দিল্লিতে সহিংসতায় মৃত বেড়ে ১৯

Print Friendly, PDF & Email

নিউজ ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফরের মধ্যে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন (সিএএ) নিয়ে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে যে সংঘাতের সূত্রপাত হয়েছিল, তা আরও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।

গত রবিবার সংঘাত শুরুর পর থেকে এই তিন দিনে এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ মোট ১৯ জন নিহত হয়েছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।

এনডিটিভি জানিয়েছে, এই সংঘাতে আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক মানুষ; হতাহতদের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান উভয়েই রয়েছে।

দফায় দফায় সংঘর্ষে মঙ্গলবার রণক্ষেত্রে রূপ নিয়েছিল দিল্লির মুসলমান অধ্যুষিত উত্তর-পূর্বাঞ্চল। বিবিসি বলছে, দিল্লিতে এমন সহিংসতা গত কয়েক দশকেও দেখা যায়নি।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মঙ্গলবার কয়েকটি এলাকায় সান্ধ্য আইন জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। বিভিন্ন স্থানে মেট্রো স্টেশন বন্ধ রাখা হয়েছে।

উত্তেজনা যেন না ছড়ায়, সেজন্য বেসরকারি টেলিভিশনগুলোকে সংঘাতের খবর প্রচারের ক্ষেত্রে সাবধান করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।

এদিকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এই উন্মত্ততা বন্ধ করে হিন্দু-মুসলিম উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) পাস করার পর থেকে ভারতের মুসলমানরা ক্ষোভে ফুঁসছে। এই আইন বাতিলের দাবিতে নানা কর্মসূচিও চালিয়ে যাচ্ছিল তারা।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি আইনের পক্ষে কর্মসূচি নিয়ে নামলে দেখা দেয় সংঘাত। রোববার সংঘাত শুরুর পরদিনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার প্রথম ভারত সফর শুরু করেন। সেদিনই নিহত হন এক পুলিশ কনস্টেবলসহ চারজন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতি বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে, কেননা ট্রাম্পের সফর হারিয়ে যাচ্ছে সহিংসতার খবরের কাছে।
সোমবারের পর কেন্দ্রীয় সরকার ও পুলিশ সহিংসতা দমনে নানা পদক্ষেপ নিয়েছিল, দিল্লি পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

ট্রাম্প এ মুহূর্তে রাজধানীতে আছেন বলে যত শিগগিরই সম্ভব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার নির্দেশ দিয়েছেন অমিত শাহ, কিন্তু তাতে কাজ হয়নি।

মৌজপুর, ব্রহ্মপুরী, ভজনপুরা চক, গোকুলপুরীসহ বিভিন্ন এলাকায় মঙ্গলবার নতুন করে ব্যাপক সংঘাত বাঁধে বলে ভারতের সংবাদ মাধ্যমের খবর।

মৌজপুরে এক সাংবাদিককে লক্ষ্য করে গুলিও ছোড়ার খবরও এসেছে। এক সাংবাদিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও একজন। মৌজপুরে একাধিক গাড়ি ও দোকানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

গোকুলপুরীর বাজারে আগুন দেওয়া হয়েছে। পুড়েছে বহু দোকান।

দুপুরে সিএএবিরোধী ও সমর্থকদের মধ্যে খণ্ডযুদ্ধে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে ভজনপুরা চক। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বহু দোকান। ভজনপুরা, চাঁদবাগ ও কারাওয়ালনগরের রাস্তায় লাঠি ও রড হাতে দাপিয়ে বেড়িয়েছে মানুষ।

একই পরিস্থিতি দেখা গেছে কারবাল নগরে। ভোররাতে সেখানে একটি টায়ার কারখানায় বিক্ষোভকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন ধরানো হয় বেশ কিছু গাড়িতেও। পুলিশি নিরাপত্তা না পাওয়ায় সেখানে পৌঁছায়নি অগ্নিনির্বাপক বাহিনী।

এনডিটিভি জানায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাফরাবাদ মেট্রো স্টেশন থেকে সিএএবিরোধীদের হটিয়ে মৌজপুরের দিকে এগোচ্ছিল পুলিশ।
মৌজপুরের বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রের নেতৃত্বে সিএএর পক্ষে কর্মসূচি চলছিল। এই বিজেপি নেতা নানা সময়ে ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেওয়ার জন্য সমালোচিত।

সার্বিকপরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে দিল্লি পুলিশ এক বিবৃতিতে বলেছে, “পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে সহিংসতা চলছে বলে ফোনে লাগাতার খবর পাচ্ছি আমরা।”

বিবিসির সাংবাদিক বলেছেন, উত্তর-পূরআব দিল্লিতে পাথর হাতে দল বেঁধে থাকা সিএএ সমর্থক একদল স্লোগান দিচ্ছিল- ‘দালালদের গুলি কর’।

নিহতদের মধ্যে মঙ্গলবার পর্যন্ত চারজনের পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন মুসলমান; তারা হলেন রিকশাচালক শহিদ (২৬) ও দোকানি মোহাম্মদ ফোরকান (৩২)। অন্য দুজন হিন্দু; তারা হলেন পুলিশ কনস্টেবল রতন লাল (৪২) ও বিপণন কর্মকর্তা রাহুল সোলাঙ্কি (২৬)।
সহিংসতা দমনে ব্যর্থতার জন্য পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যাপক সমালোচনা চলছে।

এনডিটিভি বলেছে, আগের দিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যথেষ্ট পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবারও বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষকারীদের তুলনায় অনেক কম পুলিশই দেখা গেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ পুলিশ কর্মকর্তারা তুলেছেন বলে খবর প্রকাশ হলেও না ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন দিল্লির পুলিশ কমিশনার অমূল্য পট্টনায়েক।

সংঘর্ষ চরম আকার ধারণ করায় সোমবারই দিল্লির একাধিক মেট্রো স্টেশন বন্ধ রাখা হয়েছিল। মঙ্গলবারও জাফরাবাদ, মৌজপুর-বাবরপুর, গোকুলপুরী, জোহরি এনক্লেভ ও শিব বিহার স্টেশন বন্ধ রাখা হয়।

উত্তর-পূর্ব দিল্লির সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে।