নিউজ ডেস্ক : আসামে জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকরণের (এনআরসি) প্রতিবাদে ইতোমধ্যে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির বিরোধী শিবিরগুলো একাট্টা হয়েছে। আর এর শুরু হয়েছে রাজ্য বিধানসভার অধিবেশনে। অধিবেশন থেকেই এনআরসি প্রশ্নে বিজেপি বিরোধী ঐক্যের ডাক দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।
এবার শোনা গেল, শুধু আনুষ্ঠানিক বিরোধিতাই নয়, দলকে রাস্তায় নামিয়ে এনআরসি প্রতিবাদে শামিল করতে চাইছেন তিনি। কলকাতা থেকে প্রকাশিত বর্তমান পত্রিকা জানিয়েছে, আগামী ১২ সেপ্টেম্বর দলের প্রতিবাদ মিছিলে নেতৃত্ব দেবেন স্বয়ং মমতা।
বিগত লোকসভা ভোটের পর এই প্রথম সরাসরি বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে পথে নামতে চলেছেন মমতা।
গত লোকসভা নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন বিজেপিবিরোধী ঐক্য গঠনে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন মমতা। এজন্য ব্রিগেড প্যারেড ময়দানে কংগ্রেসসহ দেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক দলকে একমঞ্চে হাজির করেছিলেন তিনি। তবে সেই ঐক্যপ্রচেষ্টা অবশ্য সফল হয়নি। কিন্তু বিজেপিবিরোধী সংগ্রামে তার অবস্থানে অটল মমতা এবার এনআরসিকে অস্ত্র করেছেন।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর ভাষ্য, বাংলা ও বাঙালি বিদ্বেষ থেকেই বিজেপি তার রাজ্যেও এনআরসি প্রক্রিয়া চালু করতে চাইছে। ধর্মের বিভাজনই এনআরসির প্রধান উদ্দেশ্য। তবে কোনোভাবেই বাংলায় এই বিভাজন করতে দেবেন না।
বিধানসভাতে এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি তার কট্টর বিরোধী রাজ্য কংগ্রেস ও বামপন্থীদের পাশে দাঁড় করাতে সমর্থ হয়েছেন। ফলে এনআরসিকে ঘিরে রাজ্যস্তরে রাজনৈতিক মেরুকরণে আপাতত সফল মমতা বন্দোপাধ্যায়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এনআরসি বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের সঙ্গে তার সংঘাতকে তীব্রতর করতে চান মমতা। যদিও কংগ্রেস ও বামেরা তার সঙ্গে এই বিষয়ভিত্তিক ঐক্যের প্রশ্নে সহমত নয়। কিন্তু রাজ্যে সর্ববৃহৎ দল হওয়ায় এনআরসি নিয়ে মমতার ভূমিকা বাংলায় বাড়তি গুরুত্ব আদায় করে নেবে বলেই মনে করা হচ্ছে। কেননা ইতোমধ্যেই রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ বাংলায় এনআরসির পক্ষে সরব হয়েছেন। বিধানসভা অধিবেশনে বিজেপির পরিষদীয় নেতা মনোজ টিগ্গা আনুষ্ঠানিকভাবে রাজ্যে অনুপ্রবেশ রুখতে এনআরসির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। বিজেপি-তৃণমূল সংঘাতের আবহেই মমতা এনআরসি রোখার দাবিতে জনমত গঠনে পথে নামছেন। উত্তর কলকাতার চিড়িয়ামোড় থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত মিছিল করবেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে রাজ্যের নানা প্রান্তে এনআরসির বিরুদ্ধে মিছিল করতে শুরু করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের শহীদ দিবসের কর্মসূচির পরপরই ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির মাধ্যমে জনসংযোগ শুরু করেছে তৃণমূল। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাদের পথে নামতে দেখা যায়নি। সেই অর্থে লোকসভা ভোটের পর আগামী বৃহস্পতিবারই (১২ সেপ্টেম্বর) সরাসরি গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামতে চলেছে রাজ্যের শাসক দল।