নিউজ ডেস্ক : রাজশাহীর পদ্মানদীতে নৌকা ডুবির ঘটনায় আরও একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এই নিয়ে রাজশাহীর পদ্মায় নৌকাডুবির ঘটনায় মৃতের সংখ্যা দুইজনে দাঁড়ালো।
এ ঘটনায় এখনো নিখোঁজ রয়েছে আরও ১০ জন। নিখোঁজদের খুঁজতে পদ্মায় শনিবার (৭ মার্চ) সকাল সাড়ে ৭টা থেকে আবারও উদ্ধার অভিযান শুরু করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা ।
এর আগে শুক্রবার (৬ মার্চ) সন্ধ্যায় ঘটনার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নিখোঁজদের উদ্ধারে অভিযান চলে। পরে মধ্যরাতে উদ্ধার অভিযানের সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়।
শনিবার সকাল থেকে মোট তিনটি ইউনিট আবার উদ্ধার অভিযানের নেমেছে। এর মধ্যে রাজশাহীর চারঘাটের ইউসুফপুর সীমান্তে পদ্মানদী থেকে বোরকা পরা অবস্থায় মধ্যবয়সী এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছে বিজিবির টহল দল। তবে এখনো তার পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি।
বিজিবি-১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়া উদ্দিন মাহমুদ জানান, শুক্রবার রাত থেকেই বিজিবি সদস্যরা নিখোঁজদের উদ্ধারে ঘটনাস্থল থেকে শুরু করে রাজশাহী চারঘাট সীমান্ত পর্যন্ত স্পিডবোট নিয়ে টহল পরিচালনা করছেন। নিখোঁজদের উদ্ধারে অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে তাদের প্রচেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে। চারঘাটের ইউসুফপুর সীমান্তের পদ্মানদী থেকে বোরকা পরিহিত অবস্থায় মাঝবয়সী এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তার পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। তার পরিচয় নিশ্চিতের জন্য শহরের দিকে নিয়ে আসা হচ্ছে বলেও জানান ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক।
এদিকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের বরাত দিয়ে পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হোসেন জানান, শুক্রবার রাতে এ ঘটনায় প্রায় ২৪ জন নিখোঁজ ছিল। তবে রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত বিভিন্নভাবে বেঁচে ফিরেছে আরও ১৪ জন। তাই এখন প্রায় ১০ জন নিখোঁজ রয়েছে।
ঘটনার পর উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ছয়জন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। এছাড়া ঘটনার পর উদ্ধারকৃতদের মধ্যে হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত শিশুর মরদেহ এখন তার মহানগরীর বসুয়ার নিজ বাসায় নেওয়া হয়েছে। শনিবার সকাল ১০টার দিকে বসুয়া জামে মসজিদে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই নিয়ে নৌকাডুবির ঘটনায় মৃতের সংখ্যা এখন পর্যন্ত দাঁড়ালো দু’জনে।
এছাড়া রামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল নৌকার মাঝি খাদিমুল ইসলাম (২৩), রতন আলী (২৮) ও তার স্ত্রী বৃষ্টি খাতুন (২২), সুমন আলী (২৮) ও তার স্ত্রী নাসরিন বেগম (২২) এবং মেয়ে সুমনা আক্তারকে (৬)।আর রতন ও তার স্ত্রী বৃষ্টি খাতুন জীবিত উদ্ধার হলেও তাদের ছয় বছরের মেয়ে মরিয়ম খাতুনকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বাবা-মায়ের সঙ্গে তাকে উদ্ধার করা হয়েছিল। আর মেয়েকে নিয়ে নদীতে সাঁতরে উঠেছিলেন সুমন-নাসরিন দম্পতি।
রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দফতরের উপ-পরিচালক আবদুর রশীদ জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে আবারও উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে। রাজশাহী, রংপুর ও বিআইডব্লিউটির তিনটি ইউনিট যৌথভাবে পদ্মায় উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে। এরমধ্যে রাজশাহী ও রংপুর ফায়ার সার্ভিস এবং বিআইডব্লিউটির পাঁচ সদস্যের একটি ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে রয়েছে। সকাল পর্যন্ত বিজিবি সদস্যরা অজ্ঞাতপরিচয় এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছেন।
এর আগে স্থানীয়দের বরাত দিয়ে রাজশাহী সদর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স জানায়, পদ্মানদীতে বিয়ে বাড়ির দু’টি নৌকা ডুবে যায়। দুই নৌকায় প্রায় ৩৮ জন যাত্রী ছিল। ঘটনার পর উদ্ধার করা হয়েছে ১৪ জনকে। এর মধ্যে রামেক হাসপাতালে নেওয়ার পর মরিয়ম খাতুন নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। রাত পর্যন্ত নিখোঁজ ছিল প্রায় ২৪ জন। তবে শনিবার সকাল পর্যন্ত বিভিন্নভাবে বেঁচে ফিরেছে আরও ১৪ জন। এ ঘটনায় প্রায় ১০ জন নিখোঁজ রয়েছে। তারা শুক্রবার সন্ধ্যায় বরের বাড়িতে বৌ-ভাতের অনুষ্ঠান শেষে নতুন বউ নিয়ে ফিরছিলেন। ফিরোনি অনুষ্ঠানের জন্য বর-কনেসহ কনে পক্ষের লোকজন নদীর ওপারে চরখিদিরপুর থেকে ওপারে থাকা পবা উপজেলার ডাঙেরহাটে ফেরার পথে মহানগরীর রাজপাড়া থানার শ্রীরামপুর এলাকার বিপরীতে থাকা মাঝ নদীতে এ নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে।