নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশি নাগরিকদের বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দূতাবাস গর্হিত কাজ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) দেশিদের বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে গ্রহণ করে ‘ঠিক করেনি’।
শনিবার ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণের শুরুতেই রাজধানীর সিটি কলেজ কেন্দ্রে নিজের ভোটটি দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
দূতাবাসে কর্মরত বাংলাদেশিদের বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া বিষয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “যারা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন, তাদের দেশে ভোট কেমন হয় এমন কিছু কিছু নমুনা আমাদের জানা আছে। একটা কাজ তারা ঠিক করেনি। তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে বাংলাদেশি নাগরিক যারা চাকরি করে, তাদেরকে তারা বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসাবে নিয়োগ দিয়েছে অত্যন্ত গর্হিত কাজ করেছে। তারা বিদেশি হয় কি করে? পর্যবেক্ষক হয় কি করে? ওখানে তারা চাকরি করে তাদেরকে তারা বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে পাঠায় কি করে। এটা সঠিক কাজ তারা করেননি।”
শেখ হাসিনা বলেন, “এদের মধ্যে অনেক বৈরী লোক আছে। কারও পিতা হয়তো ৭৫-এ হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বা কেউ ছিলো স্বাধীনতাবিরোধী। মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা চালিয়েছে। তাদের উত্তরসূরী এমন অনেক আছে। তারা রাষ্ট্রদূতদের ওখানে চাকরি করে। তাদের নামও তারা ওখানে দিয়েছে।”
আর নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “সঠিক কাজ তারা করেনি। নির্বাচন কমিশন এটা কীভাবে গ্রহণ করল? আইনে স্পষ্ট বলা আছে, বিদেশি পর্যবেক্ষক মানে বিদেশি হতে হবে। দেশের নাগরিক, কীভাবে তাদের বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে নির্বাচন কমিশন গ্রহণ করেছে তা আমি জানি না। এটা তারা গ্রহণ করে ঠিক করেনি। তাদের উচিত ওই সমস্ত পর্যবেক্ষক যারা বাংলাদেশের নাগরিক বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি করে তাদের পর্যবেক্ষক হিসেবে গ্রহণ না করে এবং তারা ভোট কেন্দ্রে যাতে আসতে না পারে। ভোট দিতে আসতে পারে, কিন্তু পর্যবেক্ষক হিসাবে না।“
শনিবারের ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভোট পর্যবেক্ষণে ১০টি পশ্চিমা দেশের দূতাবাস থেকে নিয়োগ করা ৭৪ জনকে অনুমতি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এদের মধ্যে ২৮ জন বাংলাদেশি, যারা বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি করেন।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা অনুযায়ী আন্তর্জাতিক সংস্থা/কূটনৈতিক মিশনের বিদেশি কর্মকর্তা/কর্মচারীকে বিদেশি পর্যবেক্ষক ও স্থানীয়দের স্থানীয় পর্যবেক্ষক হিসেবে গণ্য করা হবে। তার জন্য দেশি ও বিদেশিদের জন্য আলাদা নীতিমালা অনুযায়ী আবেদন করতে হবে।
কিন্তু ঢাকা সিটির ভোটের ক্ষেত্রে এবার দেশি কর্মীদের বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে আবেদন করেছে দূতাবাসগুলো। নির্বাচন কমিশন সেভাবেই তাদের জন্য পরিচয়পত্র ইস্যু করেছে। বিষয়টি ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক একজন নির্বাচন কমিশনার।
এই ভুলের দায়ভার দূতাবাসগুলোর নেওয়া উচিৎ বলে মনে করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তা যেসব বাংলাদেশি ‘বিদেশি পর্যবেক্ষক’ হিসেবে নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন নিয়েছেন, তাদের নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলে না রাখার আহ্বান জানিয়ে বৃহস্পতিবার বিদেশি মিশনগুলোতে চিঠিও পাঠিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সব কূটনৈতিক মিশনে বৃহস্পতিবার পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ২০১৮ সালের বিদেশিদের জন্য নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা অনুযায়ী, দূতাবাসের কোনো বাংলাদেশি কর্মী আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক হিসাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পারবে না।