অনলাইনে একাদশের ক্লাশ শুরু

Print Friendly, PDF & Email

নিউজ ডেস্ক : মহামারি করোনার ছোবলের কারনে কিছুটা দেরীতে হলেও অবশেষে শুরু হলো একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া নতুন শিক্ষার্থীদের ক্লাস। তবে করোনার সংক্রমন রোধে শ্রেনীকক্ষের পরিবর্তে প্রথম বারের মতো কোন শিক্ষা বর্ষের শুরু হলো অনলাইন ক্লাশের মাধ্যমে। রবিবার নতুন শিক্ষাবর্ষের একাদশ শ্রেণির অনলাইন ক্লাস কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। দুপুর ১২টায় ঢাকা কলেজের আয়োজনে অনলাইন প্লাটফর্ম জুম এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন তিনি।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, নানা প্রতিবন্ধকতা থাকার পরও অনলাইনে ক্লাস শুরু হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য তা সফল হয়েছে। ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক নেহাল আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। আরো ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্ত শিক্ষা বোর্ড প্রধান প্রফেসর মু. জিয়াউল হক।
ঢাকা কলেজসহ রাজধানী বেশ কয়েকটি কলেজের শিক্ষক এবং একাদশ শ্রেণির নবীন শিক্ষার্থীরা ভার্চুয়াল এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। স্কুল পেরিয়ে কলেজ জীবনের শুরুতে নতুন শিক্ষায়তনে নবীন শিক্ষার্থীদের যে প্রাণচাঞ্চল্য প্রতিবছর থাকে, এবার তা অনলাইনেই সীমাবদ্ধ থাকছে।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, সঙ্কট দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সব সঙ্কটই নতুন সম্ভাবনা তৈরি করে। আগামী দিনগুলোতে অনেক পরিবর্তন আসবে। এই পরিবর্তনের সাথে আমাদের খাপ খাইয়ে নিতে হবে। আমরা অনেক সীমাবদ্ধতা দেখছি, কিন্তু আসলে অনেক সম্ভাবনা। আমরা যেন এগুলোকে কাজে লাগাই। আগে আমাদের ধারণা ছিল শিক্ষকরা সব জ্ঞানের উৎস। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির যুগে সব তথ্যই সবার হাতের কাছে। তাই আমরা শিক্ষকদের নিজেদের জ্ঞানের উৎস না ভেবে আদর্শ গাইড হিসেবে ভাবতে হবে। তারা আগামী প্রজন্মকে দক্ষ পথপ্রদর্শকের মতোই এগিয়ে নেবেন।
করোনাভাইরাস পরবর্তী সময়েও অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষাকার্যক্রম অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের কথা বলি। সেটি বাস্তবায়ন করতে হলে ভবিষ্যতে অনলাইন কার্যক্রমের সাথে আমাদের সম্পৃক্ত হতেই হতো। করোনা পরিস্থিতি আমাদের সেই সুযোগ এখনই করে দিয়েছে। সংকট অনেক সময় আমাদের জন্য সম্ভাবনা নিয়ে আসে। করোনাভাইরাসও আমাদের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে দিয়েছে। যেটা আমরা আজ থেকে পাঁচ বছর পর করতাম সেটির সাথে আমরা এখন থেকেই অভ্যস্ত হয়ে গেলাম। করোনাপরবর্তী সময়েও অনলাইনে শিক্ষাকার্যক্রম চলমান থাকবে।
একাদশের নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পড়াশোনার মূল উদ্দেশ্য নিজেকে জানা। নিজেকে জানতে গেলে অনেক কিছু জানতে হয়। নিজের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে জানতে হয়। আমরা এমন একটা দেশে জন্মগ্রহণ করেছি, যার রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস। এই সমৃদ্ধ ইতিহাস কিন্তু আমাদের শক্তির উৎস। এটা আমাদের জানতে হবে। আমি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলব, এই ইতিহাস তোমাদের জানতে হবে। নিজেদের সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ তৈরি করতে হবে।

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, শিক্ষাটা যেন মানুষের আভিজাত্য তৈরি করতে না পারে, আমাদের সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের শিক্ষাকে সাধারণ মানুষের চাহিদা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কোনো কাজই ছোট না। একজন কৃষক শিক্ষার অভাবে কৃষিকাজ ঠিকভাবে করতে পারে না। কিন্তু একজন শিক্ষিত ব্যক্তি কৃষিকাজ করলে কৃষির ব্যাপক বিপ্লব ঘটবে।
আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা আত্মসম্মানবোধ রোগে ভোগেন উল্লেখ করে উপমন্ত্রী বলেন, তারা অনেক পেশাকেই সম্মানের চোখে দেখেন না। দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সময় আমি নিজে ওয়েটারের কাজ করেছি। এটি আমাদের দেশের অনেক মানুষের কাছে নিচু কাজ মনে হবে। অনেক দক্ষতা কাজে লাগানোর সুযোগ এসেছে। অনেক দক্ষতা আয়ত্ত করার সুযোগ এসেছে। আজ আমরা শিক্ষিত হয়ে আভিজাত্যের অসুস্থতায় ভুগছি। সমাজের সকল মানুষকে সম্মানের সাথে দেখতে হবে। কারও স্কিলকেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।
একাদশের বাংলা প্রথমপত্রের নতুন সিলেবাস: একাদশ-দ্বাদশ ও আলিম শ্রেণির বাংলা প্রথমপত্র ‘সাহিত্যপাঠ’ পাঠ্যপুস্তকের নতুন সিলেবাস প্রকাশ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। বোর্ডের সচিব প্রফেসর ড. মো. নিজামুল করিম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রণীত নতুন সিলেবাসে ১২টি গদ্য ও ১২টি কবিতা রয়েছে।
গদ্যের মধ্যে রয়েছে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টপাধ্যায়ের ‘বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘অপরিচিতা’, শরৎচন্দ্র চট্টপাধ্যায়ের ‘বিলাসী’, রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ‘গৃহ’, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আহ্বান’, কাজী নজরুল ইসলামের ‘আমার পথ’, আবুল ফজলের ‘মানব-কল্যাণ’, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মাসি-পিসি’, শেখ মুজিবুর রহমানের ‘বায়ান্নর দিনগুলো’, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘রেইনকোট’, মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ ও গী দ্যা মোপাসাঁর ‘নেকলেস’।
কবিতার মধ্যে মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সোনার তরী’, কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’, জসীমউদদীনের ‘প্রতিদান’, জীবনানন্দ দাশের ‘সুচেতনা’, সুফিয়া কামালের ‘তাহারেই পড়ে মনে’, ফররুখ আহমদের ‘পদ্মা’, সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘আঠার বছর বয়স’, শামসুর রাহমানের ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘নুরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ ও আবু হেনা মোস্তফা কামালের ‘ছবি’। পুরাতন সিলেবাস থেকে কিছু গদ্য ও কবিতা বাদ দিয়ে নতুন করে কিছু গদ্য ও কবিতা সংযোজন করা হয়েছে নতুন সিলেবাসে।