নিউজ ডেস্ক : দেশের ২৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তিতে সর্তকর্তা জারি করেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। আইন অমান্য, আউটার ক্যাম্পাস বহাল রাখা, অনুমোদনহীন বিষয় চালু, মামলাসহ বিভিন্ন কারণে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হতে বলা হয়েছে।
ভর্তি হলে শিক্ষার্থীদের সনদের বৈধতা ও তার দায়-দায়িত্ব ইউজিসি গ্রহণ করবে না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ইউজিসির ওয়েবসাইটে এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
জানা গেছে, চিহ্নিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে কয়েকটির বিরুদ্ধে অবৈধ ক্যাম্পাস চালানোর অভিযোগ রয়েছে। কোনোটির বিরুদ্ধে আছে অননুমোদিত প্রোগ্রাম চালানোর অভিযোগ। কয়েকটি আবার শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের নির্দেশপ্রাপ্ত। সনদ বাণিজ্যসহ নানা অপরাধে কয়েকটি অভিযুক্ত এবং বন্ধ ঘোষিত। কিন্তু উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে সেগুলো পরিচালিত হচ্ছে। আবার মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বের অভিযোগ আছে কয়েকটির বিরুদ্ধে। নানা অভিযোগে বন্ধের সুপারিশপ্রাপ্তও আছে কয়েকটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) ফেরদৌস জামান বলেন, ‘মূলত ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে আমরা একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছি। যাতে বৈধ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারে। এ কারণে অবৈধ আর ঝামেলাযুক্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উল্লেখ করে ইউজিসির ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এর বাইরে যে সব বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে সেখানে ভর্তি হলে সার্টিফিকেট বৈধতা নিয়ে কোনো বির্তক থাকবে না, বিষয়টি অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের অবগত করতে বৃহস্পতিবার ইউজিসির ওয়েবসাইটে এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। আগামীকাল শুক্রবার বিভিন্ন দৈনিকে এ বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।’
তালিকায় নতুন ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়
কালো তালিকার মধ্যে ৯টি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এগুলো এখনও কার্যক্রম শুরু করেনি। এগুলো হচ্ছে- রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়, নারায়ণগঞ্জের রূপায়ন একেএম শামসুজ্জোহা বিশ্ববিদ্যালয়, জেডএনআরএফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস, রাজশাহীর আহছানিয়া মিশন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহীর শাহ মখদুম ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটি, খুলনা খান বাহাদুর আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশালের ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল স্টান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইউনিভার্সিটি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি কর্মকর্তারা জানান, কোনো বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পাওয়ার পরে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর জন্য অনুমতি নিতে হয়। উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানগুলো সেই অনুমতি এখনও পায়নি।
বিওটি নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং আদালতে মামলা
পরিচালনা পর্যদ (বিওটি) নিয়ে দ্বন্দ্ব ও আদালতে মামলা বিচারাধীন আছে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলো হলো- সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এবং সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ও ইবাইস ইউনিভার্সিটি।
অননুমোদিত ক্যাম্পাস
অননুমোদিত ক্যাম্পাস থাকায় ১০ বিশ্ববিদ্যালয়কে কালো তালিকার মধ্যে রাখা হয়েছে। তার মধ্যে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া বনানীর ১৭ নম্বর রোডে অননুমোদিত ক্যাম্পাস চালাচ্ছে। এ ছাড়াও ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (উত্তরা), ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ (ধানমন্ডি), ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি (ধানমন্ডি), ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (সোবাহানবাগ), এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (উত্তরা), উত্তরা ইউনিভার্সিটি (উত্তরা), এনপিআই ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (ফার্মগেট), শান্ত মরিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি (উত্তরা) এবং ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (পান্থপথ)।
অবৈধ ক্যাম্পাস ও আদালতের স্থগিতাদের নিয়ে পরিচালিত
অবৈধ ক্যাম্পাস ও আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে চারটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে। সেগুলো হচ্ছে ইবাইস ইউনিভার্সিটি- বিওটি নিয়ে দ্বন্দ্ব ও দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছে। আর বন্ধ করে দেয়ার পরও আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি ও দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা ও সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে।
অননুমোদিত কোর্স পরিচালনা
অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়েছে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেগুলো হচ্ছে- সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও জেডএইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি পায়নি
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমিত দেয়া হয়নি দুটি বিশ্ববিদ্যালয়কে। সেগুলো হচ্ছে- কুইন্স ইউনিভার্সিটি ও দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা। কিন্তু এসব বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন ছাড়াই শিক্ষার্থী ভর্তি করাচ্ছে বলে বিজ্ঞপ্তিতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়াও গণবিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনুমোদিত কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। ভর্তির আগে সেসব কোর্সের অনুমোদন আছে কি না তা ইউজিসির ওয়েবসাইটে যাচাই করার আহ্বান জানিয়েছে ইউজিসি।