মা ইলিশ রক্ষার আকাশ থেকেও নজরদারি করা হবে: মৎস্যমন্ত্রী

Print Friendly, PDF & Email

নিউজ ডেস্ক : এবার মা ইলিশ রক্ষায় আইনশৃংখলা বাহিনীর নজরদারির পাশাপাশি আকাশ থেকেও হেলিকপ্টারে নজরদারি করা হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
বুধবার মেঘনা নদীতে ইলিশ রক্ষার কার্যক্রম সরেজমিনে তদারকি করতে গিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী একথা বলেন। মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নবেম্বর ২২ দিন ইলিশ মাছ ধরা, বিক্রি ও মজুদ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এই সময়ে সরকারের নানা সহায়তাও পাচ্ছে জেলেরা। এবার প্রসাশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি জেলেরাই স্বতঃফুর্ত পাহারা দিচ্ছে মা ইলিশ মাছ রক্ষায়। আর নদীতে তৈরি হয়েছে ইলিশ রক্ষার প্রচারণার এক উৎসবমুখর পরিবেশ।
বুধবার নৌপুলিশের ব্যবস্থাপনায় নারায়ণগঞ্জের মেঘনা ব্রীজ ঘাট থেকে নৌপথে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর ঘাট পর্যন্ত মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে অংশগ্রহণ করেন মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা। এসময় শত শত জেলে ও মৎস্যজীবীরা নদীতে নৌকা ও ট্রলারে করে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের গুরুত্বসম্বলিত শ্লোগান দিয়ে ও গান গেয়ে অভিযানের ব্যাতিক্রমধর্মী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, মেগনার যতদূর চোখ যায় পানি আর পানি। বালুবাহী যাত্রীবাহী ট্রলার দেখা গেলেও কোনো মাছ ধরার দৃশ্য নেই নদীতে। এরই মধ্যে প্রায় শতাধিকের বেশি ট্রলারে চেপে শত শত জেলে মাছ না ধরার প্রচারণা চালাচ্ছেন। জেলেদের পাশাপাশি নৌ পুলিশের টহল অব্যাহত রয়েছে। জেলেদের স্বতর্ফুর্ত মা ইলিশ রক্ষার প্রচারণাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে টহলের পাশাপাশি জেলে পাড়াগুলোতে প্রচার চালাচ্ছে সরকার। মোহনপুর লঞ্চঘাটে অভিযান তদারকি করতে গিয়ে স্থানীয় জেলে, বাসিন্দা জনপ্রতিনিদিদের উদ্দেশ্যে মৎস্য মন্ত্রী বলেন, এবার মা ইলিশ রক্ষায় স্থানীয় প্রসাশন, বিভিন্ন আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আকাশপথে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে নজরদারি করা হবে। যারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করবে তাদের ঠিকানা হবে জেলখানা। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাদের সাথে সাথে সাজা দেয়া হবে। কাজেই কোন দুর্বৃত্তের প্ররোচনায় মৎস্যজীবী ভাইয়েরা মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে বিঘ্ন ঘটাবেন না।
মন্ত্রী বলেন, কেউ যদি গভীর রাতেও মা মাছ ধরতে আসে তাদের আটকানোর জন্য নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর অভিযান থাকবে। আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবো কেউ মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ধুলিসাৎ করার জন্য ভূমিকা রাখছেন কীনা। ইলিশ উৎপাদন নিয়ে শ ম রেজাউল বলেন, আমরা ইলিশের উৎপাদন এমন জায়গায় নিয়ে যাবো যে প্রত্যেক গ্রামে, ঘরে ঘরে ইলিশ খাওয়ার পরও রফতানি করতে পারবো। রফতানির মাধ্যমে আসা বৈদেশিক মুদ্রায় দেশের উন্নয়নকে আরো ত্বরান্বিত করবে।
মন্ত্রী আরো বলেন, করোনায় অনেক উন্নত দেশে খাদ্যসহ নানা সমস্যাই ছিল। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে করোনায় একটি মানুষ না খেয়ে মারা যায়নি। শেখ হাসিনার হাতে যতোদিন দেশ পথ হারাবে না বাংলাদেশ।
মৎস্য খাত নিয়ে শ ম রেজাউল করিম বলেন, করোনায় পোশাক খাতে একটি মন্দা দেখা দিয়েছে, বিদেশ থেকে অনেকেই কাজ হারিয়ে দেশে ফিরছেন সেখানে আল্লাহর রহমত হিসেবে মৎস্য খাত অনেক সম্ভাবনাময় ও একটি ভিন্ন খাত হয়েছে। মাছের উৎপাদন অনেক বেড়েছে, ইলিশের উতপাদন অতিতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
মন্ত্রী বলেন, মৎস্য খাতে একটা বিপ্লবের সৃষ্টি হয়েছে। দেশের সকল মানুষের মাছের চাহিদা আমরা পূর্ণ করতে পেরেছি। ইলিশ ধরার সাথে জড়িত মৎস্যজীবী, জেলেসহ তারা বিপণন করেন সবার ভূমিকা রয়েছে। মা ইলিশ সংরক্ষণে অভিযানে শত শত জেলেরা স্বেচ্চায় অংশ নিচ্ছেন। অফুরন্ত সম্ভাবনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে এটাই হচ্ছে দৃষ্টান্ত। মা ইলিশ সংরক্ষণের সময় মৎস্যজীবীরা যাতে কষ্টে না থাকেন, সেজন্য এবার অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় বেশি ভিজিএফ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আগামী বছর আরো বেশি বরাদ্দ করা হবে।
মৎস্য ও প্রাণি মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদ বলেন, নিষেধাজ্ঞার ২২ দিন আমরা প্রত্যেক জেলেকে ২০ কেজি করে চাল দিচ্ছি। মৎসজীবী সমিতি, জেলে বিভিন্ন বাহিনীর সাথে সমন্নয়ের মাধ্যমে আমরা দেশের সম্পদ রক্ষা করবো।
এদিকে, নৌ পুলিশের প্রধান আতিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, এবছর জাটকা ধরা নিষেধকালিন সময়ে ২৭ টি জাহাজ দিয়ে ৫৯ দিন নদীতে আমাদের টিম কাজ করেছে যার ফলে এবার বড় আকারের ইলিশ মানুষ বাজারে পেয়েছে। মা ইলিশ রক্ষায়ও আমাদের প্রত্যেকটা টিম সতর্ক। এই ২২ দিন আমাদের ১১শ জনবল ১৪০ টি নৌযান ৬টি জাহাজ ৫০ টি স্পিড বোর্ড নদীতে থাকবে। নৌ পুলিম প্রধান আরো বলেন, গত বছর ৩৫০০ লোক গ্রেফতার করা হয়েছিল আর ৯৭ কোটি মিটার কারেন্ট জাল ধরেছিলাম আমরা। এবার মা ইলিশ রক্ষার আগেই গত এক সপ্তাহে সাড়ে তিন কোটি কারেন্ট জাল জব্দ করেছি। আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি কেউ নদীতে যেন মা ইলিশ ধরতে না পারে।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি মাহফুজুর রহমান মামুন বলেন, আমাদের পক্ষে সরকারের উন্নয়নে যা করনীয় যেভাবে সহযোগিতা করা দরকার সেভাবেই পাশে আছি। মা ইলিশ রক্ষার ক্ষেত্রেও তাই। পরে মন্ত্রী বেলুন উড়িয়ে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২০ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। মা ইলিশ রক্ষা তদারকি কার্যক্রমে আরো উপস্থিত ছিলেন আরো মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শ্যমল চন্দ্র কর্মকার, অতিরিক্ত সচিব শাহ মো. ইমদাদুল হক, সুবল বোস মনি, মো. তৌফিকুল আরিফ, মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক কাজী শামস আফরোজ, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ, নৌ পুলিশের ডিআইজি মো. আতিকুল ইসলাম, চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান, পুলিশ সুপার মোঃ মাহমুদুর রহমান, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকী, মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ কুদ্দুসসহ মৎস্যজীবীদের প্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও নৌপুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তা।