নিউজ ডেস্ক : ঢাকা ওয়াসায় দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও সুশাসন নিশ্চিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সব ধরনের চুক্তিভিত্তিক পদে নিয়োগে আইনের যথাযথ অনুসরণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
সোমবার (২০ জুলাই) এক বিবৃতিতে এ দাবি জানায় সংস্থাটি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিতর্কিত নিয়োগের পর প্রশ্নবিদ্ধ প্রক্রিয়ায় টানা পাঁচ মেয়াদে ১১ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে ও অন্য নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, প্রতিবারই তার নিয়োগ নবায়নের ক্ষেত্রে কোনো না কোনোভাবে আইন ও নিয়মের ব্যত্যয় হয়েছে। এমনকি প্রথমবার নিয়োগের সময়ই অনিয়মের অভিযোগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে পরবর্তী নিয়োগে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য দালিলিক নির্দেশ দেওয়া হয়। তারপরও কখনো বয়সসীমা বাড়িয়ে, আবার কখনো বোর্ডের সাম্প্রতিক সভার সুপারিশ পাশ কাটিয়ে পুরনো সভার সুপারিশ ব্যবহার করে, এমনকি বোর্ডের মতামত গ্রহণেরই তোয়াক্কা না করে প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশে সরাসরি চাপিয়ে দেওয়া মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তবলে পুনর্নিয়োগ নিশ্চিত করা হয়। এটি শুধু আইনেরই সুস্পষ্ট ব্যত্যয় নয়, বরং ক্ষমতার অপব্যবহার ও যোগসাজশের সংস্কৃতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের দৃষ্টান্ত।
পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইন, ১৯৯৬ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী ঢাকা ওয়াসা বোর্ডকে নীতিমালা প্রণয়ন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগসহ নানাবিধ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগে ২০১৩ সালে বোর্ডের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ছাড়াই মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়োগ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে বোর্ডের সম্মতি না থাকা সত্ত্বেও মন্ত্রণালয় ২০১২ সালের ১৯৮তম বোর্ড সভার তামাদি সুপারিশ আমলে নিয়ে তার পুনর্নিয়োগ নিশ্চিত করে। আইন অনুযায়ী বোর্ডই প্রার্থী চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ের নিকট অনুমোদনের জন্য পাঠানোর কথা। কিন্তু ২০১৭ সালেও বোর্ডের সুপারিশ ছাড়াই মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ সংক্রান্ত অভিযোগ বিভিন্ন গণমাধ্যমসহ টিআইবির ‘ঢাকা ওয়াসা: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে। কিন্তু তারপরও কোন এক অদৃশ্য ক্ষমতাবলে বারবার আইনের ব্যত্যয় করে প্রতিবারই তার নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে।
অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানের বোর্ডের পক্ষ থেকেও তার ওপর অর্পিত ও প্রত্যাশিত ভূমিকা পালনে তৎপরতা ও কার্যকরতার কোনো দৃষ্টান্ত নেই মর্মে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি বোর্ড বাস্তবে স্বার্থের দ্বন্দের কারণে শীর্ষ কর্মকর্তারই করায়ত্ব বলে এ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক উৎকণ্ঠা রয়েছে।
টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন উল্লেখ করে বিবৃতিতে টিআইবি বলছে, বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালনকালীন মেয়াদে ওয়াসার ছোট-বড় অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন ও সেবা পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভূতপূর্ব বিস্তারের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে এবং তার কোনো কোনো বিষয়ে তদন্ত চলছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সর্বশেষ বর্ধিত মেয়াদ আগামী ১৪ অক্টোবর শেষ হবার আগেই যথানিয়মে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট খাতে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ সম্পন্ন করতে হবে। একইসঙ্গে এ সংস্থার এবং এর সেবাগ্রহীতা জনগণের কল্যাণে বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগ ও অব্যাহত পুনর্নিয়োগ বিষয়ে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ নিরীক্ষা সম্পন্ন করতে হবে। পাশাপাশি ওয়াসার সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর বৈধ আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদের সুষ্ঠু তদন্ত করে অনিয়ম ও দুর্নীতির জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
টিআইবি আশা করে, স্থানীয় সরকার বিভাগ, ঢাকা ওয়াসা ও সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে ঢাকা ওয়াসাকে অধিকতর সেবাধর্মী, গ্রাহকবান্ধব ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার উদ্যোগ নিতে সচেষ্ট হবে।