করোনাকালে দাপ্তরিক দায়িত্বে অক্লান্ত, অবিচল তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা

Print Friendly, PDF & Email

মো. নুরুল আবছার

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস নিমেষেই লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে পুরো পৃথিবী। দুনিয়ায় সবাই আজ সবার থেকে বিচ্ছিন্ন। কেউ কি ভাবতে পেরেছিল এমনটি হবে!

বিভিন্ন দেশ ঘুরে কোভিড-১৯ সংক্রমণ বাংলাদেশে আসার পর, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সরকারের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিরলসভাবে কাজ করছে যাচ্ছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা। সেই সাথে ডাক্তার, পুলিশ, প্রশাসন এবং গণমাধ্যমও সম্মিলিতভাবে কার্যকর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। যেহেতু এখন পর্যন্ত এ রোগীর কার্যকর কোনো ঔষধ নেই তাই সচেতনতা তৈরীই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

দেশের সবচেয়ে প্রাচীনতম ও সর্ববৃহৎ ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম বাংলাদেশ বেতার যেকোন দুর্যোগের মতো করোনাকালেও সচেতনতা সৃষ্টিতে অনন্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ বেতার দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠি থেকে শুরু করে মহানগর পর্যন্ত ১৪ টি আঞ্চলিক কেন্দ্র এবং ৮ টি বিশেষায়িত ইউনিটের মাধ্যমে একাধিক এ.এম এবং এফ.এম ব্যান্ডের সাহায্যে সরকার নির্ধারিত বিভিন্ন স্বাস্থ্য নির্দেশনা নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রচার করে আসছে।

বাংলাদেশ বেতার এই ক্রান্তিকালেও তৃণমূলের জনগণের জন্য সহজবোধ্য, বিনোদনমূলক ও সচেতনতামূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠান নির্মাণ ও প্রচার করছে — যা সত্যিই প্রশংসানীয়। কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া ঘুর্ণিঝড় আম্পানসহ দেশের সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে বেতার উপকূলীয় জনসাধারণের জীবনের জন্য লাইফ লাইনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। এসময়ে সকল ধরনের ছুটি বাতিলপূর্বক ২৪/৭ নিরবচ্ছিন্নভাবে বিশেষ আবহাওয়া বুলেটিন এবং সরকার নির্ধারিত করণীয় প্রচার করা হয়। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় আম্পানেও বেতারে কর্মরত তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাগণ করোনা ভয়কে উপেক্ষা করে নিরবিচ্ছিন্নভাবে সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

করোনাকালীন সময়ে সাধারণ ছুটি ‘লক ডাউন’ ঘোষণা করার পর সরকারের অনেক অফিস বন্ধ থাকলেও তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা বিরামহীন কাজ করে গেছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশ বেতার এক সেকেন্ডের জন্যও তাদের সম্প্রচার কার্যক্রম বন্ধ করেনি। বরং কার্যক্রম আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানে বলা প্রয়োজন তথ্য ক্যাডার কর্মকর্তাদের বড় অংশটা বাংলাদেশ বেতারে কর্মরত।

এছাড়াও কোভিড-১৯ এর এই সময়ে পরিবার পরিজনের কথা চিন্তা না করে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাগণ। কোভিড মোকাবিলায় তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেস উইং, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের গণসংযোগ শাখায় এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ফলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পিআরও, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পিআরওসহ তথ্য ক্যাডারের অনেকে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন।

এদের মধ্যে কয়েকজন আবার সুস্থ হয়ে পুনরায় দাপ্তরিক দায়িত্বে মনোনিবেশ করে জনগণকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তথ্য ক্যাডারের সিনিয়র কর্মকর্তা বেতারের উপ-মহাপরিচালক (অনুষ্ঠান)ও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
এছাড়াও বহির্বিশ্বে প্রবাসী বাংলাদেশীদের করোনাকালীন বিপদ মোকাবিলায়, সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করার জন্য জাতিসংঘের স্থায়ী মিশনসহ বিভিন্ন অ্যাম্বাসিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা।

উল্লেখ্য, তথ্য ক্যাডারের বাংলাদেশ বেতারে কর্মরত কর্মকর্তাদের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশ বেতার “স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র” নামে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মহান মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় ফ্রন্ট নামে খ্যাত ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ ছিল বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের এক বলিষ্ঠ প্রচার কাণ্ডারি।

তারই ধারাবাহিকতায় তথ্য ক্যাডারের বাংলাদেশ বেতারের কর্মকর্তারা আজও বাংলাদেশের যেকোন জাতীয় প্রয়োজনীয়তায় মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলীয়ান হয়ে জনগণের সেবা করাকে নিজেদের ইবাদত মনে করে আসছে এবং এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলেই আমার বিশ্বাস।
বাংলার মাটি থেকে করোনা সংক্রমণ দূরীভূত হোক।

লেখক: সভাপতির একান্ত সচিব,
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি
এবং সহকারী পরিচালক (গণসংযোগ)