নিউজ ডেস্ক : পণ্য আমদানীর সঙ্গে জড়িত হাতে গোনা কয়েকজন ব্যবসায়ী বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণ করছে এমন মন্তব্য করে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, বাজারে পণ্যের বাড়তি মূল্যের জন্য মন্ত্রনালয়ের রোষানলে পড়ছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
তিনি বলেন, টিসিবি মাধ্যমে খাদ্যপণ্য বিক্রি করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে নির্দিষ্ট সময়ে পরিকল্পিতভাবেই নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানী করতে হবে। সব মিলিয়ে বাজার এখন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে।
শনিবার রাজধানীর বনানীতে দলের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সাবেক এই মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বিরোধী দলীয় উপনেত গোলাম মোহাম্মদ কাদের ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, মৌসুমে কৃষকরা কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য পায়না। কিন্তু সরকারের অব্যবস্থাপনায় সেই পণ্য কয়েক গুন বেশি দামে খুচরা বাজারে বিক্রি হয়। এতে হাহাকার সৃষ্টি হয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
জাতীয় পার্টি বনানী কার্যালয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কয়েকশো নেতা-কর্মী জাতীয় সেচ্ছাসেবক পার্টিতে যোগদান উপলক্ষ্যে আয়োজিত সভায় দলের বিভিন্ন সারির নেতারা বক্তব্য রাখেন।
জাতীয় সেচ্ছাসেবক পার্টির সভাপতি ও জাতীয় পার্টি আবু সাঈদ স্বপন-এর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় জাপা চেয়ারম্যান বলেন, কয়েক বছর ধরে কোরবানীর চামড়া পানির মূল্যে বিক্রি হয়েছে। অনেকেই বিক্রি করতে না পেরে মাটিতে পুঁতে ফেলেছেন। চামড়ার ক্রেতা বাড়াতে পারেনি সরকার। তাই জাতীয় সম্পদ চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে। আর বঞ্চিত হয়েছে এতিম ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
সরকার জেনে-বুঝেই চামড়া শিল্পকে নষ্ট করেছে এমন মন্তব্য করে সাবেক এই বিমান মন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সহসাই স্বাভাবিক হবে বলে মনে হচ্ছেনা। তাই ১৮ কোটি মানুষকে বাঁচাতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। জাতীয় পার্টি সব সময় দেশ ও মানুষের স্বার্থে সরকারকে সব ধরনের সহায়তা করতে প্রস্তুত আছে।
দেশের প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে জাতীয় পার্টি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় রাজনৈতিক শক্তি উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, দীর্ঘ দিন রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ যেমন পদ্মাসেতু, মেট্রো রেলের মত বড় বড় উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করে প্রশংসিত হয়েছে। আবার খুন, গুম, ধর্ষন, চাঁদাবাজী ও টেন্ডারবাজীর কারণে তেমনি সমালোচিত হচ্ছে।
আর বিএনপি নানা কারণে অনিশ্চিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে আছে। বিএনপির ভবিষ্যত নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। অন্যদিকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির শাসনামলে খুন, গুম, ধর্ষণ, চাঁদাবাজী ও টেন্ডারবাজী ছিলনা। জাতীয় পার্টির শাসনামলে বিচার বর্হিভূত হত্যাকান্ড ছিলনা। তাই নতুন প্রজন্মের সামনে জাতীয় পার্টি একটি আদর্শ রাজনৈতিক শক্তি।
বলেন, জাতীয় পার্টিই পরিবর্তনের জন্য একমাত্র রাজনৈতিক শক্তি। দেশের মানুষ জাতীয় পার্টির দিকে উন্মুখ হয়ে তাকিয়ে আছে। জাতীয় পার্টি গণমানুষের সমর্থন নিয়ে ক্ষুধা, দুর্নীতি ও বেকারত্ব মুক্ত বাংলাদেশ উপহার দেবে। দলকে আমরা একটা ব্র্যান্ডে পরিণত করে সামনে এগিয়ে নিতে চাই। ন্যায় বিচার ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনেই আমাদের দলের লক্ষ্য।
জাপা মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, রাষ্ট্র ক্ষমতার পালাবদলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে দেশের মানুষ আর দেখতে চায়না। জাতীয় পার্টিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায়। তাই দলকে আরো শক্তিশালী করতে নেতা-কর্মীদের আহবান জানান তিনি। বলেন, এরশাদের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়তে জাতীয় পার্টি দূর্বার বেগে এগিয়ে যাচ্ছে। জাতীয় পার্টি দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্খা পূরণে একমাত্র আস্থার শক্তি। আগামী দিনের রাজনীতির মাঠে দুর্ভেদ্য রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে জাপা।
যোগদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- কো-চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নু, বেলাল হোসেন, এনাম জয়নাল আবেদীন, সুলতান মাহমুদ, আল জুবায়ের, এম.এ. রাজ্জাক খান, মাহমুদ আলম, সমরেশ মন্ডল মানিক, ডাঃ মোঃ আব্দুল্লাহ আল ফাত্তাহ, প্রমুখ।
পরে একই মিলনায়তনে জাতীয় পার্টি ঢাকা বিভাগীয় অতিরিক্ত মহাসচিব ও প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা এমপির সভাপতিত্বে জাতীয় পার্টি ঢাকা বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু’র সামনে সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করতে বিভিন্ন দিক তুলে ধরে আলোচনা করেন।