নিউজ ডেস্ক : দেশের পাঁচ জেলায় বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাতে বাবা-ছেলেসহ ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে পাবনায় চারজন, ময়মনসিংহে তিনজন, চুয়াডাঙ্গায় তিনজন ও রাজশাহীতে একজন ও সুনামগঞ্জে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
পাবনা : পাবনার বেড়া উপজেলায় বজ্রপাতে বাবা ও দুই ছেলেসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে উপজেলার চাকলা ইউনিয়নের পাচুড়িয়া গ্রামে এ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- মোতালেব সরদার (৫০), তার ছেলে ফরিদ সরদার (২০) ও শরিফ সরদার (১৮) এবং একই গ্রামের রহমত আলী (৫৫)। তাদের সবার বাড়ি বেড়া উপজেলার চাকলা ইউনিয়নের পাচুড়িয়া গ্রামে ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার সকাল থেকে বাবা ও দুই ছেলেসহ চার কৃষক পাচুড়িয়া বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের পাশে একটি ডোবায় পাট ধোয়ার কাজ করছিলেন। দুপুর সোয়া ২টার দিকে বৃষ্টির সঙ্গে হঠাৎ একটি বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই চারজনের মৃত্যু হয়। পরে স্থানীয়রা তাদের মরদেহ উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে যায়।
চাকলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন বলেন, বাবা ও দুই ছেলেসহ চার কৃষক পাচুড়িয়া বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের পাশে একটি ডোবায় পাট ধোয়ার কাজ করছিলেন। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাতে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহে পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। জেলার ফুলপুর ও ফুলবাড়িয়া উপজেলায় শনিবার দুপুরে এ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- ফুলপুরের বওলা ইউনিয়নের রামসোনা গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে সোহাগ মিয়া (২৫), পয়ারী গ্রামের ওয়াহেদ আলীর ছেলে জামাল উদ্দিন (৪০) ও ফুলবাড়িয়া উপজেলার হাতিলেইট গ্রামের মলিন বর্মণের ছেলে চৈতন বর্মণ (২২)। ও তারাকান্দা উপজেলার ধলিরকান্দা গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে চাঁন মিয়া (৫৫)।
স্থানীয়রা জানান, ফুলপুর উপজেলার বওলা ইউনিয়নের রামসোনা গ্রামের হাঁসের খামারি সোহাগ মিয়া শনিবার দুপুরে বাড়ির পাশে পতিত জমিতে হাঁস চড়ানোর সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান। একই উপজেলার পয়ারী ইউনিয়নের পয়ারী গ্রামের কৃষক জামাল উদ্দিন দুপুরে বাড়ির পাশে জমিতে আমন ধানের বীজতলা তৈরি করছিলেন। এ সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
অপরদিকে দুপুরে উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের বড়বিলা বিলে মাছ ধরার সময় বজ্রপাতে চৈতন বর্মণ নামে এক জেলে নিহত হন। নিহতের পরিবার জানায়, বড়বিলা বিলে বুচনা (বাইর) দিয়ে মাছ ধরতে যান দুই ভাই মনু বর্মণ ও চৈতন বর্মণ। দুপুরে হঠাৎ বজ্রপাতে ছোট ভাই চৈতন বর্মণ পানিতে ঢলে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ সময় বড় ভাইয়ের ডাক-চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে তাকে বিল থেকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে।
ফুলপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমরাত হোসেন গাজী, ফুলবাড়িয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার ও তারাকান্দার থানা পুলিশের ওসি মিজানুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাতে তিন কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার বিকেলে উপজেলার বগাদির মাঠে এ ঘটনা ঘটে। নিহতদের সবার বাড়ি মেহেরপুরের কলাইডাঙ্গা গ্রামে।
নিহতরা হলেন- কলাইডাঙ্গা গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে আলামিন হোসেন, বরকত আলীর ছেলে হামিদুল ইসলাম ও মৃত গোলাম মিয়ার ছেলে হোদা মিয়া।
স্থানীয়রা জানান, বিকেলে বগাদির মাঠে ট্রাকে কলা লোড করছিলেন তারা। এ সময় বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত শুরু হয়। এতে গুরুতর আহত হন তারা। তাদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুন্সী আসাদুর রহমান বলেন, বজ্রপাতের কারণে ওই তিনজনের মুত্যু হয়েছে বলে শুনেছি।
রাজশাহী : রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বজ্রপাতে দূরুল হুদা (৪০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের মাছমারা বেনীপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত দুরুল হুদা ওই গ্রামের মৃত ইসাহাক আলীর ছেলে। ঘটনার সময় তিনি জমিতে কাজ করছিলেন বলে জানিয়েছেন মাটিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আযম তৌহিদ।
সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় বজ্রপাতে বাবা ও ছেলের মৃত্যু হয়েছে । শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের মানিকখিলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- মানিকখিলা এলাকার নিয়াজ আলীর ছেলে হারিদুল ইসলাম (৪৭) ও তার ছেলে তারা মিয়া (১২)।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিহত হারিদুল ইসলামের বাড়ির পাশেই একটি চিংড়ির খামার রয়েছে। শনিবার সকালে ছেলে তারা মিয়াকে নিয়ে তিনি ওই খামারে গেলে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।
তাহিরপুর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আরিফ রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।