নিউজ ডেস্ক : চলমান লকডাউনের মধ্যেও গতকাল পর্যন্ত সারা দেশের ৬৪ ভাগ বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, এ মাসের মধ্যেই অবশিষ্ট ৩৬ ভাগ বোরো ধান কাটা সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যায়।
মন্ত্রী জানান, চলতি আউশ মৌসুমে ১৩ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ আবাদের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩৪ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন চাল।
মঙ্গলবার (১১ মে) দুপুরে সচিবালয়ে হাওরে শতভাগ বোরো ধান কাটা নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান কৃষিমন্ত্রী। এ সময় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলামসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, গত বছর এই দিন পর্যন্ত সারা দেশের মাত্র ৩৩ ভাগ ধান কর্তন সম্ভব হয়েছিল। ধান কাটা মেশিন দ্রুত মাঠে দেওয়া এবং সরকারি তত্ত্বাবধানে শ্রমিকের সময়মত যাতায়াত সুগম করার ফলেই এ বছর দ্রুত ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে। হাওরের সাতটি জেলায় এবার ধান কাটার জন্য ৪৯ হাজার ১০৮ জন বহিরাগত শ্রমিক নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গত বছরের মতো এ বছরও করোনাকালে কৃষকেরা হাওরের ধান সফলভাবে ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের ও স্বস্তির বিষয়। হাওরভুক্ত সাতটি জেলায় এ বছর বোরো আবাদ হয়েছে ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৫৩৪ হেক্টর জমিতে; যা দেশের মোট আবাদের প্রায় ২০ শতাংশ। আর শুধু হাওরে বোরো আবাদ হয়েছে ৪ লাখ ৫১ হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে, যা মোট আবাদের প্রায় ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। সারা দেশে এ বছর ৪৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে।
মন্ত্রী জানান, গতবারের তুলনায় এ বছর ১ লাখ ২৯ হাজার ৩১৩ হেক্টর বেশি জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। গত বছর আবাদ হয়েছিল ৪৭ লাখ ৫৪ হাজার ৪৪৭ হেক্টর জমিতে। এ বছর আবাদ হয়েছে ৪৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে।
কৃষিমন্ত্রী পেয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের বিষয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে। বাংলাদেশে পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৩০ লাখ টন। এই জন্য সংগ্রহোত্তর ঘাটতি বিবেচনায় উৎপাদন প্রয়োজন ৩৫ লাখ টনেরও বেশি। প্রতিবছর ৬-১০ লাখ টন ঘাটতি পেঁয়াজ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানির মাধ্যমে মেটানো হয়ে থাকে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ইতোমধ্যে বার পেঁয়াজ-৫ নামে একটি গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের জাত উদ্ভাবন করেছে। আমাদের দেশে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করার জন্য এবং ৩ বছরের উৎপাদনের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য একটি রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হয়েছে। রোডম্যাপ অনুযায়ী কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য এ বছর ভারত হে ৩৫ টন পেঁয়াজ বীজ আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পাট বীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে মোট ৭ লাখ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়ে থাকে তার মধ্যে বেশিরভাগই তোষা পাট চাষ হয়ে থাকে। প্রতিবছর তোষা পাট চাষের জন্য বীজের প্রয়োজন হয় ৫ হাজার টন। বিএডিসি উৎপন্ন করে ৫০০ টন অবশিষ্ট পাটবীজ ভারত থেকে আমদানি করতে হয়। দেশে পাটবীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য একটি প্রকল্প প্রণয়নের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হে আগামী ৩ বছরে পাট বাজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সম্ভব হবে।
উৎপাদনশীলতার জন্য হাইব্রিড জাতের ধানের চাষ বাড়ানোয় এ বছর জোর দেয়া হয়েছিল জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩ লাখ ২৭ হাজার হেক্টর জমিতে হাইব্রিডের আবাদ বেড়েছে। হাইব্রিড ধানের আবাদ বাড়াতে ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৯৭০ জন কৃষককে ২ লাখ হেক্টর জমি আবাদের জন্য ৭৬ কোটি টাকার হাইব্রিড ধানের বীজ বিনামূল্যে দেওয়া হয়।
উচ্চফলনশীল ধানের প্রচলন ও সম্প্রসারনে উৎপাদন বেড়েছে জানিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, জনপ্রিয় জাত ব্রি-২৮ বা ব্রি-২৯ এর চেয়ে কৃষি বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত এবং বাংলাদেশের মাটিতে পরিক্ষীত জাত যেমন ব্রি-৮১, ব্রি-৮৮, ব্রি-৮৯, ব্রি-৯২ জাতের সম্প্রসারণ এবছর বেশি হয়েছে। এ বছর বোরোতে ২ কোটি ৫ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা আমাদের। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ১ কোটি ৯৬ লাখ টন।