নিউজ ডেস্ক : কমিটি থেকে বিতর্কিতদের বাদ দিতে ২১ দিন ধরে টানা অবস্থান চালিয়েও কোনো সাড়া না পাওয়ার পর নতুন কর্মসূচি দিতে যাচ্ছে ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধরা।
বিক্ষুব্ধ অংশের নেতারা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে স্মারকলিপি, আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, কালো ব্যাজ ধারণের মতো কর্মসূচি ভাবছেন তারা।
নিজেদের মধ্যে আলোচনার পর কর্মসূচি ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনের দিন জানাবেন বলে জানিয়েছেন বিক্ষুব্ধদের অন্যতম নেতা ছাত্রলীগের সাবেক উপ দপ্তর সম্পাদক নকিবুল ইসলাম সুমন।
তিনি শনিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান কর্মসূচি থেকে গনমাধ্যমে একথা জানান।
গত ২৬ মে থেকে রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান নিয়ে আছেন ছাত্রলীগের এই নেতারা; রোজার ঈদের দিনও সেখানেই কাটান তারা। তাদের খবর ছাত্রলীগ কিংবা আওয়ামী লীগের কোনো নেতা না নেওয়ায় তারা খেদও প্রকাশ করেন।
সুমন বলেন, “বিতর্কিতদের বাদ দেওয়ার দাবিতে আমরা টানা ২১ দিন ধরে রাজু ভাস্কর্যের সামনে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছি। অত্যন্ত যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে না নিয়ে বরং কালক্ষেপণ করা হচ্ছে।
“আমরা এখন এখানে অবস্থানের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেওয়া, আওয়ামী লীগের চারজন কেন্দ্রীয় নেতার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ, কালো ব্যাজ ধারণ এবং ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে গিয়ে শপথ নেওয়ার মতো প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করব।”
সম্মেলনের এক বছর পর গত ১৩ মে ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হলে তা পুনর্গঠনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন এতে স্থান না পাওয়া কিংবা প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া নেতারা।
তারা অভিযোগ করেন, বিবাহিত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, চাকরিজীবী ও বিভিন্ন মামলার আসামিসহ নানা অভিযোগবিদ্ধ অনেককে পদ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বঞ্চিত করা হয়েছে অনেক ত্যাগী নেতাকে।
এনিয়ে বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে মারামারিও বাঁধে কমিটিতে পদ পাওয়া নেতাদের। এরপর কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার এক পর্যায়ে আশ্বাসে পিছু হটে বিক্ষুব্ধরা।
বিক্ষুব্ধদের আন্দোলনের মুখে গত ২৯ মে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিতর্কিত কয়েকজনকে বাদ দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির ১৯টি পদ শূন্য ঘোষণা করেন।
কিন্তু এরপর পূর্ণাঙ্গ কমিটিকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা হলে ২৬ মে ফের অবস্থানে ফেরে বিক্ষুব্ধরা; তাদের দাবি, আগে বিতর্কিত সবাইকে সরাতে হবে, তারপরই যেন কর্মসূচি নেওয়া হয়।
বিক্ষুব্ধদের অন্যতম নেতা সাবেক কর্মসূচি ও পরিকল্পনা সম্পাদক রাকিব হোসেন বলেন, “খুব দ্রুত বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে যারা দলে দীর্ঘদিন ধরে শ্রম দিয়ে আসছে, তাদের পদ দিতে হবে।”
সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, “বর্তমান নেতারা বলছেন, আমরা নাকি ছাত্রলীগের আগের কমিটির সভাপতি আর সাধারণ সম্পাদকের লোক, তাদের ইন্ধনে নাকি আমরা আন্দোলন করছি।
“আসলে কিন্তু বিষয়টা একদমই তা না। আমরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের সাথে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি। তার বাইরে কিছুই না।”
সাবেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক সম্পাদক আনন্দ সাহা পার্থ বলেন, “যারা আমরা এখানে আন্দোলন করছি তারা কেউই হঠাৎ করে রাজনীতিতে আসিনি। আমাদের আগেও কমিটিতে পদ ছিল। তারপরও আমাদের সততা আর যোগ্যতার কোনো ধরনের মূল্যায়ন করা হয়নি।”
এবার কমিটিতে বিএনপি-জামায়াত ঘরানার অনেককে পদ দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
বিক্ষুব্ধদের অভিযোগের প্রতিক্রিয়া জানতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।