নিউজ ডেস্ক : ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ক্রয়খাতের মূল সমস্যা হচ্ছে রাজনৈতিক প্রভাব, স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশ এবং সিন্ডিকেট। ’
বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ‘সরকারি ক্রয়ে সুশাসন: বাংলাদেশে ই-গভর্নমেন্ট প্রোকিউরমেন্ট (ই-জিপি) কার্যকরতা পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক অনলাইনে প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সরকারি ক্রয়খাতের মূল সমস্যা রাজনৈতিক প্রভাব। রাজনৈতিক সরকারি ক্রয়খাতে মূল ভূমিকা পালন করছে। এর সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশ এবং সিন্ডিকেট এখনো কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করছে। আমরা যদি সত্যিকার অর্থে ই-জিপি কার্যকর করতে চাই, তাহলে আমি দৃঢ়ভাবে মনে করি, ই-জিপিকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে। একইসঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশ এবং সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। ’
তিনি বলেন, ‘সরকারি ক্রয়খাতের সঙ্গে জড়িত সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর আয় এবং ব্যয়ের হিসাব জমা দিতে হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রকাশ করতে হবে। ই-জিপির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সবার ক্ষেত্রে এটা বিশেষভাবে প্রযোজ্য। যখন তাদের বৈধ আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্য সম্পদ পাওয়া যাবে, তখন যেন যথাযথ প্রক্রিয়ায় দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়। ’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন যাবত জোরালো ভাবে বলে আসছি, যারা জনপ্রতিনিধি, বা জনগুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে অধিষ্ঠিত ব্যক্তি তাদের কোনোভাবেই সরকারের সঙ্গে ব্যবসায় যাওয়া উচিত নয়। এটা অনৈতিক, নিয়মের বিরুদ্ধে এবং দুর্নীতির সবচেয়ে বড় উপাদান। বাংলাদেশে এটা বন্ধ হোক আমরা সেটাই চাইবো। ’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সরকারি ক্রয়খাতে বিশ্বব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। তবে বিশ্বব্যাংক হাত দিলেই বা টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিলেই যে দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যাবে এমন কোনো দৃষ্টান্ত নেই। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বিশ্বব্যাপী যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে, প্রায় প্রতিটা দেশেই দুর্নীতির ব্যাপকতা রয়েছে। কাজেই এটা কোনো ম্যাজিক বুলেট নয়। ’
‘সরকারি ক্রয়ে সুশাসন: বাংলাদেশে ই-গভর্নমেন্ট প্রোকিউরমেন্ট (ই-জিপি) কার্যকরতা পর্যবেক্ষণ’ প্রতিবেদনটির গবেষক দলে ছিলেন রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম, ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাহিদ শারমীন এবং ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. শহিদুল ইসলাম।
এ গবেষণার প্রধান উদ্দেশ্য বাংলাদেশের সরকারি ক্রয়খাতে সুশাসনের আঙ্গিকে ই-জিপির প্রয়োগ ও কার্যকারিতা পর্যালোচনা করা। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে ক্রয় আইন ও বিধি অনুযায়ী ই-জিপি কতটুকু অনুসরণ করা হয় তা চিহ্নিত করা। ই-জিপি যথাযথভাবে অনুসরণ না হলে তার কারণ অনুসন্ধান করা; বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে ই-জিপির কার্যকারিতা পর্যালোচনা এবং ই-জিপির প্রয়োগে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণের উপায় সুপারিশ করা।
টিআইবির গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী সুপারিশে বলা হয়, প্রত্যেক ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানকে ই-জিপি গাইডলাইন অনুযায়ী নিরীক্ষা করাতে হবে। দরপত্র সংক্রান্ত সব তথ্য ও সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের জন্য স্বপ্রণোদিতভাবে প্রকাশ করতে হবে। প্রত্যেক ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের ই-জিপির সঙ্গে জড়িত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিজস্ব ও পরিবারের অন্য সদস্যদের আয় ও সম্পদের বিবরণী প্রতিবছর শেষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে ও তা প্রকাশ করতে হবে। প্রত্যেক ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম স্থানীয় পর্যায়ে তদারকি করতে হবে এবং এ প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ থাকতে হবে। এর জন্য স্থানীয় জনগণের পক্ষ থেকে তদারকির (কমিউনিটি মনিটরিং) চর্চা শুরু করা যেতে পারে। একইভাবে প্রত্যেক ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিতভাবে গণশুনানি আয়োজন করতে হবে।
প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে অনলাইনে আরও যুক্ত ছিলেন টিআইবির ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, রিসার্চ অ্যান্ড পলিসির পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান এবং আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন ডিরেক্টর শেখ মঞ্জুর ই আলম প্রমুখ।