শারুনের বিরুদ্ধে মুনিয়ার ভাইয়ের মামলার আবেদন

Print Friendly, PDF & Email

নিউজ ডেস্ক : রাজধানীর গুলশানে কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার ‘আত্মহত্যার’ ঘটনায় জাতীয় সংসদের হুইপ ও চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর ছেলে নাজমুল করিম চৌধুরী শারুনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার আবেদন করা হয়েছে।

রবিবার (২ মে) ঢাকা মহানগর হাকিম মোর্শেদ আল মামুন ভুঁইয়ার আদালতে এ আবেদন করেন মুনিয়ার ভাই আশিকুর রহমান।

আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আদেশে উল্লেখ করেন, মুনিয়ার ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে’ গুলশান থানায় একটি মামলা হয়েছে। ওই মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন। এ মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত হত্যা মামলার আবেদনটি স্থগিত থাকবে।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, মুনিয়ার সাথে সায়েম সোবহান আনভীরের কেবল বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। এখানে উল্লেখ্য যে, সায়েম সোবহান আনভীর এবং নাজমুল করিম শারুনের মধ্যে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ছিল। আসামি শারুন বাদীর বোন মুনিয়ার মাধ্যমে আনভীরের ব্যবসায়িক ও ব্যক্তিগত অনেক গোপন তথ্য কৌশলে মুনিয়াকে ব্যবহার করে জেনে নেয়। বাদী সরল ও কোমলমতি বোন উক্ত বিষয়ে প্রথম অবস্থায় কিছু বুঝতে না পারলেও পরবর্তীতে সে সম্পূর্ণ বিষয়টি বুঝতে পেরে এক পর্যায়ে মুনিয়া শারুনের অসৎ উদ্দেশ্যে ও অনৈতিক কাজে সহযোগিতা করতে অসম্মতি জ্ঞাপন করে, তাতে করে শারুন মুনিয়ার ওপর চরমভাবে ক্ষিপ্ত হয় এবং প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকে এবং মানসিকভাবে ভীষণ চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। বিষয়টি বাদীকেসহ পরিবারের সবাইকে মুনিয়া অবগত করেন। এর বাদী তার মেঝ বোন তানিয়ার সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করলে সে বলে এমন কিছুই হবে না, সব ঠিক হয়ে যাবে। এ ঘটনার জন্য বাদীর মনে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে যে, মুনিয়াকে আনভীরের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে না পেরে শারুনই বাদীর বোনকে তার সহযোগিদের নিয়ে হত্যা করে। বাদীর বোনকে হত্যা করে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে এ আত্মহত্যার মিথ্যা নাটক উপস্থাপন করা হয়েছে।

আসামি শারুন বাদীর বোনকে অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার ও ভোগ করেছে। বাদীর বোন মুনিয়া যখনই এই ঘৃণ্য চক্রান্ত থেকে বের হয়ে ফেরত আসতে চেয়েছে তখনই শারুন মুনিয়ার ওপর চরম ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। আসামি শারুন সুকৌশলে বাদীর বোনের ফ্ল্যাটে ঢুকে অজ্ঞাতনামা আসামিদের সহযোগিতায় নির্মমভাবে হত্যা করে মৃতদেহ ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে এবং কৌশলে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। এখানে উল্লেখ্য যে, উক্ত ফ্ল্যাটের ডুপ্লিকেট চাবি শারুনের নিকটও থাকত এবং মূল দরজার তালা উভয় দিক দিয়ে লাগানো যায়।

যেহেতু আসামি উল্লেখিত ঘটনা ঘটিয়ে ৩০২/৩৪ ধারায় অপরাধ করেছে। অতএব ন্যায় বিচারের স্বার্থে বাদীর আনীত অভিযোগটি গ্রহণ করে আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় অপরাধ আইনে আমলে গ্রহণের মাধ্যমে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে আদালতের মর্জি হয়।

গত ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাসার একটি ফ্ল্যাট থেকে কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়া বাদী হয়ে সেই রাতে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন।

পরে ঢাকা মহানগর হাকিম আবু সুফিয়ান মোহাম্মদ নোমান মামলার এজাহার গ্রহণ করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ৩০ মে দিন ধার্য করেন।

অন্যদিকে ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম শহিদুল ইসলামের আদালত সায়েম সোবহান আনভীরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন। তিনি যেন দেশত্যাগ করতে না পারেন সে বিষয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।