ঢাকার ম‌ঞ্চে দুই বাংলার তারকাদের ঢল

Print Friendly, PDF & Email

নিউজ ডেস্ক : প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে বসেছে ‘ভারত-বাংলাদেশ ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডস (বিবিএফএ)’-এর আসর। সোমবার সন্ধ্যায় বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারের নবরাত্রী মিলনায়তনে বসে দুই বাংলার চলচ্চিত্রের এই অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠিত হয়।

ফিল্ম ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া ও বসুন্ধরা গ্রুপের উদ্যোগে এ পুরস্কার অনুষ্ঠানটি নিবেদন করছে টিএম ফিল্মস। বাংলা‌দে‌শ ও ভার‌তের জাতীয় সংগী‌তের মাধ্য‌মে রাত ৮টায় শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপর বঙ্গবন্ধু‌কে নি‌য়ে এক‌টি প্রামাণ্য‌চিত্র দেখানো হয়।

পরে প‌রিচয় ক‌রি‌য়ে দেওয়া হয় এই অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠা‌নের জু‌রি‌বো‌র্ডের সদস্য‌দের স‌ঙ্গে। বাংলাদেশ থেকে জুরি বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন আলমগীর, কবরী, ইমদাদুল হক মিলন, খোরশেদ আলম খসরু ও হাসিবুর রেজা কল্লোল। অন্যদিকে, ভারত থেকে ছিলেন গৌতম ঘোষ, ব্রাত্য বসু, গৌতম ভট্টাচার্য, অঞ্জন বোস ও তনুশ্রী চক্রবর্তী।

সবাই‌কে উত্ত‌রিও প‌রি‌য়ে দেন বাংলা‌দেশ সরকা‌রের তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এরপর একঝাঁক শিল্পী‌কে নি‌য়ে স্টে‌জে হা‌জির হন বালাম। গান গে‌য়ে শোনান তারা।

এরপর স্টে‌জে হা‌জির হন দুই দেশের একঝাঁক তারকা। স্টে‌জে আ‌সেন প্র‌সেন‌জিত, জিৎ, পরব্রত, আ‌বির চ্যাটা‌র্জি, মৌসুমী, জয়া আহসান, নুসরাত ফা‌রিয়া, পরীম‌নি, ওমর সা‌নি, নিরব, ইমন, সিয়াম প্রমুখ।

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা একই ভাষায় কথা বলি। আমরা একই পাখির কলতান শুনি। কিন্তু রাজনৈতিক সীমারেখা আমাদেরকে বিভক্ত করেছে। আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি জলবায়ু ও কিন্তু একই। কিন্তু আমাদের মধ্যে এ ধরনের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান নিশ্চয় আমাদের সাংস্কৃতিক সম্পর্ক দৃঢ় করবে।’

তিনি বলেন, ‌‘এ কারণেই আজকের আয়োজন। এ ধরনের আয়োজন সংস্কৃতি চর্চা চলচ্চিত্র নির্মাণের চর্চার দিক থেকে আমাদের সংস্কৃতিকে আরও বেগবান করবে। চলচ্চিত্র জীবনের কথা বলে, মানুষকে কাঁদায়, হাসায়, চলচ্চিত্র চিন্তার দুয়ার খুলে দেয়। আমার বিশ্বাস এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমাদের সম্পর্ক আরেক নতুন এক মাত্রা উন্মোচন করবে।’

কলকাতার জনপ্রিয় নির্মাতা গৌতম ঘোষ বলেন, ‘সিনেমার যে সময় সেটা আশ্চর্য ম্যাজিক। যেটা এক হাজার বছরের গল্প দু’বছরে বলা যায়। পাঁচ মিনিটের গল্প দুই ঘণ্টায় বলা যায়। সিনেমায় আমরা সময়কে সংকুচিত করতে পারি। আবার প্রসারিত করতে পারি। এক আশ্চর্যজনক মাধ্যমে আমরা কাজ করি।

সিনেমা কি সত্যি দুই বাংলার মানুষের মধ্যে প্রীতি ও মিলন বয়ে আনতে পেরেছে কি? এটা নিয়ে একটা লেখা আরও আগেই লিখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সময়ের কারণে হয়ে উঠেনি। সিনেমা আমাদের একত্রিত করে দিবে, মানুষের মধ্যে আর কোন বিভেদ থাকবে না। সিনেমা যে কাজটা করতে পারে সেটা হলো আমাদের স্মৃতিমালাকে একত্রিত করতে পারে। আর সেই প্রত্যাশাই রইলো।’

কলকাতার জনপ্রিয় নির্মাতা গৌতম ঘোষ বলেন, ‘সিনেমার যে সময় সেটা আশ্চর্য ম্যাজিক। যেখা‌নে এক হাজার বছরের গল্প দু ঘন্টায় বলা যায়। পাঁচ মিনিটের গল্প দুই ঘণ্টায় বলা যায়। সিনেমায় আমরা সময়কে সংকুচিত করতে পারি। আবার প্রসারিত করতে পারি। এক আশ্চর্যজনক মাধ্যমে আমরা কাজ করি। সিনেমা কি সত্যি দুই বাংলার মানুষের মধ্যে প্রীতি ও মিলন বয়ে আনতে পেরেছে?

এটা নিয়ে একটা লেখা আরও আগেই লিখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সময়ের কারণে হয়ে উঠেনি। সিনেমা আমাদের একত্রিত করে দিবে, মানুষের মধ্যে আর কোন বিভেদ থাকবে না। সিনেমা যে কাজটা করতে পারে সেটা হলো আমাদের স্মৃতিমালাকে একত্রিত করতে পারে।’

পশ্চিমবঙ্গের পর্যটক মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে দুই বাংলার দারুণ এক সম্পর্ক ফুটে উঠেছে। আমাদের দুই বাংলার ইতিহাস ও সম্প্রীতি এ আয়োজনের মধ্য আরও দৃঢ হবে। এই ঢাকা শহরে ১৯৬৫ সালে প্রথম চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন হয়েছিল। যেখানে সত্যজিৎ রায় উপস্থিত ছিলেন। এই শহরেই আবার তেমন একটি অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে। এটা বেশ আনন্দের।

দুই বাংলার সংস্কৃতিতে একটা সময় অস্থিরতা ছিল। কিন্তু সেটা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দূর হয়ে গিয়েছে। সামনের দিনগুলোতে তা আরও দৃঢ হবে। সিনেমা তো শিল্পী, একে চর্চা করতে হয়। এছাড়া তো একে আর সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কেন পথ নেই। আগে কিন্তু একটা সময় ছিল, ভালো কাজ হলে দুই বাংলাতেই টের পাওয়া যেত।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্যে রাখেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড.মাহফুজুর রহমান, ফিল্ম ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার সভাপতি ফিরদাউসুল হাসান ও বিবিএফএ এর সমন্বয়ক তপন রায়।

আয়োজনটি প্রসঙ্গে ফিল্ম ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার সভাপতি ফিরদাউসুল হাসান বলেন, ‘বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের মধ্যে এমন সাংস্কৃতিক সম্মেলন আরও আগেই হওয়া উচিত ছিল। তবে এবার সেটা হচ্ছে এবং বেশ বড়সড় আয়োজনের মধ্যদিয়েই হচ্ছে। আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই, দুই দেশের সংস্কৃতিপ্রাণ প্রতিটি মানুষের কাছে। যাদের সহযোগিতা আর সমর্থন ছাড়া এত বড় আয়োজন করা মুশকিলের বিষয় ছিল। আমার বিশ্বাস, এই আয়োজনটির মাধ্যমে আমাদের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ পুরনো সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করবে।’

এখা‌নে পপুলার, টেকনিক্যাল ও রিজিওনাল- এই তিন ক্যাটাগরিতে মোট ২৪টি বিভাগে দুই দেশের শিল্পী-কুশলীদের পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে। ২০১৮ সালের জুন মাস থেকে চলতি বছরের (২০১৯) জুন মাস পর্যন্ত ভারত ও বাংলাদেশে মুক্তি পাওয়া বাংলা চলচ্চিত্রগুলো থেকে এসব পুরস্কার বাছাই করা হয়ে‌ছে।

অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছি‌লেন কলকাতার মীর আফসার আলি ও বাংলাদেশের শাহরিয়ার নাজিম জয়। দুজনের সঙ্গে উপস্থাপনায় আরও ছিলেন কলকাতার গার্গি রায় চৌধুরী ও ঢাকার শান্তা জাহান।

এদিকে এই আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে‌ছে টিএম‌ ফিল্মস। এপ্রসঙ্গে টিএম ফিল্মসের চেয়ারপার্সন ফারজানা মুন্নী বলেন, ‘প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুই দেশের চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি প্রদান অনুষ্ঠান। ঠিক একই সময়ে চলচ্চিত্রের পথে পা বাড়িয়েছে আমাদের টিএম ফিল্মস।’