নিউজ ডেস্ক : বাসচাপায় পা হারানো প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারকে ক্ষতিপূরণের প্রথম কিস্তির পাঁচ লাখ টাকা এক সপ্তাহের মধ্যে পরিশোধ করতে গ্রিনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
গ্রিনলাইন পরিবহনের নতুন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক রবিবার ওকালতনামা দাখিল করে এক সপ্তাহের সময় চাইলে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
ক্ষতিপূরণের ৫০ লাখ টাকা থেকে গ্রিনলাইন রাসেলকে পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছে। মাসিক পাঁচ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণের বাকি টাকা পরিশোধের নির্দেশ ছিল হাই কোর্টের।
কিস্তির টাকা প্রতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করে বাস্তবায়ন প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ থাকলেও আর টাকা গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষ দেয়নি রাসেলকে।
গ্রিনলাইন আদালতের নির্দেশ না মানায় তাদের আইনজীবী অজি উল্লাহ গত ১৬ নিজেকে মামলা থেকে প্রত্যাহার করে নেন।
ওইদিন আদালত রবিবার পরবর্তী আদেশের জন্য রেখেছিল।
সে অনুযায়ী মামলাটি শুনানির জন্য উঠলে আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক গ্রিনলাইন পরিবহনের পক্ষে ওকালতনামা দাখিল করে এক সপ্তাহের সময় চান।
এ সময় বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারক কে এম কামরুল কাদের কিস্তি পরিশোধ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে এ আইনজীবী বলেন, তিনি এ বিষয়ে গ্রিনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি।
বিচারক বলেন, “আপনারা টাকা দিলেন না কেন? টাকা যাতে পরিশোধ করে তার জন্য কিস্তি করে দিলাম।”
আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল ক্ষতিপূরণের রুল শুনানির আরজি জানালে বিচারক বলেন, “না, টাকা দিতে থাকেন। আগে আদেশ বাস্তবায়ন করে আসুন। এসব আমরা জানি। টাকা দেননি কেন?”
গ্রিনলাইনের আইনজীবী বলেন, “আসলে কিছু অসুবিধার জন্য যোগাযোগ করতে পারিনি। এক সপ্তাহের দিন।”
এরপর আদালত আগামী ২৮ জুলাই পরবর্তী আদেশের জন্য রেখে এই সময়ের মধ্যে ক্ষতিপূরণের প্রথম কিস্তি পরিশোধের আদেশ বাস্তবায়ন করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
রিটকারী পক্ষের আইনজীবী খোন্দকার শামসুল হক রেজা বলেন, “গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষ আমদের সাথে কোনো যোগাযোগ করেনি। আজ আবার নতুন করে আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছে।
“এই আইনজীবীর সময় আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত আগামী ২৮ জুলাই পরবর্তী আদেশের জন্য রেখেছেন। এই সময়ের মধ্যে তাদের কিস্তি পরিশোধের আদেশ বাস্তবায়ন করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।”
এর পরেও কিস্তি পরিশোধ না করলে গ্রিনলাইনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ তুলবেন বলে জানান আইনজীবী খোন্দকার শামসুল হক রেজা।
গত বছরের ২৮ এপ্রিল যাত্রাবাড়ীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে গ্রিনলাইন পরিবহনের একটি বাস চাপা দেয় প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারকে। তাকে বাঁচাতে একটি পা কেটে ফেলতে বাধ্য হন চিকিৎসকরা।
রাসেলের জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে সাবেক সাংসদ উম্মে কুলসুমের করা এক রিট আবেদনে চিকিৎসা খরচ বাদেও ৫০ লাখ টাকা দিতে গ্রিনলাইনকে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। পরে আপিল বিভাগেও ওই আদেশ বহাল থাকে।
এরপর গত ১০ এপ্রিল রাসেল সরকারকে পাঁচ লাখ টাকা পরিশোধ করে গ্রিনলাইন, বাকি ৪৫ লাখ টাকা পরিশোধের জন্য এক মাস সময় পায়।
ওই সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও কোনো অর্থ তারা পরিশোধ না করায় গত ১৫ মে আদালত আরও সাতদিন সময় দিয়ে পুরো অর্থ পরিশোধের বিষয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছিল।
এরপরও গ্রিনলাইন পরিবহন পা হারানো রাসেলকে কোনো টাকা না দেওয়ায় সর্বশেষ গত ২৫ জুন ক্ষতিপূরণের টাকা কিস্তিতে পরিশোধের আদেশ দিয়েছিল আদালত।