয়ারলাইন্স এজন্সির মাধ্যমে দুবাই পাঠাতো। দুবাই যাওয়ার পরে তাদের প্রথমে ছোটখাটো কাজ দেওয়া হতো। এরপর জোরপূর্বক ড্যান্স ক্লাবে নাচতে বাধ্য করা হতো। আটকে রাখা হতো, খাবার দেওয়া হতো না, শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হতো। বৈদ্যুতিক শক পর্যন্ত দেওয়া হতো এবং দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হতো।

সিআইডির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আর ভিকটিমদের অগ্রিম বেতন দেওয়ার কথা বলে প্রলুব্ধ করা হতো। দুবাই পর্যন্ত ভিকটিমদের যাওয়া, খাওয়া, থাকার সব খরচ দালালচক্র পরিশোধ করতো। অগ্রিম বেতন হিসাবে ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত পরিশোধ করতেন আজম। কিন্তু দুবাই ড্যান্সবারে কিংবা হোটেলে নেওয়ার পর তাদের আর বেতন দেওয়া হতো না।

তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুবাই সরকার বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানিয়ে চক্রের গডফাদার আজমের পাসপোর্ট জব্দ করে দেশে ফেরত পাঠায়। দেশে ফেরার পর আজম আত্মগোপনে যান। বারবার নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেন। নতুন পাসপোর্ট করে সীমান্ত দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে পালানোরও চেষ্টা করেন। তবে, তার আগেই দুই সহযোগীসহ সিআইডির চৌকস দল তাকে আটক করে।

আজমের বিরুদ্ধে ছয়টি হত্যাসহ ১৫টি মামলার তথ্য পেয়েছে সিআইডি।

মেয়েদের সঙ্গে কথা বলার ফোন রেকর্ডের অডিও ক্লিপ ইতোমধ্যে সিআইডি উদ্ধার করছে বলে জানিয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আজম আরও স্বীকার করেছেন গত আট বছরে তিনি হাজারেরও বেশি তরুণীকে দুবাই পাচার করেছেন।

এ বিষয়ে সিআইডি বাদী হয়ে গত ২ জুলাই রাজধানীর লালবাগ থানায় একটি মামলা করে। একই বছরের ১৩ জুলাই এ বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন তিনি।