অসংক্রামক ব্যাধির ওপর প্রথম বৈজ্ঞানিক কংগ্রেস

Print Friendly, PDF & Email

নিউজ ডেস্ক : অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ে দেশের প্রথমবারের মতো সায়েন্টিফিক কংগ্রেস আয়োজন করতে যাচ্ছে ক্লিনিকাল রিসার্চ প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ। আগামী ১৯-২১ অক্টোবর ঢাকায় ‘১ম সায়েন্টিফিক কংগ্রেস অন নন-কমিউনিকেবল ডিজিজেস’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী এই কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে। বিএসএমএমইউতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়া হয়।

আইসিডিডিআর,বি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এবং ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালের (বিএমজে) একটি যৌথ উদ্যোগ হচ্ছে ‘ক্লিনিকাল রিসার্চ প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ’।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অসংক্রামক ব্যাধি বিষয়ে প্রথম বৈজ্ঞানিক কংগ্রেসের লক্ষ্য হলো, একটি শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক প্ল্যাটফর্ম তৈরির মাধ্যমে দেশের চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষকদের মধ্যে গবেষণা সহযোগিতা জোরদার করা। কংগ্রসের মাধ্যমে অসংক্রামক ব্যাধি বিষয়ক বিভিন্ন সেমিনাল কাজগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মাঝে উপস্থাপন ও পরামর্শের সুযোগ থাকছে। এই কংগ্রেস বাংলাদেশে অসংক্রামক ব্যাধি মোকাবেলা করার জন্য নানান ব্যবহারিক কৌশল বিকাশে সহায়তা করবে এবং এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা ৩.৪ অর্জন করা, প্রতিরোধ ও চিকিৎসার মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগের কারণে অকাল মৃত্যু এক-তৃতীয়াংশ হ্রাস করা এবং মানসিক স্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে সহায়তা প্রদান করে লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবে।

কংগ্রেসের জন্য যে ৯টি মূল প্রতিপাদ্য নির্বাচন করা হয়েছে সেগুলো হলো- ১. হাইপারটেনশন ও কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, ২. বাংলাদেশে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ, ৩. স্ট্রোক ও অন্যান্য স্নায়বিক রোগ, ৪. মানসিক স্বাস্থ্য ও নিউরো বিকাশসংক্রান্ত ব্যাধি, ৫. দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ, ৬. রিউম্যাটোলজি ও পেশীসংশ্লিষ্ট ব্যাধি, ৭. দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসজনিত রোগ, ৮. অনকোলজি এবং ৯. বাংলাদেশে এনসিডি’র প্রমাণ: প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ।

২০১০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগজনিত মৃত্যুর হার বেড়েছে ৮.৭ শতাংশ (৫৮.৩ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৬৬.৯ শতাংশ)। ২০১৫ সালের এক হিসাব অনুসারে, ২৫ বছরের বা তার বেশি বয়সের প্রতি চারজনের মধ্যে একজন বাংলাদেশের নাগরিক হাইপারটেনসিভ বা উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগছে। এখানে প্রতি দশ জনের একজনের ডায়াবেটিস আছে। দীর্ঘস্থায়ী ক্রনিক পালমোনারি ডিজিজের (সিওপিডি) মাত্রা গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে ১৩.৫ শতাংশ। ক্যানসারের প্রকোপও খুব বেশি, এক লাখ তিরিশ হাজার থেকে দেড় লাখের মতো রোগী ক্যানসারে আক্রান্ত, এছাড়াও প্রতিবছর নতুন করে যুক্ত হচ্ছেন প্রায় দুই লাখ ক্যানসার রোগী।

কিডনি ফাউন্ডেশনের তথ্যানুযায়ী, দেশে ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত, যার মধ্যে প্রতি বছর ৩৫,০০০ থেকে ৪০,০০০ হাজার রোগী দীর্ঘমেয়াদী কিডনি সংক্রান্ত সমস্যায় আক্রান্ত।

সংবাদ সম্মেলনে বিএসএমএমইউর উপাচার্য ও কংগ্রেসের চেয়ার প্রফেসর কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘সবাই অনুধাবন করেন যে বাংলাদেশের জনগণের উপযোগী ও তথ্যপ্রমাণ নির্ভর কার্যক্রম ও চিকিৎসাই কেবলমাত্র অসংক্রামক ব্যাধি সংশ্লিষ্ট মৃত্যুহার ও অসুস্থতা হ্রাস করতে পারে। ক্লিনিকাল রিসার্চ প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের মাধ্যমে চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য গবেষকদের মধ্যে গবেষণার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা একটি নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে এবং অসংক্রামক ব্যাধি গবেষণার জন্য নতুন দিগন্ত উন্মুক্ত করেছে।’

আইসিডিডিআর,বি-এর ইনিশিয়েটিভ ফর নন-কমিউনিকেবল ডিজিজেসের প্রধান ডা. আলিয়া নাহিদ বলেন, ‘গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগ সম্পর্কিত সচেতনতা ও চিকিৎসার মাত্রা বৃদ্ধি পেলেও আমাদের সামনে এখনও বিশাল চ্যালেঞ্জ রয়েছে। দেশে অপরিণত মৃত্যুহার কমানো এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা ৩.৪ অর্জন করা বেশ বড় চ্যালেঞ্জ। আমি আশা করছি, আমরা প্রত্যাশিত লক্ষ্য অর্জনে যে গতিতে এগোচ্ছি তা ধরে রাখতে পারবো এবং সবাই একত্রে লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হব।’

এই বৈজ্ঞানিক কংগ্রেস আগামী ১৯ অক্টোবর, ঢাকার মহাখালীর আইসিডিডিআর,বি-এর সাসাকাওয়া মিলনায়তনে গবেষণাপত্র প্রকাশ করার ওপর কর্মশালার মাধ্যমে শুরু হবে। ২০ অক্টোবর কংগ্রেসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে বিএসএমএমইউ শহীদ ডা. মিলন মিলনায়তনে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) সভাপতি ও সাবেক উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. সৈয়দ মোদাস্সের আলী এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম।

সমাপনী অধিবেশনে পুরষ্কার প্রদানের আয়োজন অনুষ্ঠিত হবে ২১ অক্টোবর। সমাপনী আয়োজনে থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কাজী শহীদুল­াহ। এছাড়াও বিশেষ অতিথি থাকবেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মেডিকেল শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব শেখ ইউসুফ হারুন এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ।