নিউজ ডেস্ক : আমন ধান ক্রয়ের ক্ষেত্রে রেকর্ড করেছে সরকার। এবার আমনে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ইতিহাসের সর্বোচ্চ পরিমাণ সোয়া ৬ লাখ টন ধান কেনা হয়েছে।
বুধবার সচিবালয়ে আমন সংগ্রহ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এ তথ্য জানান। এ সময় কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ৬ লাখ ২৬ হাজার ৯৯১ টন আমন ধান সংগ্রহ করব। ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৮ টন সেদ্ধ চাল ও ৪৩ হাজার ৯০০ টন আতপ চাল সংগ্রহ করব। এই উদ্দেশ্য সামনে রেখেই কাজ শুরু করি। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে আমরা তালিকা সংগ্রহ করেছি। মাঠ পর্যায়ের কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা, আমাদের উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাসহ মাঠ পর্যায়ের খাদ্য কর্মকর্তারা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের ২৫টি টিম মাঠে কাজ করেছে তদারকি করার জন্য।’
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ছোটখাট বিচ্যুতি ছাড়া সর্বপ্রথম কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি প্রায় ৬ লাখ ২৭ হাজার টন ধান সংগ্রহ সম্ভব হয়েছে। খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় সবসময় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কাজ করে, আমরা একে অপরের সম্পূরক মনে করি। কারণ কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। কৃষককে ন্যায্যমূল্য দেয়ার জন্যই আমাদের এই প্রয়াস। আশা করি, আমরা সাকসেসফুল হয়েছি।’
‘আমরা ধানের লক্ষ্যমাত্রার ৯৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছি। এছাড়া সেদ্ধ চাল ৯৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ ও আতপ চাল ৯৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ অর্জন করা সম্ভব হয়েছে’ বলেন সাধন চন্দ্র মজুমদার।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আমনে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৬ লাখ ২৬ হাজার ৬৫৭ টন ধান, ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৪০৭ টন সেদ্ধ চাল ও ৪৩ হাজার ৯০০ টন আতপ চাল সংগ্রহ করেছে খাদ্য অধিদফতর।
ধান কেনার ক্ষেত্রে লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করা হয়েছে। ১৬টি উপজেলায় অ্যাপের মাধ্যমে ধান কেনা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘আমরা আমাদের কর্মকৌশল দিয়ে চেষ্টা করেছি। ভুল-ত্রুটি থাকতেই পারে। কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয় একসঙ্গে কাজ করলে যে ভালো কিছু করা যায়, এটা একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আস্তে আস্তে কৃষককে ন্যায্যমূল্য দেয়ার উদ্দেশ্যে যতখানি প্রয়োজন, হয়তো একসময় সবটুকু ধানে চলে যেতে পারি, আমাদের সেই পরিকল্পনা রয়েছে।’
সারাদেশে ধানের সাইলো নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘২০০টি প্যাডি সাইলোর প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে আছে, আমরা হয়তো আগামী অর্থবছর থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে পারব। এতে ৬ হাজার কোটি টাকার বিষয় রয়েছে। আশা করি, এই অর্থবছরে একনেক পার করে নিয়ে সামনের অর্থবছর থেকে বাস্তবায়নে যেতে পারব।’
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘ফসল উৎপাদন করে কৃষক যদি লাভ করতে না পারে তবে তার জীবনের প্রয়োজনগুলো কীভাবে মেটাবে! গত বোরোতে কৃষক দাম পায়নি। তখন থেকেই আমরা গভীরভাবে চিন্তা করছিলাম কীভাবে কৃষকের কাছ থেকে সরাসারি ধান কিনে কিছুটা বেনিফিট তাদের দেয়া যায়। গত বছর বোরো ধান কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। পরিকল্পনা করতে সময় লেগেছিল, তারপরও ভালো সংগ্রহ হয়েছিল। এবার আমনের আগে আমরা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে কোনো মূল্যে চাষির কাছ থেকে ধান কিনতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অত্যন্ত আনন্দের কথা যে গত আড়াই/তিন মাস ধরে ধান সংগ্রহ হচ্ছে। ধানের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রায় ৬ লাখ ২৭ হাজার টন ধান সংগ্রহ হয়েছে। এটা একটা অসাধারণ অর্জন।’
‘আমি আশাবাদী বোরোতেও সফলভাবে চাষির কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করতে পারব। এর প্রভাবে কিছুটা হলেও বাজারের ওপর পড়বে এবং পড়েছে। এই মুহূর্তে মোটা ধান প্রায় ৮০০ টাকা। চিকনটার দাম অস্বাভাবিকভাবে একটু বেশি ১২০০/১৩০০ টাকা। মোটা চালের দাম নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া নেই। কৃষকরাও ভালো দাম পাচ্ছে’ বলেন আব্দুর রাজ্জাক।
বোরো ধান সংগ্রহের জন্য ধানের আর্দ্রতা মাপার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ মিটার কেনা হয়েছে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষকের বাড়ি গিয়ে কৃষি কর্মকর্তা ময়েশ্চার মিটার দিয়ে ধান মেপে দেবে। তারপর কৃষক সরকারি গুদামে সেই ধান পৌঁছে দেবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণ নিয়ে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রকল্পটি যে কোনো দিন একনেকে উঠবে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয় ১০০ কোটি টাকা ছাড় দিয়েছে। আমরা এটা ডিস্ট্রিবিউশন করে দিয়েছি।’
সংবাদ সম্মেলনে খাদ্য সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম, কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান, খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সরোয়ার মাহমুদসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।